অবৈধ সম্পদ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি

কারাগারে তেমন একটা কথা বলেন না ডিআইজি মিজান

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২০, ১৩:৫৫

প্রথম শ্রেণীর বন্দির মর্যাদায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন পুলিশের বরখাস্ত ও বহুল আলোচিত-সমালোচিত ডিআইজি মিজানুর রহমান। অবৈধ সম্পদের মামলায় সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা এক বছরের বেশি সময় ধরে এই কারাগারে আছেন। নানা দিকে হাত বাড়িয়ে চলা সাবেক পুলিশ কর্তার বন্দিজীবন কেমন কাটছে?

কারাসূত্র জানায়, নানা অনৈতিক আর অবৈধ কাজের দায়ে অভিযুক্ত ডিআইজি মিজানের কারাগারে দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ দিয়ে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল কবিরের কাছে ডিআইজি মিজানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’

তবে কারাসূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন ডিআইজি মিজান। ফজরের নামাজ আদায় করে পত্রিকা নিয়ে বসেন। দিনের বেশির ভাগ সময় কারাগারের নিজের ঘরে সময় কাটান তিনি।’

ডিআইজি মিজান সেখানে বন্দি ও কর্তব্যরত কারারক্ষীদের সঙ্গে খুব কম কথা বলেন বলে জানান সূত্র। আর এ জন্য কারারক্ষীসহ অন্যরাও তার সঙ্গে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে চান না। নিজের মনে পায়চারি করেন মিজান। সময়ে সময়ে বিভিন্ন বই ও পেপার পড়েন। এ ছাড়া নিয়মিত নামাজ-কালাম করেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গত বছরের ১ জুলাই অবৈধ সম্পদের মামলায় ডিআইজি মিজানার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। এরপর থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি পুলিশের এক সময়ের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা।

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ঘুষ লেনদের বিষয়ে দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ঘুষ লেনদের মামলার বিচার শুরু হয়েছে। আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি দুদক।

ঘুষ লেনদেনের মামলায় ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। গত ৪ এপ্রিল এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকার কারণে এই শুনানি করা যায়নি।

আদালত সূত্র জানায়, ঘুষ লেনদেন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন গত ৪ এপ্রিল।

ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি ডিআইজি মিজান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়, খন্দকার এনামুল বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ডিআইজি মিজানকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তার অবৈধভাবে অর্জিত ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।

এ ব্যাপারে দুদকের তদন্তকারী শেখ মুহাম্মদ ফানাফিল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তাদের ঘুষ লেনদের মামলার তদন্ত আমি করেছিলাম। ওই মামলায় তাদের দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছি। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। আর মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ। আমার জানামতে এই মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।’

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় মিজানের সঙ্গে আরও আসামি হলেন তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা ও ভাই মাহবুবুর রহমান। পলাতক এই দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন গত ৩ মার্চের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ ছিল আদালতের। তারা এখনো গ্রেপ্তার হননি।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদের সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত বছরের ১ জুলাই হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গেলে ডিআইজি মিজানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। এ সময় মিজানকে তাৎক্ষণিক হাইকোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেন আদালত। গ্রেফতারের পর তাকে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। পরদিন ডিআইজি মিজানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।

মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজের স্ত্রী থাকার পরও এক নারীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিয়ে এবং তা গোপন করতে তাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজির বিরুদ্ধে।

এই কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছিল।

নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পুরনো। নানা জায়গা থেকে তথ্য পাওয়ার পর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তদন্তে নামে দুদক। দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিজানকে। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলে। এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

আর এই সময় ডিআইজি নিজেই তার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করেন। বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এই অভিযোগ ওঠার পর পর দুদক তার পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করে।

দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। গত বছরের ২৪ জুন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাতে সই করেন। পরদিন তাকে বরখাস্ত করে জারি হয় প্রজ্ঞাপন।

(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :