ঢাকা উত্তর কমিটির সম্পাদক পদ নিয়ে আপদে বিএনপি

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জুন ২০২০, ১১:০২ | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২০, ০৮:৩১

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করোনায় মারা যাওয়ার পর তার স্থলে নেতৃত্ব আনতে গিয়ে বেশ আপদে পড়েছে বিএনপি। সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকার মধ্যে তড়িঘড়ি করে একজনকে সাধারণ সম্পাদক করায় ক্ষুব্ধ মহানগরের নেতাকর্মীরা। আবার গঠণতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব না পাওয়ায় বঞ্চিত এক নেতা উচ্চ আদালতেই মীমাংসার পথ দেখছেন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এরমধ্যে সম্প্রতি করোনায় মারা যান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

কিন্তু তার মৃত্যুর শোক না কাটতেই ‘গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন’ করে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছে দলটি। অনেকটা তড়িঘড়ি করে বর্তমান সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমসহ দলের একটি পক্ষ তাদের পছন্দের একজনকে এই পদে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন অভিযোগ নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে বারবার কথা বলছেন ক্ষুদ্ধ নেতারা। তবে তারা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কোনা সদুত্তর না পেয়ে এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। একারণে বেশ আপদেই পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

আবার কোনোভাবেই যদি এই সিদ্ধান্ত বদল না হয় তাহলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদ পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন এক নেতা। গঠনতন্ত্র মতে সাধারণ সম্পাদকের অবর্তমানে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই নিয়ম না মেনে কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল আলীম নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর এখানেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের কেউ কেউ একে ‘পদ দখল’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন।

আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক কাজ করা হয়েছে। এভাবে হলে দল চলবে না। আমি মহাসচিবসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই দুঃখ প্রকাশ করছেন।’

‘এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আশা করি সমাধান পাবো। অন্যথায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দায়িত্ব পেতে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যেতে হলেও যাব। কিন্তু আমি অন্যায় মানবো না।’

এবিষয়ে জানতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্যের সঙ্গে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করলেও তারা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, এখন দলের সব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন মহাসচিব।

গত ৭ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিএনপি ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ হাসান মারা গেলে তার পদটি শূন্য হয়। ঢাকার প্রভাবশালী এই নেতার মৃত্যুতে নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া। এরমধ্যেই গত ২২ জুন উত্তরের সহ-সভাপতি আবদুল আলীম নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয় বিএনপি।

উত্তরের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সব কার্যক্রম বন্ধ, হাসান ভাই মারা যাওয়ার ৪০ দিনও শেষ হয়নি। এরমধ্যে বেআইনিভাবে হঠাৎ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করতে হলো কী প্রয়োজনে? কারা করলো এই কাজ। আমাদের কাছে জবাব দিতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এদিকে মহানগরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশে বসেই কমিটিতে সভাপতি হন আব্দুল কাইয়ুম। আহসানুল্লাহ হাসানও বিশেষ করে মিরপুর এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ায় তার বলয়ের কেউ যাতে দায়িত্ব না পান সেজন্য আগেভাগে নিজ বলয়ের একজনকে দায়িত্বে রেখেছেন কাইয়ুম। তবে অভিযোগের বিষয়ে বিদেশে থাকা আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নতুন দায়িত্ব পাওয়া নকি সহ-সভাপতি হলেও মাঠের রাজনীতিতে তার খুব বেশি প্রভাব নেই। মূলত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিটিউরিটি ফোর্সে (সিএসএফ) দায়িত্ব পালন করতেন। কাউয়ুমের ঘনিষ্ঠ বলে তিনি পরিচিত।

এসব বিষয়ে গত ২২ জুন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কথা বলেন আনোয়ারুজ্জামান। নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি মহাসচিব জানেন না বলে তাকে জানিয়েছেন।

আনোয়ারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মহাসচিব বলেছেন এ বিষয়টি তার নলেজে নেই। যদিও মহাসচিবের স্বাক্ষরেই মহানগর কমিটি অনুমোদন হয়েছে।’

আবদুল আলীম নকি অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে (চেয়ারপারসন) ইচ্ছে করলে প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব দিতে পারেন। আমাকেও দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে দোষের বা প্রশ্ন তোলার কি আছে।’

তবে বঞ্চিত নেতা আনোয়ার এ মাসের শেষ দিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। তার আশা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সত্যটা জানলে একটা সমাধান হবে। আর তাও যদি না হয় প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।

আনোয়ার বলেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারণ আমি তো সেই পদের আসল হকদার। পদেও আগানো আমি, একশোর বেশি মামলার আসামী। এ সরকারের আমলে চারবার জেল খেটেছি। আর কি দরকার পদ পাওয়ার জন্য?’

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘খবরটি আমরা জেনেছি। অনেকে সমাধানের অনুরোধ করেছেন। আসলে বিষয়টি অস্বস্তিকর।’

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

রুহুল আমিন হাওলাদারের বড় ভাই সুলতান আহমেদ মারা গেছেন

গণতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো: মির্জা ফখরুল

বাসায় মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস: প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :