'সমুদ্র অর্থনীতির সুফল পেতে দৃষ্টি ভঙ্গিই প্রধান বাধা'

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইম
 | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২০, ২০:১০

শুধু মাত্র দৃষ্টি ভঙ্গির কারণেই বিশাল সমুদসীমা জয়ের পরও ব্লু- ইকোনমির সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে না বলে মনে করছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পদের সম্ভাবনাময় দেশ। আর এ ক্ষেত্রে সমুদ্রের সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। তবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না শুধু মাত্র দৃষ্টি ভঙ্গির কাণেই। এই ব্লু -ইকোনোমিকে কাজে লাগাতে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সরকার তা করতে প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বাজেট পরবর্তী এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

“সেভ আওয়ার সি”এই আলোচনার আয়োজন করে। কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবিব।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন সেভ আওয়ার সি’র প্রধান বিজ্ঞানী ড. আনিসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মোজাদ্দেদী আলফেসানী, সমূদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো জাকারিয়া, গ্রিক টেক ফাউন্ডেশনের সিইও মো লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং কেপিসি পেপার কাপ ইন্ডাস্ট্রি চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক।

এম এ মান্নান বলেন, বঙ্গোপসাগরকে আমরা বারবরই কম গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা বরাবরই স্থলের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সম্ভাবনার সব থেকে বড় ক্ষেত্র সাগর। আর এই সাগরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সর্বপ্রথম দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। উন্নয়নের সুফল পেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। আর এই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে ব্যক্তির থেকে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, জিডিপি’র এই ধারা অব্যাহত রাখতে সমূদ্র অর্থনীতির বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা করতে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক রয়েছেন বলে জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘পশ্চিম দিকে তাকিয়ে বড় হয়েছে সবাই। তাই পূব দিকে তাকানো বা দক্ষিণ দিকে তাকানো কিংবা আমাদের ঘরের কাছে যে সম্পদ, বাড়ির কাছে আর্শিনগর, সেটা কিন্তু আমরা অবহেলা করেছি। এই যে বিশাল বঙ্গোপসাগর, বিশাল সম্পদ। আর আমাদের বের হওয়ার পথ খুব সীমিত। আমাদের ভূমির তিন দিকে আছে ভারত ও মিয়ানমার। কিন্তু বের হওয়ার পথ উদার হলো দক্ষিণ দিকে বা সাগরের দিকে। শুধু বের হওয়ার জন্য নয়, আহরণের জন্য অর্থনৈতিকভাবে চমৎকার একটা সুযোগ আছে বলে জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে শুধু সমুদ্র নয়, এখানে পাথর আছে, উপকূল আছে, বন আছে, পেছনে পাহার আছে। ‘গ্যাস, এনার্জি, মাছ – কী নেই এখানে। ব্লু -ইকোনমির বিশাল একটা সম্ভাবনা আছে। এটা কাজে লাগাবার জন্য সবদিকে আমাদের মনপ্রাণ খুলতে হবে। আমরা পশ্চিমের দিকে তাকাবো, পাশাপাশি দক্ষিণে পূবেও ভারসাম্য করে তাকাতে হবে।’

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন মনে করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আর্থিক কারণ তো আছে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও একটা সমস্যা আছে। আমার নিজের একটা ধারণা হলো যে, আমরা পরাধীন ছিলাম। পরাধীনতার ফলগুলো আমরা ভোগ করছি নানাভাবে। আমাদের চলায়, বলায়, কথায়, আচরণে, বিশ্বাসে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাধীনতার থাবা একেবারে গেড়ে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের বাধা রয়েছে। এমনকি লকডাউন জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করতে গিয়েও আমরা অনেকগুলো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। এগুলোকে মোকাবেলা করেই আমাদেরকে রাজনীতি করতে হবে। উন্নয়নও করতে হবে। আমি মরে করি, উন্নয়নের প্রধান ডিফিক্যাস্টিস (বাধা) আমাদের কালচার। ট্রিমেন্ডাস নেগেটিভ (প্রচুর নেতিবাচক) একটা আবহাওয়া এখানে আছে।’

মূল প্রবন্ধে কাজী আহসান হাবিব বলেন, গত দশ বছরে দেশে সামগ্রিকভাবে মাছের উৎপাদন বাড়লেও সাগরের মাছের উৎপাদন বাড়েনি। ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে গুরুত্ব দেয়ার কারণে। সুতরাং সমুদ্রকেও যদি সেইভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়, তাহলে জিডিপিতেও অবদান রাখা সম্ভাব। সমুদ্র সম্পদকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে সমুদ্র অর্থনীতির ৫০ শতাংশ মাছ থেকে আহরণ করা সম্ভাব। একই সঙ্গে সমুদ্র জীববৈচিত্র রক্ষা করে সমুদ্র এবং উপকুলীয় পর্যটনকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার, কোরাল ধ্বংস, প্লাস্টিক ও কলকারখানার বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। বঙ্গপসাগরে শুন্য অক্সিজেন এলাকা তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য সকল দেশকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।

মোজাদ্দেদী আলফেসানী বলেন, সমুদ্র সীমা জয়ের পর থেকে নতুন করে কোনো কিছু করা হয়নি। সমুদ্র থেকে প্রতি বছর আট বিলিয়ন টন মাছ আহরণ করা হয়। এছাড়া ১৫ হাজার টন রাসায়নিক উৎপাদনের সামগ্রী আহরণ করা সম্ভব। এমনকি সমুদ্রে শৈবল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। এটাকে কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা করা দরকার।

সাজিদুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক শুধু মাত্র আইন করে নিষিদ্ধ করলেই কাজ হবে না। তার বিকল্প ব্যবস্থাও তৈরি করতে হবে।

আনিসুজ্জামান খান বলেন, প্রত্যেক উন্নয়ন প্রকল্পের আগে পরিবেশের ক্ষতিকারক দিকটি নিয়ে একটি মূল্যায়ন করা হয়। সে ক্ষেত্রে সাগর কেন্দ্রীক উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিকারক দিক থাকলেও তা সমাধান করতে হবে। সংরক্ষিত এলাকা রক্ষায় বাজেট বাড়াতে হবে। সমূদ্র অর্থনীতি নামে বাজেটে আলাদা হেড থাকলেও একক বরাদ্দ নেই। সাগরের প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় মেরিন স্পেশাল প্লানিং (এমএসপি) এবং ইএমএস তৈরি করে সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

ফোরকার আহমেদ বলেন একমাত্র কক্সবাজারকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখা সম্ভব। সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে সকলকে কাজ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/জেআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসারদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

বাপেক্স ও এস.সি ইউরো গ্যাস সিস্টেমস এস.আর.এল রোমানিয়ার মধ্যে চুক্তি

সোনার দাম কমলো ভরিতে ২১৩৯ টাকা

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর নতুন ৫টি কালেকশন বুথের উদ্বোধন

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন নুরুল ইসলাম মজুমদার

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু জাফর

সোনালী লাইফের অফিস ভাড়াকে ভবনের ক্রয়মূল্যের অগ্রিম পরিশোধ দেখানোর দাবি

ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ডিভাইস বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :