বাজেটে মন্দা কাটানোর রূপরেখা বাস্তবভিত্তিক নয়: বিসিআই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জুন ২০২০, ১৭:৫৫ | প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২০, ১৭:৪২

করোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে রূপরেখা নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। আরও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

শনিবার সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বাজেটে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে তাও অনেক উচ্চাভিলাসী বলে মনে হয়। এটা আরও বাস্তবভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন।

বিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা মোকাবিলার দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে সে জন্য বিসিআই সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রণোদনা সংশ্লিষ্ট খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।

ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে, ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, সর্বনিম্ন কর পাঁচ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ কর সীমা ২৫ শতাংশ করায় অর্থমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, যা বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবের প্রতিফলন।

বিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মোকাবিলায় বাজেটের দিক নির্দেশনা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী হওয়া উচিত, যা প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সরকারের যে প্রণোদনা প্যাকেজ আছে অন্তত সেটা যথাযথভাবে বিতরণ করতে হবে। কারণ বিতরণ ছয় মাস পরে করলে কোনো লাভ হবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধি গত এক দশকে উৎসাহব্যাঞ্জক হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের চাপে ছিল বাংলাদেশ। করোনার কারণেও সে চাপ প্রবলতর হচ্ছে। আবার বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটির সংক্রমণের কারণে বিশালসংখ্যক প্রবাসীর চাকরি অনিশ্চয়তার মুখে। তাই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে বিদ্যমান কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প খাতে প্রবাসী শ্রমিক এবং বেকার তরুণদের নতুন উদ্যোগ নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ২০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তাদের ঋণ দেয়া হবে তা উল্লেখ নেই। ফলে অন্যান্য বছরের মতো সুযোগ সন্ধানীরাই এ ঋণ পাবে।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করে বিসিআই জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রথা অব্যাহত রয়েছে যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ, কালো টাকা উপার্জন এবং এর ব্যবহার উভয়ই অন্যায় এবং অবৈধ। এতে করে বৈধ অর্থ উপার্জনকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।

ব্যাংক থেকে সরকারের যে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাজেট ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, এ ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের কথা বলেছে। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে এ পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে, তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বাজেটের ১১.২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা এ মুহূর্তে অতিব জরুরি নয়। এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করে এমন সব প্রণোদনা প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত হলেই বেশি জনকল্যাণমুখী হতো- বলে অভিমত দিয়েছে বিসিআই।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে এ ব্যবসায়ী সংগঠনটি। এগুলো হলো- করপোরেট কর কমানোর কারণে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিছুটা লাভবান হবে নিঃসন্দেহে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি টিকে থাকার জন্য শিল্প ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার হ্রাস করার অনুরোধ করছি। ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের ধারা অনুযায়ী ভ্যাট, শুল্ক ও অগ্রিম কর দুই মাসের মধ্যে রিফান্ড করা। দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম করের পরিমাণ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ ও অগ্রিম কর সমন্বয়ের জন্য দুই কর মেয়াদের পরিবর্তে চার কর মেয়াদে সমন্বয়ের সুযোগ দেয়ার হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বিসিআই কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রত্যাহ্যারের দাবি করছে। করোনা কারণে অনেকে এখন শহর থেকে গ্রামে মাইগ্রেট করেছে। গ্রামীণ বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এখন বেশি প্রয়োজন সেদিকে নজর দিয়ে কৃষি ও কুটির শিল্প নির্ভর গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় করার লক্ষ্যে বিশেষ স্কিম নেয়া যেতে পারে। আর্থিক প্রণোদনাসহ করোনা স্বাস্থ্যঝুঁকি সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে প্রণোদনা অনেক বেশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালন করবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের ইউটিলিটি সেবাগুলোর ওপর ভ্যাট মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করা হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বর্তমান অবস্থায় টিকে থাকা কিছুটা সহজ হবে। পাশাপাশি বিসিক এবং ইপিজেডে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভাড়াও মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করা। স্থানীয় পর্যায়ে লোকাল এলসির মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে উৎসে কর ২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, অথচ পূর্বে কোনো উৎসে কর ছিল না। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তাই এটি ২ শতাংশ না করে ১ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা। রপ্তানিমুখী শিল্পের রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সকল রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য এ কর দশমিক ২৫ শতাংশ এবং করপোরেট কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ও বৃহৎ শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সহায়তা প্যাকেজসহ সরকরার ঘোষিত সব প্রণোদনা প্যাকেজ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/আরএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসারদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

সোনার দাম কমলো ভরিতে ২১৩৯ টাকা

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর নতুন ৫টি কালেকশন বুথের উদ্বোধন

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন নুরুল ইসলাম মজুমদার

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু জাফর

সোনালী লাইফের অফিস ভাড়াকে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম পরিশোধ দেখানোর দাবি

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে কাজে লাগাতে হবে: পাটমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :