করোনায় আতঙ্ক তাড়িয়ে মমতা বাড়াবে যোগ ব্যায়াম

আহমেদ শরীফ
| আপডেট : ২১ জুন ২০২০, ১৮:৩১ | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২০, ১৩:২০

নিত্যনতুন প্রযুক্তিপণ্যের আগ্রাসন আর অমিতাচারী জীবনযাপনের ফলে সৃষ্ট স্ট্রেস আজ দিশেহারা করে তুলেছে শিশু-বৃদ্ধ-যুবকসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। দৈনন্দিন হাজারো অস্থিরতা এবং টেনশনজনিত মনোদৈহিক রোগশোকে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত মানুষ তাই খুঁজে ফিরছে প্রশান্তির একটুখানি অবলম্বন। বিস্তর গবেষণা-পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত যোগ-মেডিটেশন চর্চা ও সুস্থ জীবন-অভ্যাসই পারে জীবনকে সব দিক থেকে সুস্থ, প্রশান্ত, কর্মোদ্যমী করে তুলতে। তাই যোগ-মেডিটেশন হয়ে উঠুক আমাদের শিক্ষার অঙ্গ, দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ।

বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রযাত্রা ও বিকাশের ফলে মানুষের জীবনে বহুমুখী সুযোগ-সম্ভাবনা বেড়েছে বটে, কিন্তু সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মনোদৈহিক স্বাস্থ্য। আক্রান্ত হয়েছে দুদণ্ডের শান্তি ও স্বস্তি। ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মেদস্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হৃদরোগসহ বহুবিধ সাইকোসোমাটিক রোগব্যাধি।

আমেরিকার ফুড রিসার্চ এন্ড অ্যাকশন সেন্টারের মতে, শতকরা ৩৮ জন আমেরিকান মেদস্থূলতাজনিত রোগে আক্রান্ত, যা তাদের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। ২০১৬ সালে আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন জানায়, আমেরিকায় প্রতি তিনজন শিশুর একজন অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান ও মাদকাসক্তি নয়, শিশু-কিশোরদের এক নম্বর সমস্যা এখন এটি।

বাংলাদেশও প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরা মেদস্থূলতায় ভুগছে। ২০১৩ সালে আইসিডিডিয়ারবির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ১৮ জনই অতিরিক্ত ওজনে আক্রান্ত।

মেদস্থূলতার প্রতিকার হিসেবে আমেরিকার অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করা এবং অ্যাথলেটিক্সের ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, সব বাচ্চার জন্য সারাদিন দাঁড়িয়ে ক্লাস করা ও অ্যাথলেটিক্স চর্চা করা কঠিন। তাই স্কুলগুলো এখন শিশুদের জন্য যোগব্যায়াম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ২০১৬ সালে ইয়োগা জার্নাল প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান যোগব্যায়াম চর্চা করছে যার ৩৭ শতাংশ শিশু।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, যোগ-মেডিটেশন চর্চার ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ তীক্ষ্ণ হয়। স্মৃতিশক্তি, সহনশীলতা ও আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়, রেজাল্ট ভালো হয় এবং শ্রেণিকক্ষে আচরণ মার্জিত হয়। প্রশমিত হয় তার যাবতীয় রাগ ক্ষোভ স্ট্রেস।

বর্তমান সময়ের অস্থির অশান্ত ত্রাহি-অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারছে না কোনো পণ্য কিংবা প্রযুক্তি, না কোনো ধন্বন্তরী ওষুধ কিংবা সার্জারি। উপায় খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বাতলে দিচ্ছেন যোগ-মেডিটেশন ও সুস্থ জীবনাচার অনুসরণের পন্থা। হাজারো গবেষণার ভিত্তিতে মিলেছে এর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতিও।

২০১৪ সালে জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে ১৭৫টি সদস্য দেশের অনুমোদনে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিবছর ২১ জুনকে বিশ্ব যোগ দিবস হিসেবে পালনের। সেই থেকে পৃথিবীজুড়ে এটি পালিতও হচ্ছে সাড়ম্বরে। উদযাপনে অংশ নিয়েছেন খোদ জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কেরা।

স্বাস্থ্যগবেষকরা বলেছেন, যোগ-মেডিটেশন মানুষকে শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ রাখে বলে চিকিৎসা-ব্যয় কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। রোগীমৃত্যুর হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকদের মেডিটেশনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ যোগ-মেডিটেশনের ওপর থেকে সব ধরনের সার্ভিস ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিয়েছে, উপরন্তু এর প্রসারে দিয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। বাংলাদেশেও উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালায় যোগ-মেডিটেশন ও শিথিলায়নকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে।

এই করোনাকালেও যোগ মেডিটেশনের ভূমিকা অত্যন্ত জোরালো বলেই প্রমাণিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের চেয়েও যা মানুষকে বেশি কাবু করে দিয়েছে তা হলো করোনা-আতঙ্ক। আতঙ্ক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। আর উল্টোদিকে যোগ মেডিটেশন স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত ও কর্মক্ষম রাখে। মেডিটেশন নামক মনের ব্যায়াম মনের ভেতর থেকে রাগ ক্ষোভ দুঃখ হতাশা আতঙ্ক দূর করে। যোগ মেডিটেশনের ভেতর দিয়ে দেহ-মনের যে শিথিলতা ও স্থিরতা আসে তা আর কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব না।

পাশাপাশি মনোদৈহিক রোগ থেকে পরিত্রাণ দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যোগ মেডিটেশনের নিয়মিত চর্চা। এ সংক্রান্ত প্রচুর গবেষণা এখন সারা বিশ্বেই মানুষকে টেনে আনছে হাজার বছরের এই প্রাচীন সাধনার পথে।

এই সাধনা যে শুধু দেহ-মন সুস্থ রাখে তা নয় বরং মানুষের মনকে কোমল করে। মমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে আরও মানবিক করে। এই করোনাকালে চারপাশে মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি যেটার ঘাটতি দেখা গেছে সেটা হলো মমতা। সবচেয়ে যে জিনিসটা নিখোঁজ হয়েছে সেটা হলো মানবিকতা। মানবিকতা জাগানোর জন্য দরকার মনকে সব অস্থিরতা, ঘৃণা, আতঙ্ক, লোভ, লালসা, মোহ থেকে মুক্ত করা। সহমর্মিতা ও সমমর্মিতা বৃদ্ধি করা, যা সম্ভব যোগ মেডিটেশনের নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে।

সুস্থ দেহ ও প্রশান্ত মন একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এর সুরক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে যিনি যত সচেতন, তার সুস্থতা তত বাড়ে। অন্যদিকে যিনি যত উদাসীন ও খেয়ালি, দিন দিন বাড়ে তার অসুস্থতা। তাই নিজের সুস্থতার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আপনিও নিয়মিত হয়ে উঠুন যোগ-মেডিটেশন চর্চায়। প্রশান্তি ও সুস্বাস্থ্যে ও সার্বিক কল্যাণে পরিপূর্ণ হোক আপনার জীবন।

লেখকঃ চিফ ইয়োগা ইন্সট্রাক্টর, ইয়োগা কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

কেন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :