করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২০, ১৭:৩৭ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২০, ১৭:৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে বেড়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা। এছাড়াও এই সময়ে নারী ও মেয়েশিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।

‘করোনা সংকট: চট্টগ্রামে করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় এ তথ্য উঠে আসে।

বুধবার চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিএসডিএফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সিএসডিএফ ও আমেরিকান কর্নার চট্টগ্রামের উদ্যোগে মঙ্গলবার এ অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সিএসডিএফ’র চেয়ারপার্সন এস এম নাজের হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনলাইন সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকার স্টেপস এর প্রোগ্রাম কোঅরডিনেটর চন্দন লাহড়ী।

মূল প্রবন্ধে চন্দন লাহড়ী বলেন, স্টেপস ও সিএসডিএফ এর পক্ষ থেকে দেশের ১২টি জেলায় সমীক্ষায় দেখা গেছে করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আর লকডাউনের কারণে নারীরা ঘরের বাইরে যাওয়া কমালেও ঘরে তাদের উপর দায়িত্ব অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আর অধিকাংশ নারীরা কর্মহীন হওয়ার কারণে তাদের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবারে অনেকেই নিগ্রহের শিকার। আর নারীর আয়-রোজগার কমায় তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, করোনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হয়রানি বেড়ে গেছে। নারীর প্রতি সহিংসতারোধে তরুণ জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান তিনি। একই সাথে সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় করার পরামর্শ দেন।

অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু বলেন, নারীর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের উপর সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। একসময় নারী নির্যাতন ঘটলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতো। এখন এনজিওগুলোর তহবিল সংকটের কারণে এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ ধরনের কাজে তহবিল বরাদ্দ দরকার।

কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন,করোনায় প্রকৃতপক্ষে কী কী ধরণের সহিংসতা হয়েছে তার পরিসংখ্যান বের করা দরকার। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও সমাজ পরিবর্তনের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সম্পদের বন্টন ও বিনিময় বাড়ানো যেতে পারে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পরিচালক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন,করোনায় ভুক্তভোগী আইনি সেবা প্রার্থীরা আরও ভোগান্তির শিকার। মামলায় প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আদালতগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক না হলে এই সমস্যা আরও বাড়বে।

প্রবীন সাংবাদিক এম নাসিরুল হক বলেন,নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আরও ইতিবাচক হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদেরকে আরও সক্রিয় ও সচেতন হতে হবে।

এডাব ঢাকার পরিচালক একেএম জসিম উদ্দীন বলেন বিভিন্ন মিডিয়া ও গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংষতা অনেকগুণ বেড়েছে। তবে নারীর প্রতি সহিংষতা রোধসহ করোনা মোকাবেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সরকারের সহযোগী হিসাবে যুক্ত করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারের সহায়ক ও পুরিপুরক। করোনা মোকাবিলায় অনেকগুলি এনজিও’র সম্পৃক্ততা না থাকায় জনঅংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ড কম দেখা যচ্ছে।

অন্যান্য বক্তারাও করোনাকালীন সময়ে সহিংষতা বন্ধের মূল কারণ হিসাবে পরিবারের আয় কমে যাওয়াকে দেখছেন। আর ঘরে বাইরে নারীর কাজের চাপ, আয়ের চাপ, পরিবার সামলানোর মতো কাজের চাপে নারীরা মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। তাই স্থানীয়ভাবে কাউন্সেলিং সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

অনলাইন আলোচনা সভায় নির্যাতনের শিকার নারীদেরকে পুনর্বাসন ও মনো-সামাজিক সহায়তা প্রদান, সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমগুলিতে ইতিবাচক সংবাদ তুলে ধরার জন্য প্রচাণা কর্মসূচি পরিচালনা করা, তরুণ সমাজকে নারীর প্রতি সহিংষতা বন্ধে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাণগুলিকে নারীর প্রতি সহিংষতা বন্ধে অধিক মনোযোগী হওয়া, সহিংসতা বন্ধে সরকারি হেলপলাইন ৯৯৯ ও ৩৩৩কে আরও জনপ্রিয় করা, সহজ শর্তে নারীদেরকে ঋণ প্রদান, সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনা দিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তোদেরকে আত্মনির্ভর করা, করোনা মোকাবিলাসহ নারীর প্রতি সহিংষতা বন্ধে সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে অধিক হারে যুক্ত করা এবং তহবিল বরাদ্ধের দাবি জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/জেআর/ইএস)