শিল্পী যদি হতে চাও মৌলিক কাজ করো আগে

তামিম ইসমাইল
| আপডেট : ০৭ জুন ২০২০, ১১:২১ | প্রকাশিত : ০৭ জুন ২০২০, ১১:০২

'অহংকার পতনের মূল' এই মহান বাণীর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই বাণীটি বিশ্লেষণ করে পরিসমাপ্তি ঘটানো খুবই মুশকিল। তবে আমি এই বাণী নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করবো না, করতে পারবোও না। এই মহান বাণীর আঙ্গিকে সঙ্গীত ও আবৃত্তি শিল্পীদের কর্ম নিয়ে সামান্য বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।

এদেশে অনেক আবৃত্তিকার সহ নানান শ্রেণির সাংস্কৃতিক শিল্পী রয়েছেন। এরা প্রবীণ কবি ও গীতিকারের প্রচলিত কিছু গান কবিতা করে নিজে বাহবা নেয়। গানের দিক থেকে যদি বলতে যাই, উদাহরণ সরূপ নোবেল নামের ছেলেটি অচিরেই চলে আসে। এর কোনো মৌলিক গান না থাকা সত্ত্বেও সে আজ পরিচিত।

কবিতার দিক থেকে কি বলবো! জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পীদের কন্ঠে প্রবীণ সাহিত্যিকদের কবিতা ব্যতীত উদীয়মান কোনো কবির কবিতা আবৃত্তি করতে খুব একটা দেখা যায়না। আমার প্রশ্ন রবীন্দ্রনাথের 'সোনার তরী', নজরুলের 'বিদ্রোহ', জীবনানন্দ দাসের 'বনলতা সেন' তো এভাবেই পরিচিত। এদের এই কবিতাগুলো যে কেউ আবৃত্তি করলে শ্রোতারা কম বেশি শুনবে। কিন্তু এদেশে যে অসংখ্য নবীন মেধাবী দুর্দান্ত লেখার কবি সাহিত্যিক রয়েছে এদের কবিতা কেউ আবৃত্তি করে না কেন?

ও, এদের কবিতা আবৃত্তি করলেতো আবার নতুন করে সুর, তাল ঠিক করে শ্রম দিতে হবে। অনেক আবৃত্তি শিল্পীর আবার সুর, তালের ধারণাও নেই। শুধুমাত্র প্রশংসা ও পরিচিতি পাওয়ার লোভে বিখ্যাত কবিতার সাথে সুর ধরে গলা মিলিয়ে যায়। আর নিজেকে খ্যাতিমান শিল্পী ভাবা শুরু করে।

অথচ নবীনদের লেখা ভালো হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের কাছে কদর নেই। কারণ নবীনদের কবিতা ধরতে গেলে মৌলিক গুণ থাকা প্রয়োজন। এরা প্রচলিততে অভ্যস্ত, এতেই প্রশংসা পায়, মৌলিক দিয়ে কি করবে। করোনা-কালীন লক ডাউনে জনপ্রিয় বেশ কিছু আবৃত্তিকারের লাইভ প্রোগ্রাম দেখে বুঝা গেলো। ঘুরেফিরে রবীন্দ্র, নজরুলের কবিতাই। কোথাও নবীনদের আনাগোনা নেই।

নবীনদের অবহেলার পর এবার আসি অহংকারে। এই ধরুন সঙ্গীত ও আবৃত্তি শিল্পীরা যে গান কবিতা করছে। এতে কবি ও গীতিকারের খুব একটা ফায়দা হচ্ছে না। লাভবান হচ্ছেন শিল্পীরা। একটু আলাদা ভাবে যদি ভেঙ্গে বলি । একজন কবি ও গীতিকার মূলত চাষী। কৃষকদের মতই চাষী। কৃষক যেমন শস্য চাষ করে।

কবিও তেমন শব্দ চাষ করে। পার্থক্য শুধু শব্দ ও শস্যের। তবে কৃষক যে শস্য ফলান সেটা সে নিজে ভোগ করতে পারে। কিন্তু কবি যে শব্দ ফলান তাঁ সে নিজে ভোগ করতে পারেনা। কষ্ট করে মেধা খাটিয়ে লিখেন কবি অথচ সম্মান ও স্বনাম অর্জন করে শিল্পী। 'অনন্ত মেহেদী পাতা দেখেছো নিশ্চয়?' এই কবিতাটি কে না শুনছে! যদি প্রশ্ন করা হয়, 'এই কবিতার কবির নাম কি?'

অনেকেই বলতে পারবে না। বড়জোর কেউ যদি গোসসা করে হয়তো বই খাতা গুগল ঘেটে বলতে পারবে। অথচ এই কবিতার জনক কবি আবুল হোসেন খোকন যতটা সম্মান না পেয়েছে তাঁর চেয়ে বেশি সম্মান অর্জন করেছে এই কবিতার আবৃত্তি শিল্পীরা।

একজন লেখক ক্লান্তহীন পরিশ্রম করে লিখে যান। অথচ তাঁর লেখা দিয়ে ক্রেডিট নেয় শিল্পীরা। এ যেন পরের ধনে পোদ্দারি। শুধু পোদ্দারিতেই শেষ নয়। ধীরে ধীরে অহংকারের পালাও ভারি হতে থাকে। একসময় নামধারী এই অহংকারী শিল্পীদের পতন হওয়ার গল্পও রয়েছে।

সর্বপরি বলা যায়, এদেশে নবীন সাহিত্যিকদের যদি এভাবে ডুবিয়ে রাখা হয়। তাঁরা এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করে কখনই জ্বলে উঠতে পারবে না। একই সাথে শুধু কন্ঠ শিল্পীদের নয়, এদের চেয়ে কবি ও গীতিকারকে অতুলনীয় মর্যাদা দেওয়া হোক।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

ঢাকাটাইমস/৭জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :