ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর ‘ফেয়ার’ আর থাকছে না
সার্বজনীন সৌন্দর্যের প্রত্যয়কে আরও এগিয়ে নিতে স্কিনকেয়ার পোর্টফোলিও বিবর্তনের পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা দিলো ইউনিলিভার বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় অনুমোদনের পর ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’র নতুন নামকরণ করতে যাচ্ছে ইউনিলিভার।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) কোম্পানির স্কিনকেয়ার পোর্টফোলিও বা ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত প্রসাধন পণ্যের বিবর্তনের পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ড ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’র নাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরো সার্বজনীন সৌন্দর্যের লক্ষ্যে ব্র্যান্ডকে এগিয়ে নিতে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’ নামটির মধ্য থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দটি ব্যবহার বন্ধ করবে কোম্পানি। ব্র্যান্ডটির নতুন নাম অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নামটি পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত দশকে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’র বিজ্ঞাপন প্রচারণায় বিবর্তনের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের বার্তাটি তুলে ধরা হয়েছে। ব্র্যান্ডটির লক্ষ্য- সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে এমন একটি সামগ্রিক পন্থা অবলম্বন করা, যেটি অবশ্যই সার্বজনীন ও বৈচিত্রময় এবং সব খানে সবার কথা মাথায় রাখে। সব ধরণের গায়ের রঙ নিয়ে কথা বলতে ব্র্যান্ডটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে ব্র্যান্ডের যাবতীয় যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ত্বক ফর্সা করার উপকারিতা’ এবং ‘ফর্সাকারী’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে- ‘দ্যুতি’/গ্লো, ‘উজ্জ্বল আভা’, ‘ত্বকের নির্মলতা’, এবং ‘উজ্জ্বলতা’। বস্তুত: পরিমার্জিত এই শব্দগুলো সুস্থ ত্বকের সামগ্রিক পরিচায়ক।
এছাড়া রঙের পরিবর্তন নির্দেশক দু’টি মুখ এবং রঙ পরিবর্তন বোঝার শেড গাইড- ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’র প্রায় সব প্যাকেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের নানান বর্ণের নারীদের উপস্থিতি এবং বিচিত্রময় সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে কোম্পানিটি।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), কেদার লেলে বলেন, “আমরা আমাদের স্কিনকেয়ার পোর্টফোলিও কে আরো সার্বজনীন করে তুলছি এবং আমরা বৈচিত্রময় সৌন্দর্য উদযাপনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০১৯ সালে ব্র্যান্ড যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী করে ‘ফেয়ারনেস’ এর পরিবর্তে ‘গ্লো’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবেই সুস্থ ত্বককে উপস্থাপন করে।
এখন আমরা ঘোষণা করছি যে, আমাদের ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’ ব্র্যান্ড নাম থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দটি সরিয়ে ফেলব। ব্রান্ডটির নতুন নাম অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পরিমার্জিত নাম সহ পণ্যটি বাজারে পাওয়া যাবে।”
প্রসাধন জগতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’ এমন একটি অগ্রগামী ব্র্যান্ড, যেটি সুলভ মূল্যে লাখ লাখ গ্রাহকের কাছে ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একাধিক সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি- তে রয়েছে ভিটামিন-বি৩, বি৬, সি এবং ই, গ্লিসারিন, ইউভিএ ও ইউভিবি সানস্ক্রিন এবং অ্যালানটোইন যা ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনের পাশাপাশি বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর আক্রমণ এবং পরিবেশ দূষণ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। পণ্যটি ত্বকের মাইক্রোবায়োমকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও মসৃণতা বাড়িয়ে ত্বককে আরো উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে কাজ করে থাকে।
ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’র নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত কোম্পানীর বাকি পণ্যগুলোও ইতিবাচক সৌন্দর্যের নতুন এই ভিশন বা লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরবে।
ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ফাউন্ডেশন
সমাজে নারীদের প্রতি কম প্রত্যাশার ব্যাপারটিকে চ্যালেঞ্জ করতে ও উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের উন্নয়নে সর্বতভাবে নিয়োজিত রয়েছে এবং শিক্ষাবৃত্তি, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং ব্যবসার মূলধন যোগানসহ নানান উপায়ে বাংলাদেশের নারীদের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করে আসছে।
২০১৯ সালে মোবাইল ফ্রেন্ডলি ‘ক্যারিয়ার ও শিক্ষা’ প্লাটফর্ম চালু করে ফাউন্ডেশন। এই কার্যক্রমটির আওতায় ক্যারিয়ার বিষয়ক প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি গুণগতমানের শিক্ষা সম্পর্কে জরুরি তথ্য প্রদান করা হয়। উন্নত ক্যারিয়ার গড়ে তোলা এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এই প্লাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারই নারী। তাদের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি জন ইতিমধ্যে ক্যারিয়ার পরীক্ষা সুসম্পন্ন করেছেন। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’ এর রি-ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে ফাউন্ডেশনেরও নতুন নামকরণ করা হবে।
ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এসকেএস