কুড়িগ্রামে তিন সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখানে যমুনা টিভির কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হোসেনসহ তার আরো দুই সহকর্মী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ওসি ও ওই এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমান এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা এই হামলা চালায়। এসময় ছিনিয়ে নেয়া হয় সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন।
এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ ঘটনায় খলিলুর রহমানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২ জনের নামে রাজারহাট থানায় একটি মামলা করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, যমুনা টিভি ও জাগো নিউজ২৪ডটকমের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন, রেডিও চিলমারীর জেলা প্রতিনিধি ভুবন কুমার শীল ও ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন শনিবার সকালে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত তিস্তা নদীর তথ্য সংগ্রহ করতে যান।
দুপুর ২টার দিকে ফেরার পথে নাজিমখান ইউনিয়নের মনারকুটি মৌজাস্থ একটি স-মিলের সামনে পাকা রাস্তায় স্থানীয় লোকমুখে জানতে পারেন, একই এলাকার খলিলুর রহমান ও শামসুন্নাহার গং-এর মধ্যে জমিজমার বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছিল। সালিশ বৈঠক শেষে সবাই রাস্তায় চলে আসে। ভীড় দেখে সেখানে সাংবাদিকরা দাঁড়ালে বিরোধপূর্ণ একটি পক্ষের লোকজন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পরে। এসময় আসামি খলিলুর রহমান লাভলু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসনের দিকে তেড়ে যান।
খলিলের প্রত্যক্ষ মদদে অন্য আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে হাতে লাঠিসোটা, রড, ছোরা নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে সাংদিকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় আসামি সোহেল দুই হাত দিয়ে ক্যামেরা পারসন কবির হোসেনের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। তাকে উদ্ধার করেতে এগিয়ে এলে সাংবাদিক নাজমুল হোসেন ও ভুবন কুমার শীলকে অন্য আসামিরা লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথারি পেটাতে থাকে।
হামলার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হলেও দুটি মেমোরি কার্ড তারা রেখে দেয়, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন সংবাদের তথ্য সংরক্ষিত ছিল।
হামলায় অংশ নেয় পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের দুই ভাই সোহেল ও কোয়েল, আক্কাছ আলী, রাজারহাট মল্লিকবেগ এলাকার সেতু মিয়া, দলদলিয়া কাজী পাড়ার লুৎফর রহমান, রাজারহাট মনারকুটি এলাকার মাসুদ মিয়া, নাজিমখান তেলি পাড়ার রেজাসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২জন।
রবিবার সন্ধ্যায় ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলায় বাধা দিতে বিভিন্ন দেনদরবার করছেন। কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না বলে দম্ভ করে বেড়াচ্ছেন এলাকায়।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু ও সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাংবাদিকদের ওপর এ বর্বর হামলা মেনে নেয়া যায় না। হামলার শিকার সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসনকে নিয়ে রবিবার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে জরুরি বৈঠক হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে সাংবাদিকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
এজাহার পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু সরকার বলেন, ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/কেএম)