পুলিশের নির্যাতনে কলেজছাত্রের দুটি কিডনিই অকেজো!

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২০, ২০:১৩

যশোরে পুলিশের শারীরিক নির্যাতনে ইমরান হোসেন নামে এক কলেজছাত্রের দুটি কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এদিকে পুলিশ সুপার দাবি করেছেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের কেউ এ নির্যাতনে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্যাতিত ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে। ইমরান জানান, তিনি যশোর সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে একই এলাকার আরেকজন ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা তাদের গতিরোধ করে। এরপর সঙ্গে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দিলে পুলিশ ধাওয়া করে তাকে বেধড়ক মারপিট করে।

পরে একটি ফার্মেসিতে তার জ্ঞান ফেরে। এ সময় পুলিশ তার পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে। এরপর ইমরানের বাবাকে ফোন দিয়ে তাকে ছাড়তে ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে ছয় হাজার টাকা নিয়ে তারা ইমরানকে ছেড়ে দেয়। এ সময় পুলিশ ইমরানকে মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে রিমান্ডে নিয়ে ফের মারপিটের হুমকি দেয়।

ইমরান বলেন, ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। তিন দিন পেটের ব্যাথায় মরে যেতে মনে হয়েছে। সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে জানাই। এরপর আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেটের মধ্যে সব ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমারে কোনো ওষুধ শান্তি দিতে পারছে না। আমি মনে হয় বাঁচবো না।

ইমরানের মা বুলবুল বেগম বলেন, এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করতে পারে যে দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেটারে শেষ করে ফেলেছে। ওর চিকিৎসা কিভাবে করাবো। বাঁচবে কিনা জানি না। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই।

ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেন, আমার ছেলেটা লেখাপাড়া করে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে নেই সে। অথচ তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হলো। ডাক্তার বলেছে তার অবস্থা খুব খারাপ। আমি জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার ভিক্ষা চাই।

ইমরানের চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্ট্রার ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, ইমরানের দুটি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিয়েটিনিন ১ দশমিক ৪ থাকার কথা। কিন্তু ইমরানের তা ছিল ৮ দশমিক ৮। আজ এটাও আরো বেড়েছে। দ্রুত তার ডায়ালোসিস শুরু করতে হবে এবং আজই সেটা করা হবে। তবে বলা যাচ্ছে না যে, সে রিকভারি করবে। তার অবস্থায় খুবই শংকটাপন্ন।

এ বিষয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে কোতোয়ালী থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান চার কন্সটেবল ওই কলেজছাত্রকে আটক করেছিল। কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার বাবাকে ডেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে ছাড়তে কোনো টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন দাবি করেছেন, বিষয়টি জানার পর তিনি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করিয়েছেন। তাছাড়া ওই ছেলে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের কেউ এ নির্যাতনে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :