ফরিদপুরে জনবান্ধব পুলিশ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এসপি আলিমুজ্জামান

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২০, ১২:৪২ | আপডেট: ২৬ জুন ২০২০, ১৫:৫২

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুর পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে জনবান্ধব পুলিশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই জেলায় কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, মাদক ও সন্ত্রাসী হতে দেওয়া হবে না। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান যেমন- বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ মানুষের হয়রানি এবং দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধেও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ সম্প্রতি ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, 'আমি অসৎ কোন কিছুর সঙ্গে নেই। সব ধরনের ভালো কাজের সঙ্গে আমি আছি।'
সরকার ঘোষিত মুজিব শতবর্ষে ফরিদপুর পুলিশকে সাধারণ মানুষের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে জানিয়ে মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশকে নিরোপরাধ মানুষের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মানুষের আস্থা এবং ভরসারস্থল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছি। থানায় এসে সেবা পেতে মানুষকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সাধারণ ডায়েরি করতে কেউ একটি টাকাও নিতে পারবে না। মামলা চালাতে টাকা লাগবে না। এভাবেই ফরিদপুর পুলিশ কাজ করছে।’  
এসপি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিসে দালাল বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানে মানুষ দালালের হস্তক্ষেপ ছাড়া সেবা নিতে পারছে। একইভাবে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সরকারি সেবা দপ্তরগুলোতে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হন ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ আছেন এক সময়ের মোটরশ্রমিক এই দুই ভাই। তাদের ত্রাসের রাজনীতির কাছে অসহায় ছিল জেলার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। গ্রেপ্তারের পর পরই  শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বরকতকে। একইসঙ্গে তার ভাই রুবেলকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের  সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ।
বর্তমানে এই দুইভাই বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। পরে আবারও অভিযান চলবে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আলিমুজ্জামান বলেন, ‘এই জেলায় (ফরিদপুর) যোগ দেবার পর থেকে মানুষকে সেবা দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। করোনাতেও মানবিক পুলিশ হিসেবে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সু-চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন সবই করছে পুলিশ। এছাড়া কর্মহীন নিন্মআয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণও করা হয়েছে।’
এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুলিশ সুপারের হুঁশিয়ারি ও তার কর্ম তৎপরতায় অনেকে সুবিধা করতে পারছিল না। একরকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল দুর্বৃত্তরা। এজন্য তাকে অন্যত্র বদলি করে দিতে কয়েক কোটি টাকা উৎকোচ হিসেবে ব্যয় করার অভিযোগ আছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ও হয়েছিল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ে।
গতবছরের ২৫ জুলাই পুলিশের এই কর্মকর্তা এসপি হিসেবে ফরিদপুরে যোগদেন। এর আগে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। সরকার বিরোধী প্রোপাগান্ডা, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনের সময় ছড়ানো বিভিন্ন গুজব ঠেকাতে তিনি ব্যাপক অবদান রাখেন। মেধাবি, সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (সেবা)।
জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন কাজ করে ফরিদপুরে জনবান্ধব পুলিশ সুপার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন আলিমুজ্জামান। শহরের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি থাকলেও বর্তমানে সেটার পরিধি বাড়াতে কাজ করছেন তিনি। এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এসএস/এইচএফ)