​কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য জোরদারের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২০, ১৫:২০

বয়োঃসন্ধিকালে আকস্মিক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কিশোর-কিশোরীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ সময় তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নানা তথ্যের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে বড় একটি প্রজননক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী) রয়েছে। যারা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৯ ভাগের বেশি। এই করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে তারা ঘরে আছে। আর ঘরে বসেই যেন তারা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে ও সহজে তথ্য পায় তার ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যম হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। তাই একটা অনলাইন প্লাটফর্ম করার তাগিদ তাদের। যেখানে সঠিক তথ্য আপডেট থাকবে। কেউ প্রশ্ন করলে তার সঠিক জবাব পাবে।

বুধবার ‘সিরাক-বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘করোনা পরিস্থিতিতে তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরনের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এই মতামত উঠে আসে। দেশের সকল বিভাগের প্রায় ৫০ জন তরুণ প্রতিনিধি এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। স্বাগত বক্তব্যে এস ​এম সৈকত বলেন, কোভিড মহামারী একদিকে যেমন সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করছে একইভাবে তরুণ ও কিশোর-কিশোরীদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি থেকে বাঁধাগ্রস্থ করছে । এ বিষয়ে তিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে ICPD নামক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন যেখানে এই জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যকে অধিকার এবং উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছেl

প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে তরুণদের ভাবনা বিষয়ে একটি উপস্থাপনায় সিরাক বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত শারমিন রেশমা তুলে ধরেন, অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীরা তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভয় ও লজ্জা পায়।বর্তমানে বিশ্বে ২১৪ মিলিয়ন কিশোর কিশোরী এবং নারী পরিবার পরিকল্পনা জন্ম নিরোধক এর সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। Needs Assessment working group Bangladesh এর একটি জরিপের বিষয় তুলে ধরে প্রেজেন্টেশনে আরো বলেন, ২৬ শতাংশ বিবাহিত কিশোর কিশোরীরা পরিবার পরিকল্পনা সেবা পাচ্ছে না।

আলোচনা অনুষ্ঠানে কেনিয়ার রাজধানীতে ‘দ্য নাইরোবি সামিট অন আইসিপিডি ২৫: অ্যাকসেলারেটিং দ্য প্রমিজ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্ব জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর যে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ সে বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন স্যায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাইনুল ইসলাম । তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রতিশ্রুতির আলোকে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয় তুলে ধরা হয় এই সম্মেলনে। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনার জন্য আলাদা বাজেট করতে হবে। তথ্য দেয়ার জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

এছাড়া কোভিড-১৯ এর এই মহামারীর সময়ে তরুণরা কিভাবে পরিবার পরিকল্পনা তথ্য এবং সেবা পেতে পারে এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান আরো ত্বরান্নিত করার লক্ষ্যে কৈশোর-বান্ধব সেবা কেন্দ্রসমূহের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এ বিষয় কথা বলেন বক্তারা। একইসাথে জাতীয় পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক একটি টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাব করেন আলোচকরাl

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে ধারনা দিতে সারা দেশে ৬০০ টিরও বেশি সেন্টার চালু আছে। সুখী পরিবার হটলাইন চালু আছে। তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যু হার রোধ করার জন্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করছে সরকার। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলোকে তরুণদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া আমাদের কর্তব্য। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে একটি কল সেন্টার (১৬৭৬৭) রয়েছে এটাকে আরও প্রচারনার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, এই নম্বরে কল দিলেই পরিবার পরিকল্পনা, মা-শিশু স্বাস্থ্য, কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে সার্বক্ষণিক পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে সচেতনতা তৈরীতে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। তারা এলাকাভিত্তিক সচেতনতা তৈরীতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক-সিসিএসডিপি ডা. মোহাম্মাদ মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিডের মতন মহামারিতে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রোধ করতে তরুণদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলো আরো বেশি জনপ্ৰিয় করে তুলতে হবেl

অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ) ও লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, সরকার পরিবার পরিকল্পনা খাতে যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ রাখে, যা সময়মতন বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি কৈশোর বান্ধব সেবাকেন্দ্র গুলোকে আরো সচল করতে peer গ্রুপ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং অপারেশনাল প্ল্যানে সেবার পরিধি বৃদ্ধি করে আরো ১৫-২৫ বছরের জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি l

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউএনএফপিএ এর বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ মো. হাসান, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডা. আবু সাদাত মো. সায়েম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এমসিএইচ) ডা. জয়নাল হক, মেরি স্টোপসের তনুশ্রী মানজি, উইমেন ডেলিভার ইয়ং লিডার আশরাফুর রহমান, এমএসএইচ এর ডা. জেবুন রহমান, অপশনস কনসালটেন্সির কান্ট্রি লিড ডা. নাদিরা সুলতানা, আইপিপিএফ এর ডা. সানজিদা হাসান, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের ডা. ফাতেমা শবনম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মতিউর রহমান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১১জুন/জেআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :