রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় জিঙ্ক সমৃদ্ধ ১০ খাবার

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২০, ১২:১৩

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

অন্য যেকোনো পুষ্টির মতো জিঙ্কও সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের দেহে তিন শতাধিক এনজাইমের ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, কোষ বিভাজন, কোষের বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময় এবং প্রোটিন এবং ডিএনএ সংশ্লেষ। এটি শরীরের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর পরেও বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ জিঙ্কের অভাবজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক গ্রহণ করেন না। ব্যাপকভাবে জিঙ্কের ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রোটিনের মতোই আমাদের দেহ এই পুষ্টি সংরক্ষণ করতে পারে না, তাই একজন ব্যক্তিকে জিঙ্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত পূরণ করতে হয়।

দৈনিক কতটুকু জিঙ্ক খাবার গ্রহণ করা উচিত?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুসারে, ১৪ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের অবশ্যই দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম এবং ১৪ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক গ্রহণ প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ১২ মিলিগ্রাম।

এখানে দশটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে যা আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। এগুলো থেকে দৈনিক আপনার শরীর জিঙ্ক গ্রহণ করবে। চলুন দেখে নিই দশটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার।

মাংস

মাংস জিংকের একটি দুর্দান্ত উৎস। বিশেষ করে লাল মাংস। গরুর মাংসের পাশাপাশি ভেড়ার মাংসেও প্রচুর জিংক থাকে। গ্রাম বা উন্মুক্ত অঞ্চলের গরু যেটাকে আমরা অর্গানিক গরু বলে থাকি, সেই গরুর ১০০ গ্রাম মাংসে ৪.৮ মিলিগ্রাম জিংক থাকে। এছাড়াও গরুর মাংসে প্রোটিন, আয়রন, বি ভিটামিনসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির এক দুর্দান্ত উৎস।

শেলফিশ

শেলফিশের তালিকায় রয়েছে অনেক কিছুই। তবে সবচেয়ে সহজলভ্য হল ঝিনুক, শামুক, কাঁকড়া, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২ ও জিঙ্ক থাকে। রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, সেলেনিয়াম ও আয়রন। সবচেয়ে পুষ্টিকর প্রাণির মধ্যে রয়েছে এই শেলফিশ।

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৱস, যা পেশী বৃদ্ধি এবং বিকাশে অবদান রাখে। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে এটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ। নিয়মিত মুরগি খাওয়া আপনার হাড়, হার্টের স্বাস্থ্য এবং অনাক্রম্যতার জন্য ভাল। ৮৫ গ্রাম মুরগীতে ২.৪ গ্রাম জিঙ্ক থাকে।

কলাই

যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক সমৃদ্ধ উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের সন্ধান করেন তবে আপনার ডায়েটে বিভিন্ন কলাই বা শিম জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। ছোলা, মটরশুটি এবং মসুর জাতীয় খাবার জিঙ্কের একটি ভাল উৎস। এগুলিতে ফ্যাট ও ক্যালোরি কম থাকে এবং প্রোটিন এবং ফাইবারের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে।

১৬৪ গ্রাম ছোলাতে ২.৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে এবং ১০০ গ্রাম মসুর ডালে ৪.৭৮ মিলিগ্রাম থেকে ১.২৭ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। এছাড়া ১৮০ গ্রাম মটরশুটিতে ৫.১ গ্রাম জিঙ্ক থাকে।

বাদাম

জিংক সমৃদ্ধ আরেকটি খাবার হচ্ছে বাদাম। চিনাবাদাম, পাইন বাদাম, কাজু বাদামের মতো জিংকসমৃদ্ধ বাদাম হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারে। বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবারসহ অন্যান্য পুষ্টি থাকে।

ওটস

ওটসে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, থিয়ামিন, ভিটামিন ইত্যাদি যা অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবারের তুলনায় বেশি। কম পরিমাণে ফ্যাট-ওটসে প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। তাছাড়াও রয়েছে উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড, মানে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। ওটসের বেটা-গ্লুকোন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে। শরীরে ব্যাক্টিরিয়া জনিত ইনফেকশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে ওটস।

মাশরুম

সুস্বাদু এই খাবার নিউট্রিশনের পাওয়ারহাউস বলা যেতে পারে। কপারের ভালো উৎস এই মাশরুমে সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিত এবং ভিটামিন বি১, বি৫, বি৬ এবং ডি পাওয়া যায়। ছোট একটি মাশরুমে দৈনিক কপারের চাহিদা পূরণ হয়।

বীজ জাতীয় খাবার

কুমড়া, তিল এবং লাউ এর বীজগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে। এছাড়া এই বীজগুলোতে স্বাস্থ্যকর ভিটামিন, খনিজ উপাদান পাওয়া যায়।

দুগ্ধজাত খাবার

পনির বা দুধের মতো দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পুষ্টি উপাদান এবং জিংক রয়েছে। দেহ এই জিঙ্ক সহজে শোষণ করতে পারে। এই খাদ্যগুলো প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি-সহ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ডার্ক চকোলেট

এতে পর্যান্ত পরিমাণ জিঙ্ক পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম ওজনের একটি চকোলেটের বারে ৩.৩ মিলিগ্রাম জিংক থাকে।

ঢাকা টাইমস/১৪জুন/একে