প্রিয় নঈম নিজাম ভাই, অফুরান প্রাণশক্তি আপনার, আবার দেখা হবে শিগগির...

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২০, ১৯:১৫ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২০, ১৯:২৭

আরিফুর রহমান দোলন

অগ্রজ সাংবাদিক, প্রিয় বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ভাইয়ের সাথে আমার ভীষণ মিল। তিনি কাজ পাগল মানুষ। আমিও। নঈম ভাই একসাথে অনেক ধরনের কাজের চাপ নিতে পারেন। আমিও নানামুখী কাজের চাপ নিতে পিছ পা হই না। তাঁকে দেখেছি কখনও হাল ছাড়েন না, আশায় বুক বাঁধেন সব সময়। আমিও নৈরাশ্যবাদী নই। চটজলদি সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নঈম ভাইয়ের জুড়ি নেই। ভালো হোক মন্দ হোক আমিও দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে, নিতে চেষ্টা করি। যে কোনো নতুন উদ্যোগের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে নঈম নিজাম সব সময় প্রস্তুত থাকেন। নতুন উদোগের চ্যালেঞ্জ নিতে আমারও সমান আগ্রহ কাজ করে। নঈম নিজাম অসম্ভব বন্ধুবৎসল, পরোপকারী এবং কর্মীবান্ধব। কাছ থেকে আমাকে যারা দেখেন এবং চেনেন তারাও আমার ব্যাপারে এক একই কথা বলেন। সব মিলিয়ে অগ্রজ সাংবাদিক নঈম নিজামের সঙ্গে আমার পারস্পরিক সম্পর্ক, বোঝাপড়া এতটাই যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ আমাদের সব সময়ই আছে।

হঠাৎ শুনি প্রিয় নঈম নিজাম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। রোযার মধ্যে, কোনো একদিন মুঠোফোনে কথা হচ্ছিল বর্ষীয়ান রাজনীতিক, পরম শ্রদ্ধেয় তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। তিনি খবরটি প্রথম দেন। জানোতো, নঈম নিজাম করোনায় আক্রান্ত? বলেন কী! বিস্মিত হয়ে আরও কিছু বিষয় জানতে চাই। মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে। কর্মচঞ্চল একজন মানুষ এভাবে ঘরবন্দি হয়ে থাকাকে কিভাবে নেবেন, নিচ্ছেন এটা ভেবেই মন খারাপ হয়। ফোন করব নাকি খুদে বার্তা? ভাবতে থাকি। অবশেষে খুদে বার্তায় সাহস সঞ্চার করে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানাই। সাথে সাথে প্রতিউত্তর পাই। ‘আমি ঘাবড়ে যাইনি। ভয় পাইনি। হতাশও হইনি। দোয়া করবেন।’

পরেরদিন মুঠোফোনে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। এরপর একাধিকবার কথা হয়েছে, হচ্ছে। সেই আগের মতোই অবিচল। দৃপ্ত কণ্ঠস্বর। আশা জাগানিয়া কথাবার্তা। বলেন, ‘ঘাবড়াবেন না। একটু সময় লাগছে। নিশ্চয়ই পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠব।’

হ্যাঁ, আমাদেরও সেই বিশ্বাস। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন প্রিয় নঈম নিজাম। অফুরান প্রাণশক্তি যার, তিনি দ্রুতই ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে। তুমুল আড্ডা হবে। হবে পেশাগত আলোচনা। সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর হাঁড়ির খবর নিয়ে তথ্য বিনিময় হবে অবিরাম। সেই সাথে ব্যক্তিগত কত আলাপচারিতা তো আছেই।

যতক্ষণ পর্যন্ত পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি কী করে? আশাকরি সকলের দোয়ায় খুব দ্রুতই সুখবরটি আমরা দিতে পারব, ‘নঈম নিজাম করোনামুক্ত’।

৭ জুন রোববার বাংলাদেশ প্রতিদিনে তাঁর একটি লেখা বেরিয়েছে। ‘যেভাবে লড়ছি করোনা ভাইরাসের সঙ্গে’ শিরোনামে সম্পাদক নঈম নিজাম লিখেছেন কিভাবে করোনাকাল আর নিজে আক্রান্ত হওয়ার এই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। কী অফুরান প্রাণশক্তি! নিয়ম করে প্রতি রোববার পত্রিকার পাতায় স্বনামে কলাম লেখেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সেই দিনক্ষণটি পর্যন্ত ঠিক রেখেছেন। দায়িত্ব, কর্তব্যনিষ্ঠার এই যে অপূর্ব এক উদাহরণ এটা কি খুব সচরাচর মেলে! ভয়ে কুঁকড়ে যাননি। মন খারাপ করে নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি। কীভাবে সাহস আর শক্তি দিয়ে দিনগুলো পার করেছেন, করছেন পত্রিকার পাতায় লিখেছেন বিস্তারিত। তার এই সাহস আর মনোবলই আমাদের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা।

খুব কাছ থেকে অগ্রজ সাংবাদিক নঈম নিজামকে দেখেছি। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি যখন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আমি তখন উপ-সম্পাদকের দায়িত্বে। শুধুমাত্র সহকর্মী নয়, ভাই, বন্ধুর মতো মিলেমিশে কাজ করেছি। ঝুঁকি নেওয়া, পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, যখনকার কাজ তখনই তা করার ক্ষেত্রে সত্যিই নঈম নিজামের জুড়ি মেলা ভার। আমাদের দুজনের মেলবন্ধন বাংলাদেশ প্রতিদিন-কে প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো ভিত্তির উপর দাঁড় করায়, এটি কজন জানেন জানি না। তবে এক সময় সক্রিয় রাজনীতির প্রিয় নঈম নিজাম ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে আরও পাকাপোক্তভাবে থিতু হন মিডিয়ায়। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। একইসঙ্গে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪ ও রেডিও ক্যাপিটাল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। ঘটনাচক্রে রাজনীতিতে অধিক সক্রিয় হয়ে আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনে নেই। উদ্যোক্তা হিসেবে আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।

কিন্তু নিরন্তর যোগাযোগ প্রিয় নঈম নিজামের সঙ্গে। দূরে ও কাছে থেকে তার সাফল্য দেখি। গণমাধ্যমের জন্য যখন খরার সময় তখন কিভাবে লাভজনক হিসাবে একটি পত্রিকা ধরে রেখেছেন তা নিয়ে নানা আলোচনা হয় প্রায়শই। তাঁর নিরন্তর ছুটে চলা, পরিশ্রম ও নেতৃত্ব দান আমাদের বিমোহিত করে। বিশাল হৃদয়ের দুইজন ব্যক্তিত্বের আকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতার কথাও এ প্রসঙ্গে বলতে হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান শাহ্ আলম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভির তাকে যেভাবে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আসলেই তা অনন্য। সবমিলিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ মিডিয়ায় বিনিয়োগকারীদের ‘ব্র্যান্ড’ আর নঈম নিজাম হয়ে উঠেছেন ‘ব্র্যান্ড’ এডিটর ও সিইও।

মিডিয়ায় তাঁকে খুব বেশি প্রয়োজন। অফুরান প্রাণশক্তির নঈম নিজাম করোনামুক্ত হয়ে দ্রুতই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। শিগগির দেখা হবে আমাদের। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে আমাদের আলোচনা, আড্ডা। দিন গুনছি, অপেক্ষার অবসান হবে এই আশায় রয়েছি।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং সাপ্তাহিক এই সময়