মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

ছুটি না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন অন্তঃসত্ত্বা সেবিকারা

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ২১:৪৭ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২০, ২২:০২

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

সংক্রামক ব্যাধি কোভিড-১৯ দুর্যোগের সময় অফিস-আদালতে গর্ভবতী নারী কর্মীদের উপস্থিতি শিথিল করার সরকারি নির্দেশনা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালে পরিপালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা সেবিকা। তারা বলেছেন, ছুটির জন্য আবেদন করলেও তা এখনো মঞ্জুর হয়নি। শঙ্কা ও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট হাসপাতালের নয়জন অন্তঃসত্ত্বা সেবিকা গত ২ জুন থেকে ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু সেটি এখনো পরিচালকের কাছে জমা দেননি প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জুন এই হাসপাতালের রেহেনা বানু নামের একজন সেবিকা মারা গেছেন। এ ছাড়া ইলিজাবেথ, আলফা বাড়ৈ, ফারহানা নামের আরও তিনজন সেবিকা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

একজন সেবিকা জানান, গর্ভে অনাগত সন্তান নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছেন অন্তঃসত্ত্বা সেবিকারা। ১ জুন প্রতিষ্ঠানটির নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর জাহানারা বেগমের কাছে ছুটির আবেদন করেছেন তারা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেই আবেদন এখনো নিজের কাছেই রেখেছেন।

কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে ৬৬ দিন পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালতসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার চালু হয়। তবে ওই সাধারণ ছুটিতে হাসপাতালের মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল।

করোনা পরিস্থিতি অপরিবর্তনীয় থাকার মধ্যেই সরকার ছুটি আর না বাড়িয়ে সীমিত পরিসরে খোলার প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অফিসে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃপক্ষ জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অফিসে উপস্থিতির শিথিলতার নির্দেশনা বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিপালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমনকি অনেক হাসপাতালেও এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের অন্তঃসত্ত্বা সেবিকারা ইতিমধ্যে ছুটিতে গেছেন বলে কয়েকজন নিশ্চিত করেছেন।

তবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট হাসপাতালের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর জাহানারা বেগম দাবি করেন তাদের আশপাশের হাসপাতালগুলোতে এখনো এমন কোনো ব্যবস্থা (সন্তানসম্ভবা নারীর কর্মস্থলে না আসা) নেওয়া হয়নি। তাই তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, ‘তবে আমরা তাদের ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা নেব। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আবেদনগুলো পরিচালকের কাছে জমা দেব।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমত আরা পারভীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা সেবিকাদের ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন রয়েছে। ছুটি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।’

ওই সেবিকাদের ছুটির বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবছে বলে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. তরিকুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘নার্সিং বিভাগের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে রোস্টার অনুযায়ী তাদের ছুটির ব্যবস্থা করা হবে।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জাতীয় মানসিক ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালে যেহেতু করোনা রোগী নেই, তাই তাদের শতভাগ কাজে রাখার দরকার আছে বলে মনে করি না। আবার শতভাগ ছুটি দিতে গেলে কাজের ব্যাঘাত হতে পারে। সেখানকার চিকিৎসকেরা রোস্টার করে বিষয়টি দেখবেন।’

(ঢাকাটাইমস/৬জুন/মোআ)