চির অন্ধকার এক পৃথিবীর অধরা রহস্য

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১২ জুন ২০২০, ১২:০৭ | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০২০, ১০:২৫

চির অন্ধকার এক পৃথিবী। ওখানকার প্রাণ-প্রকৃতি আমাদের চেনা পৃথিবীর মতো নয়। এ যেন পৃথিবীর মধ্যে আরও একটি পৃথিবী। বাইরের কোনো নিয়ম সেখানে প্রযোজ্য নয়। সেখানকার বাসিন্দারা সাড়ে ৫০ লাখ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ছিল বাইরের জগৎ থেকে। গন্ধকপূর্ণ হ্রদ পেরোনো যায়নি বলে এখনো এর রহস্য অধরা।

এ রকমই এক বিচিত্র ও বিস্ময়ের জগত রোমানিয়ার মোভাইল গুহা। প্রচলিত সব নিয়মের বিপরীতে হেঁটে চির অন্ধকার এই গুহায় জীবন-প্রাণের স্পন্দন হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে। জীববিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গুহায় অনেক রহস্য বা বৈচিত্র্য অপেক্ষা করে আছে ভবিষ্যতের জন্য।

১৯৮৬ সালে রোমানিয়ার কনস্টান্টা কাউন্টির ম্যাঙ্গালিয়া অঞ্চলে গুহাটি আবিষ্কৃত হয়। রোমানিয়া-বুলগেরিয়া সীমান্তে কৃষ্ণসাগরের উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এই প্রাকৃতিক বিস্ময় আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান লাস্কু।

এই গুহামুখ বন্ধ রাখে রোমানিয়া সরকার। এখন পর্যন্ত একশোরও কম মানুষের পা এই গুহায় পড়েছে। কোমরে দড়ি বেঁধে সঙ্কীর্ণ গুহাপথে নামতে হয় অন্তত ২০ মিটার। চির অন্ধকার এই গুহার সর্পিল পথগুলো গিয়ে মিশেছে এর কেন্দ্রে একটি হ্রদে। এর গন্ধকপূর্ণ পানির গন্ধ পচা ডিম বা জ্বলন্ত রবারের মতো।

এই হ্রদ সাঁতরে এগোতে হবে সর্পিল ও সঙ্কীর্ণ খাঁড়িপথে। এই কাজটি হয়নি এখনো। ফলে বিপদসঙ্কুল এই গুহার রহস্য আবিষ্কার অধরা থেকে গেছে।

অদ্ভুত বাস্তুতন্ত্রের সাক্ষী এই বিষাক্ত গুহা। এখানে প্রচুর পরিমাণে হাইজ্রোজেন সালফাইড এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড আছে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে অক্সিজেন কম। এই গুহার বিষাক্ত পরিবেশে ফোটোসিন্থেসিসের (সালোকসংশ্লেষ) বদলে জীবন এগিয়েছে কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায়।

ফোটোসিন্থেসিসের বিপরীত প্রক্রিয়া হল কেমোসিন্থেসিস। ফোটোসিন্থেসিসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশে মুক্ত হয় অক্সিজেন। আর কেমোসিন্থেসিসে হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং সামান্য অক্সিজেন অথবা নাইট্রেটের বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে সালফার উৎপন্ন হয়।

প্রকৃতির নিয়মে এই গুহায় বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বাকি অং‌শের তুলনায় আলাদা। সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় অনুপাতের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। কিন্তু মোভাইল গুহায় অক্সিজেনের উপস্থিতি মাত্র ৭-১০ শতাংশ।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যেখানে ০.০৪ শতাংশ, সেখানে মোভাইল গুহায় এই গ্যাস আছে ২ থেকে ৩.৫ শতাংশ।

এই গুহায় মিথেনের পরিমাণ ১ থেকে ২ শতাংশ। বাতাস ও পানিতে প্রচুর পরিমাণে হাইজ্রোজেন সালফাইড ও অ্যামোনিয়া আছে।

রহস্যজনক এই গুহায় ৪৮টি প্রজাতির প্রাণীকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে ৩৩টির কোনো অস্তিত্ব নেই বাইরের পৃথিবীতে।

এই গুহায় খাদ্যশৃঙ্খলও নির্ভর করছে কেমোসিন্থেসিসের ওপর। মিথেন ও সালফারে (গন্ধক) জারিত হয় ব্যাকটেরিয়া। বিক্রিয়ার ফলে বাতাসে নিউট্রিয়েন্ট বা পরিপোষকের উপস্থিতি বাড়ে। তার দ্বারা ছত্রাক ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া পুষ্ট হয়।

বিজ্ঞানীরা জানান, মোভাইল গুহার জীববৈচিত্র্য সাড়ে ৫০ লাখ বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় সাড়ে ৫০ লাখ বছর বছরের আগে সেখানে একসঙ্গে সব প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে।

গবেষকদের ধারণা, এই গুহায় প্রথমে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর কোনোভাবে গুহায় প্রাণীরা বাইরে থেকে ঢুকে পড়ে। তার পর থেকে এখানেও চলেছে তাদের জীবনচক্র। প্রাকৃতিক নিয়মের শৃঙ্খল অনুযায়ীই আবর্তিত হয়েছে সেই চক্র। শুধু বাইরের জগতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। সে বেঁচে থেকেছে তার নিজের নিয়মমতো। তুষারযুগে সারা পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে পড়লেও এই গুহার জীবজগৎ রক্ষা পেয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

সূর্যালোক না পাওয়ায় এই গুহার প্রাণীরা অনেকে জন্মান্ধ। কারণ, দীর্ঘ দিন অন্ধকারে চোখের ব্যবহার না থাকায় জিনগত বিবর্তনের ফলে সদ্যোজাতদের শরীরে চোখের গঠন হয়নি। এমনকি, সূর্যের অনুপস্থিতিতে পিগমেন্টেশনের জেরে তাদের গায়ের রংও স্বাভাবিক নয়।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

কিডনি রোগ বাড়ছে শিশুদেরও! যেসব লক্ষণ দেখলেই সতর্কতা জরুরি

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :