হত্যার আগে শারমিনকে ধর্ষণ করে চারজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুন ২০২০, ১৮:৫০ | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২০, ১৮:১৯
ঢাকার উত্তরখানে শারমিন হত্যায় গ্রেপ্তার চারজন

এক প্রতিবেশির সঙ্গে ঘনিষ্টতা পরবর্তী অন্য আরেকজনের সঙ্গে মেলামেশা ও আর্থিক লেনদেনের জেরে ঢাকার উত্তরখানে নির্মমভাবে খুন হন এক সন্তানের জননী শারমিন। পুলিশের তৎপরতায় তাকে হত্যায় জড়িত চারজনই ধরা পড়েছে। হত্যার আগে এই চারজনই ধর্ষণ করে এই নারীকে। ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চাওয়া শারমিনকে তারা পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেয়।

গত ৬ জুন উত্তরখান থানার গোবিন্দপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে পুলিশ শারমিনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার কুলকিনারা করতে মাঠে নামে উত্তরখান থানার পুলিশ।

পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফুরকান, সাইফুল, মাসুদ ও আনোয়ার নামে চারজন। এদের মধ্যে ফুরকান ও সাইফুল শারমিনকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। বাকি দুজনকে চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি দক্ষিণখান) হাফিজুর রহমান রিয়েল ঢাকাটাইমসকে বলেন, অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে শারমিনের মরদেহ উদ্ধারের পরপরই গুরুত্ব দিয়ে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু হয়। টানা অভিযানে ঢাকা ও জামালপুর থেকে মাসুদ, ফুরকান, আনোয়ার ও সাইফুল নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এস এম হাফিজুর রহমান রিয়েল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উত্তরখানের সিদ্ধিরটেক এলাকা। এখানেই হাজী মাহতাবের ভাড়া বাড়িতে চারটি পরিবার থাকে। শারমিন বাবা-মা আর মেয়ে কুলসুমকে নিয়ে এখানে ভাড়া থাকতেন।’

‘পাশাপাশি কক্ষে বসবাসের সুবাদে একসময় বিবাহিত ফুরকানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে শারমিনের। পরে ফুরকান জানতে পারে শারমিনের সঙ্গে আরও দুয়েকজন এভাবে মেলামেশা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে থাকে ফুরকান।’

ফুরকান সহকর্মী মাসুদের সঙ্গে শারমিনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এক পর্যায়ে মাসুদের সঙ্গেও শারমিনের সম্পর্কের কথা জানতে পারে ফুরকান।

পুলিশ কর্মকর্তা রিয়েল বলেন, ‘মাসুদ মাস্টারমাইন্ড টাইপের একজন ভয়ংকর ক্রিমিনাল। কিন্তু গত ৫ জুন সকালে মাসুদ শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসে ফুরকানের কাছে। শারমিন নাকি টাকা নিয়ে তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। মাসুদ, ফুরকানের মতো সাইফুল ও আনোয়ারও ভিড়ে যায় তাদের দলে।’

‘এরপর তারা শারমিনকে উচিত শিক্ষা দিতে পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ৫ জুন বিকালে শারমিনকে ফুরকান জানায়, তার সঙ্গে আলাপ আছে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাইরে দেখা করতে হবে। সন্ধ্যায় ফুরকানের সঙ্গে দেখা করেন শারমিন। তারা রাস্তার দিকে হাঁটতে থাকার এক পর্যায়ে মাসুদকে দেখে চমকে যান শারমিন। এসময় মাসুদ টাকা নিয়ে ঘুরানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে শারমিন চুপ থাকেন।’

এসময় সেখানে ফুরকান ও মাসুদের সঙ্গে সাইফুল ও আনোয়ার যোগ দেয় জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান রিয়েল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এসময় তারা সবাই শারমিনকে যৌন সম্পর্ক করতে চাপ দেন। পরে শারমিনকে নিয়ে এই চারজন ঢুকে পড়ে বৈকাল রোডের একটি নির্জন জায়গায়। এসময় মাসুদ সাড়ে তিনহাজার টাকাও দেয় শারমিনের হাতে। এরপর তারা চারজনই শারমিনকে একে একে ধর্ষণ করে।’

এসময় শারমিনের হাত দুটো ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে মাসুদ। টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের তর্ক শুরু হয়। শারমিন মাস্ক তৈরির কারখানায় কাজ নিয়েছে এবং আর কোনো বাজে কাজে নেই জানালে চারজনই ক্ষিপ্ত হয়।

দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রিয়েল বলেন, ‘শারমিন তাকে ধর্ষণের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে বললে মাসুদের নির্দেশে ফুরকান হাত ও মুখ চেপে ধরে আর সাইফুল ও আনোয়ার পা চেপে ধরে। শারমিনের কাছ থেকে সাড়ে তিনহাজার টাকা কেড়ে নেয় মাসুদ। পরে কোমর থেকে ধারালো চাপাতি চালিয়ে দেয় শারমিনের গলায়। এরপর তার লাশ ফেলে পালিয়ে যায় জড়িতরা।’

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরা বিভাগের উপ কমিশনারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আর ডিএমপির আইএডি বিভাগের নিরবচ্ছিন্ন সহায়তায় রাত-দিন পরিশ্রম করে শারমিন হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। উত্তরখানের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাসুদ, সাইফুল ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ফুরকানকে জামালপুরের বকশিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/এএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :