লক্ষণ ও পজিটিভে করণীয়

করোনা চিকিৎসায় হাসপাতাল যখন বাড়িতে

ডা. মোহাম্মদ আহাদ হোসেন
| আপডেট : ২১ জুন ২০২০, ১১:৪৩ | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২০, ০৭:৩৬

একবিংশ শতাব্দির এক নতুন চ্যালেঞ্জ করোনাভাইরাস। সারা বিশ্ব আজ হিমসিম খাচ্ছে এই ভাইরাস মোকাবিলায়। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সামাল দিতে পারছে না এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে। বিশ্বের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে কমিউনিটিতে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। হাসপাতালগুলো রোগী জায়গা দিতে পারছে না। ফলে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রোগী মারা যাচ্ছে রাস্তায়, বাসায় বা অপ্রত্যাশিত কোনো জায়গায়। এ জন্য দায়ী করছি হাসপাতালকে, স্বাস্থ্যকর্মীকে, সরকারকে।

আসলে কি তাই। আসলে এই ভাইরাসকে না জানা, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ভুল ধারণা, সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা, সর্বোপরি ভয় আমাদের জন্য এই পরিণতি নিয়ে এসেছে। করোনা থেকে বাঁচতে হলে করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে। ভয় পেয়ে এর থেকে বাঁচা যাবে না। এই ধারণা থেকেই আমরা নিয়ে এসেছি হসপিটাল ইন হোম প্রোজেক্ট।

করোনাভাইরাস কী বা এটি কাদের জন্য ঝুঁকি বেশি এ ব্যাপারে এখানে কিছু না বলি। বরং ভাইরাসটি সম্পর্কে সতর্কতা, সংক্রমণ রোধ ও সংক্রমিত হয়ে গেলে করণীয় ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করি।

সতর্কতা

অফিস আদালতে বা চাকরি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পোশাক বাসায় প্রবেশের সাথে সাথে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে দিন বা পোশাকগুলো একটি ব্যাগে দুই দিন পর্যন্ত রেখে দিন।

২। বাইরে ব্যবহৃত বেল্ট, ধাতব পয়সা, আংটি, ঘড়ি ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ একটি ব্যাগে তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত রেখে ব্যবহার করুন।

৩। প্যাকেট বা কার্টুন আদান-প্রদানে সতর্ক থাকুন। স্পর্শ লাগার পর দ্রুত হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

৪। টাকা লেনদেনে যারা জড়িত তাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। বাইরের টাকা চার দিন পর্যন্ত আলাদা জায়গায় রেখে পরে ব্যবহার করুন।

৫। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যাবহার করুন। মাথায় পাতলা ক্যাপ ব্যবহার করুন। বাসায় প্রবেশের আগে এগুলো ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলে দিন।

মাস্ক কীভাবে ব্যবহার করবেন

১। কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

২। এক দিনের জন্য একটি সারজিক্যাল মাস্ক ব্যাবহার করুন। মাস্কের বাইরের বা ভিতরের অংশ স্পর্শ করবেন না। দুই পাশের ব্যান্ড ধরে মাস্ক পরুন এবং খোলার ক্ষেত্রে ব্যান্ড ধরে খুলুন।

৩। যারা কেএন-৯৫ বা এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করতে চান এবং পুনরায় ব্যবহার করতে চান, তারা ছয়টি মাস্ক ব্যবহার করবেন। প্রথম থেকে ৬ষ্ঠ দিন পর্যন্ত পর পর ছয়টি মাস্ক ব্যবহারের পর ছয়টি কাগজের ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। সপ্তম দিনে প্রথম দিনের মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন। এভাবে দুই মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই খোলা ও পরার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে হবে।

উপসর্গ দেখা দিলে কী করণীয়

করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে আইসোলেশনে যান। আইসোলেশনে যাবার ব্যবস্থা না থাকলে বাসায় মাস্ক ব্যবহার করুন। কিছু সময় পর পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। বাচ্চা ও বয়স্কদের থেকে দূরে থাকুন। আপনার কাপড় আলাদা রাখুন। মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেসব মা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চা ধরার আগে বা দুধ খাওয়ানোর আগে হাত ধুয়ে নিন ও মুখে মাস্ক পরে নিন। বাচ্চাদের খাওয়ার পাত্রগুলো ধরার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

আইসোলেশনে প্রয়োজনীয় জিনিস

১. ইলেক্ট্রিক কেটলি, কাপ, গ্লাস, প্লেইট, টি ব্যাগ, ছুরি।

২. যেকোনো মিনারেল ওয়াটার, ১/২ লিটার ও ৫ লিটার সাইজ। শুকনো খাবার-- মুড়ি, চিড়া, কলা, খেজুর।

৩. মধু, কালিজিরা, আদা, দারচিনি, লং, লেবু, লবণ। গারগল করার জন্য ভিনেগার।

৪. মাল্টা, কমলা, আপেল এবং অন্য সিজনাল ফ্রুটস।

৫. প্লাস্টিক/ পলি ব্যাগ, স্যান্ডেল, টিস্যু, এরোসল।

৬। হাদিস, কুরআন, সাহিত্য বই।

৭. মোবাইল ফোন, চারজার, ল্যাপটপ, মাল্টিপ্লাগ।

৮. এক্সট্রা কাপড়, টাওয়েল, সাবান, ডিটারজেন্ট। আয়না, কাচি, মগ, বালতি।

৯. সিভিট ফোরট ট্যাব্লেট, ভিটামিন ডি (যদি খেয়ে না থাকেন), প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, ইনহেলার, পিপিআই, Zinc tablet (pep-2), খাবার স্যালাইন ১০ প্যাকেট।

১০. মাস্ক, গ্লভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পালস অক্সিমিটার।

আইসোলেশনে সাধারন চিকিৎসা

জ্বরের জন্য ট্যাবলেট নাপা এক্সটেন্ড (১+১+১), কাশির জন্য ট্যাবলেট ফেনাডিন ১২০ এমজি (০+০+১, ১৫ দিন), ট্যাবলেট মনাস ১০ এমজি (০+০+১, ১৫ দিন; যারা শ্বাসকষ্টের জন্য আগে থেকে খেয়ে আসছেন)।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ট্যাবলেট ভাসকো/সিভিট (১+০+১, ১৫ দিন), ট্যাবলেট জিংক/ পেপ (১+০+১, ১৫ দিন), ক্যাপসুল ভিটাল ডি ২০০০০ আইইউ (Cap. Vital D 20000 IU ০+০+১, ৫ দিন)

সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা আইসোলেশনে করে উপকার পাওয়া যাবে-

১। হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করা। হালকা গরম ভিনেগার দিয়েও গড়গড়া করা যায় দিনে ৩-৪ বার।

২। আদা, লং দিয়ে চা চিনি ছাড়া প্রয়োজন মতো।

৩। গরম পানির ভাপ নেয়া দিনে ২-৩ বার।

৪। মধু-লেবুর হালকা গরম পানি পান করা।

৫। অতিরিক্ত গরম পানি অনেক সময় গলার ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে হালকা কাশিতে রক্ত আসতে পারে।

৬। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা। বড় করে শ্বাস নিয়ে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখা, এরপর ছাড়া। এভাবে ৫ বার শ্বাস নিয়ে ৬ষ্ঠ বারে শ্বাস নিয়ে দুটি কাশি দেয়া। এভাবে দিনে ৪-৫ বার করার অভ্যাস করা।

৭। ঘরের সাধারণ ব্যায়াম করা। অধিকক্ষণ শুয়ে না থাকা। নিজের ঘর নিজে পরিষ্কার করা।

৮। সাহস রাখা, আশাহত না হওয়া, বেশি বেশি এবাদত করা বা নামাজ পড়া। কোরআন তেলাওয়াত করা।

কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ লে করণী

বিশ্বের সব দেশে বাসায় করোনা চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। স্যোশাল মিডিয়ায় অনেক আলোচনা এসেছে বিভিন্ন দেশের আইসিইউ বিশেষজ্ঞদের।

মহামারীর এই সময়ে যখন কেউ আক্রান্ত হয় তখন কে বড় কে ছোট খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। আর হাসপাতালে যখন বেড খালি থাকবে না, তখন আপনি আমি কেউই আলাদা কোনো হিসাব করতে পারব না। সুতরাং এই সময়ে প্যানিক হলেই বিপদ।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রথমেই যে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সাহস হারানো যাবে না। আক্রান্তদের খুবই সামান্য, ৫-৭ শতাংশ হাসপাতালে যাওয়া লাগে। আর তাদের মধ্যে ১-২ শতাংশের আইসিইউ দরকার হতে পারে। তাই সহস রাখুন।

স্বল্প মধ্যম উপসর্গের জন্য বাসায় চিকিৎসা পদ্ধতি

• স্বল্প উপসর্গ সম্পন্ন অবস্থায় সাধারণত কোনো চিকিৎসা দরকার হয় না, যদি কোনো অতিরিক্ত ঝুকির লক্ষণ না থাকে।

• জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল Tab. Napa extend 1+1+1

• ঠান্ডা বা হালকা কাশির জন্য Tab. Fenofex 120mg অথবা Tab. Fenadin 0+0+1

• যাদের পূর্বে থেকেই এলারজি সমস্যা আছে এবং Monteleukast 10 mg ব্যবহার করে আসছেন তারা এটা দিনে ১টি করে চালাতে পারেন।

• Tab. Zimax 500mg /Tab. Tridosil 500 mg প্রতিদিন ১টি করে সকালে বা রাতে ৭ দিন।

• অথবা Cap Doxicap 100mg ১টি করে সকালে ও রাতে ৭ দিন।

• একই সাথে দুটি এন্টিবায়োটিক খাওয়ার দরকার নেই।

• Tab. Scabo 6mg/ Tab Ivera 6mg এর দুটি ট্যাবলেট একসাথে একবার এবং সাত দিন পর আরো দুটি ট্যাবলেট একসাথে খেতে হবে।

• যারা শ্বাসকষ্টের জন্য Inhaler ব্যাবহার করে আসছেন তারা যথারীতি তা ব্যবহার করে যাবেন আগের নিয়মে। তবে এখন Sapcer নামক একটি যন্ত্র আছে সেটি ব্যবহার করে Inhaler নিতে হবে।

• যাদের কাশি আছে এবং উপরের চিকিৎসায় যাচ্ছে না তারা Bexitrol F 50/100 অথবা Ticamet 100 Inhaler দিনে দুবার করে ব্যবহার করতে পারেন।

• নেবুলাইজেশন কোনোক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না। এতে ঘরের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

• প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে।

• শর্করা জাতীয় খাবার কম খেয়ে টক ফল বেশি খাওয়া যেতে পারে।

• হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করা। হালকা গরম ভিনেগার দিয়েও গড়গড়া করা যায় দিনে ৩-৪ বার

• আদা, লং চা চিনি ছাড়া প্রয়োজন মতো।

• গরম পানির ভাপ নেয়া দিনে ২-৩ বার।

• মধু লেবুর হালকা গরম পানি পান করা।

• ঘড়ে অধিকক্ষণ শুয়ে না থেকে হালকা ব্যায়াম করুন।

• ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।

করোনা রোগীকে কীভাবে ফলোআপ করবে

দরকারি জিনিস

১। প্রেশার মাপার যন্ত্র, পালস অক্সিমিটার, থার্মোমিটার,

ইনহেলার নেয়ার জন্য একটি ভালো মানের স্পেসার ও স্মার্টফোন।

ফোনে সেবা নেওয়ার আগে যেসব তথ্য হাতে নিয়ে নেবেন-

লক্ষণ, বয়স, পূর্বে কোনো ডায়াবেটিস, প্রেশার বা শ্বাসকষ্ট আছে কি না, পেশা কি, পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো রোগ আছে কি না, ক্যান্সারের রোগ আছে কি না, রোগীর প্রেশার, পালস অক্সিমিটারের রিডিং, থারমোমিটারে জ্বর কত।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা

1. CBC

2. CRP

3. Random Blood sugar, if diabetic then Fasting, 2 hours after breakfast blood sugar, HbA1c

4. Liver function test- SGPT, S. Albumin

5. Renal function test- S. Creatinine, Urine R/E, eGFR

6. CXR

বাসায় পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে মনিটরিং অক্সিজেনের ব্যাবহার

বাসায় Pulse Oxymeter রাখুন Spo2 90-92 পর্যন্ত বাসায় অনায়াসে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্যে উন্নতি করা সম্ভব।

Pulse Oxymeter-এর রিডিং ৯০ বা নিচে নেমে গেলে অক্সিজেন নিন। অক্সিজেন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মিটারের দুই দাগ পর্যন্ত অক্সিজেন নিন এবং ১০-২০ মিনিট দেখুন রিডিং ৯০ এর উপরে উঠে কি না। এভাবে রিডিং ৯৮-১০০ পর্যন্ত অক্সিজেন বাড়াতে থাকুন ১০-২০ মিনিট পর পর। যে দাগে এসে স্যাচুরেশন ৯৮-১০০ থাকে, সেটাতে মিটার ঠিক রাখুন। এভাবে ১-২ ঘন্টা অক্সিজেন নিন। পরবর্তী আধা ঘন্টা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন, উপুর হয়ে শ্বাস নিন, ডান কাতে বা বাম কাতে শ্বাস নিন।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবহার

অক্সিজেন সিলিন্ডার সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, আবার এর অপচয়ও হতে পারে।

১. অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাথে একটি নীল বা সবুজ রংয়ের ফ্লো মিটার থাকে সেটি বাম হাতের দিকে রেখে এবং একটি চাকতির মত বাটন আছে সেটি ডান হাতে রেখে সোজা করে দাড় করান।

২. প্রথমেই ডান হাতের বড় চাকতি অংশটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরান। একটু শক্তি প্রয়োগ করা দরকার হতে পারে। মাঝখানের বড় মিটার দেখুন সেটি নড়ে কি না বা ১০০০ বা ১৫০০ বা ২০০০ দাগে উঠে কি না।

৩. এবার সবুজ বা নীল একটি বাটন আছে বাম হাতের অংশে, সেটি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরান। সেখানে ১ থেকে ১৫ দাগ পর্যন্ত দাগ আছে। ভেতরের সাদা বলটির নিচের অংশের সাথে দাগ মিলান।

৪. প্রথমে সাদা বলটি দুই দাগে নিয়ে দেখুন ১০-১৫ মিনিট। তারপর ধীরে ধীরে বাড়ান। পালস অক্সিমিটারের রিডিং ৯৯ হলে আর অতিরিক্ত অক্সিজেন দরকার নেই। সেই দাগেই নীল বা সবুজ বাটন স্থির রাখুন।

৫. ছবিতে দেখানো পদ্ধতিতে মাস্ক বা ন্যাজাল ক্যনুলা ফিট করুন।

ব্রিদিং এক্সারসাইজ

বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে পাঁচবার করুন। ৬ষ্ঠ বার বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে দুটি কাশি দিয়ে ছেড়ে দিন। এভাবে দিনে একাধিক বার করার চেষ্টা করুন।

প্রন পজিশন বা উপুর হয়ে শ্বাস নেয়াঃ উপুর হয়ে বুকের দুই পাশে দুটো বালিশ দিয়ে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস করুন দিনে ১ ঘন্টা অথবা আধা ঘন্টা করে তিনবার। উপুর হয়ে শ্বাস নিতে না পারলে ডান কাতে বা বাম কাতে শ্বাস নিন আধা ঘন্টা করে। প্রতি ক্ষেত্রেই pulse oxymeter এর রিডিং খেয়াল করুন বৃদ্ধি পায় কি না। মনে রাখতে হবে অধিক সময় অক্সিজেন নেয়াও খারাপ হতে পারে। আপনার শ্বাস নেয়ার মাংশপেশিগুলো সচল রাখতে হালকা ব্যায়াম করুন।

বাসায় প্রতি ২ ঘন্টা পর পর শুধু আপনার জন্য ব্যবহৃত থার্মোমিটারে জ্বর মাপবেন এবং কাগজে লিখে রাখবেন।

আর অন্যান্য যে সাধারণ কিছু অভ্যাসের কথা বললাম সেগুলো আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উন্নতি এনে দিতে পারে যদিও শক্তিশালী কোনো গবেষণা নেই।

বাসায় পালস অক্সিমিটার না থাকলে কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের খারাপ হওয়া ফলোআপ করবেনঃ

রথ (ROTH) স্কোরের মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস ভালো আছে নাকি হাসপাতালে যেতে হবে।

একবার শ্বাস নিয়ে ১ থেকে ৩০ পর্যন্ত গুনে যান। স্টপ ওয়াচের মাধ্যমে দেখে নিতে পারেন। আপনি যদি ৯ এর বেশি গুণতে না পারেন অথবা ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় গুনতে না পারেন, তাহলে খারাপ। আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতা

বাসায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কোভিড চিকিৎসার জন্য খুবই সহায়ক। আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার সতর্কতার সাথে ব্যবহার না করলে মারাত্নক খারাপ অবস্থা হতে পারে।

১। অবশ্যই সিলিন্ডার রান্নাঘর থেকে দূরে রাখতে হবে।

২।যে ঘরে সিলিন্ডার থাকবে সেখানে কোন অবস্থার ধূমপান করা যাবে না।

৩। কোন ধরনের মশার কয়েল জ্বালানো যাবে না।

৪। যে কোন ধরনের দায্য পদার্থ থেকে দূরে রাখতে হবে।

হাসপাতালে কি হচ্ছে আর আপনি গিয়ে কী পাবেন

হাসপাতালে প্রথমত অক্সিজেন দিয়েই রাখা হয়। কোনো সাহায্যকারী কাছে পাবেন না, আপনি যেই হোন। সাধারণ সেবা এখানে ব্যাহত, কী কারণে এটা ব্যাহত সেটা আপনি-আমি ভালোই জানি। আর মৃত্যুভয় সব জায়গায়ই কাজ করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেরিতে হচ্ছে স্টাফস্বল্পতা, আরো অনেক যৌক্তিক কারণে। সেক্ষেত্রে আপনার মানসিক অবস্থা দূর্বল হয়ে যায়। আপনার নিজেস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকেন। মানসিক অবস্থা অটুট রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে যা অতিরিক্ত করা হবে একটি ক্যানুলা।

এই রোগের আপডেটেড চিকিতসায় ব্যবহৃত হওয়া কিছু ওষুধ antibiotics, low Molecular wt heparin, fluid. Ramdesivir, Tocilizumab, etc. যেটাও বাসায় করা সম্ভব দক্ষ চিকিতসকের সাথে ফোনে পরামর্শ করে। বরং সাধারণ বিষয় বা অভ্যাসগুলো যা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি এনে দিতে পারে সেটা হাসপাতালে পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

কখন হাসপাতালে যাবেন

• মারাত্মক দুর্বল হয়ে গেলে

• জ্বর বেড়ে যাচ্ছে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে।

• মারাত্মক ডায়রিয়া হলে।

• শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বা পালস অক্সিমিটারের রিডিং অক্সিজেনসহ ৯০-এর নিচে চলে গেলে।

• বুকে মারাত্মক চাপ বা ব্যথা অনুভব করলে।

• মুখ বা জিহবা নীল হয়ে গেলে।

এই পর্যায়ে সাধারণত খুব কম রুগীই পাওয়া যায়।

আইসিইউ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা

আইসিইউতে যে খুব বেশি কিছু করা যায় সেটা ভাবা ভূল। আইসিইউ স্বল্পতা, অপ্রতুল চিকিৎসক স্টাফ, যন্ত্রপাতির অভাব, জনবল সংকট, পরীক্ষা করানোর ঘাটতি, সব মিলিয়ে আইসিইউতে আমাদের কিছু করার থাকে না। অনেকেই মনে করেন, একটা আইসিইউ বেড কত সুবিধা এনে দিতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে এত এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও খুব কম সংখ্যক রুগীকে ফেরাতে পারছে। আমাদের এই অবস্থায় বেশি আশা করা যায় না।

সুতরাং সাহস রাখুন, মনোবল অটুট রাখুন। আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকুন, বাসায় থাকুন। ইনশা আল্লাহ আল্লাহই রক্ষা করবে।

[নির্দেশনাটি প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে ডা. ফায়সাল চৌধুরী (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ও বাংলাদেশ থেকে ডা. রোকনুজ্জামান সুমন (নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) । তাদের ধন্যবাদ।

কনসালটেন্ট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :