করোনাকালে ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে ডিএনসিসির আগাম প্রস্তুতি

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ জুন ২০২০, ১৯:৩৯ | প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২০, ১৯:০৯

গত মৌসুমের বিতর্ক সমালোচনা ও সামাল দিতে না পারা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার ডেঙ্গু নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন(ডিএনসিসি)। চলতি করোনা মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুরও বিস্তার ঘটলে পরিস্থিতির অবনতির আশংকা থেকেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে রাজধানীর উত্তরাংশের এই নগর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, তাদের আওতাভূক্ত এলাকার বাড়ি, অফিসসহ সকল ভবনে গিয়ে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংসের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএনসিসির স্বাস্থ্যবিভাগ। পাশাপাশি নাগরিকদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবস্তরের নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ডিএনসিসি।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর সুউচ্চ ও নির্মানাধীন ভবনে এডিস মশার প্রজননস্থল বেশি পাওয়া যায়। এসব ভবনের মালিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু দমন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান মামুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা যে ৫টা ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান করলাম, তাতে দেখা গেল অধিকাংশ নির্মাণাধীন ভবন বা উঁচু বিল্ডিংগুলোতে এডিসের প্রজননস্থল পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে কিন্তু দায়িত্ব নিতে হবে।’

‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শেষ যে পরিসংখ্যান সেখানে দেখা গেছে বাসাবাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে মাত্র ১০ ভাগ, উচু ভবনে পাওয়া গেছে ৫২ ভাগ আর নির্মাণাধীন ভবনে পাওয়া গেছে ২৫ ভাগ। এক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে আমাদের দায়িত্ববোধে এখানে একটু ঘাটতি আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জরিমানা করলাম, তাদের কাজ করে দিলাম বা কাজ করতে তাদেরকে বারবার তাগাদা দিলাম তাতে হবে না। তারা যদি নিজে থেকে না করে তাহলে এটি অনেক কঠিন একটি কাজ হয়ে যাবে।’

তিনি জানান, মৌসুমে তিন ধাপে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান বা চিরুনী অভিযান চলানো হবে। শনিবার থেকে ৫৪টি ওয়ার্ড এ ১০ দিনের জন্য চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। জুন মাসে দশ দিন চিরুনি অভিযান চলবে। এরপর ২০ দিন বিরতি দিয়ে জুলাই মাসে আবার ১০ দিন অভিযান হবে। তারপর ২০ দিন বিরতি দিয়ে আগস্ট মাসে ১০ দিন অভিযান চালানো হবে।

তিনি বলেন, ‘আমারা চাইছি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা মাঠে থাকবে। চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালত সেটিও থাকবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যারা উদ্যোগ নেয় না তাদেরকে দায়িত্ববোধের আওতায় আনার জন্য সামগ্রিকভাবে চেষ্টা করে যাবো।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার হিসেবে ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়েছে। আর গত বছরের শুধু আগস্টেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। আর ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৯৩৩ জন মানুষ। এদের বেশির ভাগই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৬৬ জনের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে ১৪৮ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে বলে নিশ্চিত হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডেঙ্গু প্রকোপ আকার ধারণের পাশাপাশি নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল ডেঙ্গু পরীক্ষায়। ইচ্ছে মতো ফি আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলো। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

এদিকে এবছর ডেঙ্গু পরীক্ষার মধ্যে এনএসওয়ান (NS1), আইজিজি (IgG) ও আইজিএম (IgM) ফ্রি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ১১ মে থেকে ডিএনসিসি অধিভুক্ত এলাকার ৫টি মাতৃসদন ও ২২টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত নাগরিকরা বিনামূল্যে ডেঙ্গুর এই তিনটি পরিক্ষা করাতে পারছেন। এসব পরীক্ষার ফলাফলও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে। পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট সরবরাহ করেছে ডিএনসিসি।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :