ফরিদপুরে বরকত-রুবেলের গুদামের চালের উৎসের সন্ধানে গোয়েন্দারা

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০২০, ২১:০৭

ফরিদপুরে গ্রেপ্তার হওয়া বহুল আলোচিত শহর আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের গুদাম থেকে ৬০ হাজার কেজি চাল উদ্ধারের ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই চালের উৎসের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। উৎস অনুসন্ধানে তৎপর রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও।

গত ৭ জুন দিবাগত রাত ২টা ২৫ মিনিট থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত শহরের বদরপুর এলাকায় সাজ্জাদের মালিকানাধীন সাউথ লাইন পরিবহনের বাস রাখার সেডের মধ্যে এবং ব্রাহ্মণকান্দায় তাদের বাড়িতে শয়নকক্ষের লকার থেকে ওই চাল ও বিদেশি অর্থ জব্দ করে পুলিশ।

সাজ্জাদ হোসেন রবকত শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এসবি কনস্ট্রাকশন নামে কনস্ট্রাকশন ফার্মের স্বত্বাধিকারী এবং বরকত গ্রুপের প্রধান। এছাড়া তিনি জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ছিলেন। গত ৭ জুন রাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাস মালিক গ্রুপের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ওই চাল এবং দেশি-বিদেশি বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশের উদ্যোগে সাজ্জাদ হোসেন ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৮ জুন ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেন বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫/২৫ বি (২) ধারায় মামলা করে। ওই ধারায় কালোবাজারির উদ্দেশে বিদেশি ডলার ও রুপি হেফাজতে রাখার অপরাধে এই মামলাটি করা হয়।

ওই দিন সাজ্জাদ হোসেন ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসানের বাড়ি ও গুদাম তল্লাশি করে এক হাজার ২০০টি বস্তায় ৬০ হাজার কেজি চাল, তিন হাজার ডলার, ৯৮ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, সাজ্জাদ হোসেন কালোবাজারির উদ্দেশে দেশের এই আপৎকালীন সময় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় অপরাধ করেছেন।

ফরিদপুর কোতয়ালি থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বরকত ও রুবেল বর্তমানে অস্ত্র আইনে করা একটি মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন। ওই রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এই মামলায় রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এই মামলার তদন্ত করছেন ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবিরুল হক। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি (কবিরুল হক) মামলায় প্রাথমিক তদন্ত বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ফরিদপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ঢাকা টাইমসকে জানান, শহরের বদরপুর এলাকায় সাজ্জাদ হোসেন বরকত মালিকানাধীন সাউথ লাইন পরিবহনের বাস রাখার সেডের মধ্যে ৬০ হাজার কেজি চাল উদ্ধারের খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ওই গুদামে ৫০ কেজি করে চটের বস্তা ও পলিথিনের বস্তায় ওই চাল দেখতে পান।

খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, চটের যে বস্তাগুলো সেখানে পাওয়া গেছে সেগুলো অনেক পুরনো, ২০১৩ সালের সরকারি খাদ্য গুদামের সিল মারা। তিনি বলেন, চালগুলো বাজার থেকে কেনাও হতে পারে। তবে যে বিপুল পরিমাণ চাল উদ্ধার হয়েছে তা কোনো ব্যক্তির পক্ষে মজুদ করা আইনবিরুদ্ধ কাজ।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, উদ্ধারকৃত ওই চাল নিয়ে তদন্ত করার কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। তিনি বলেন, পুলিশ যে সময় চালগুলো জব্দ করেন ওই সময় জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা ও প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট অফিসার (পিআইও) ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সাজ্জাদ হোসেন বরকত মালিকানাধীন সাউথ লাইন পরিবহনের বাস রাখার সেডের মধ্যে ৪০০টি চটের বস্তা এবং ৮০০টি পলিথিনের বস্তায় ভর্তি যে ৬০ হাজার কেজি চাল জব্দ করা হয়েছে তা এই আপৎকালে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়েছে। তিনি (সাজ্জাদ) কোনো চালের ডিলার নন তাই তার জিম্মায় এই বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ রাখা অসৎ উদ্দেশ হাসিলের উদ্যোগ হিসেবে করা হয়েছিল বলে ধারণা করা যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। প্রকৃত রহস্য অবশ্য উদঘাটিত হবে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এলএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :