নীলফামারীতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় ছয় শতাধিক বাড়ি

আবু হাসান শেখ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২০, ২১:৩৭

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙনে একটি ব্রিজ, দুটি রাস্তা, একটি এতিমখানা-মাদ্রাসা, দুটি মসজিদসহ ছয় শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়ায় বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে অনেকের কাটছে ঘুমহীন রাত।

ক’দিনের টানা বষর্ণে হঠাৎ চারালকাটা ও ধাইজান নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা তেলীপাড়া গ্রামে নদী ভাঙন বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছে। যেকোন মুহূর্তে নদীগর্ভে যেতে পারে এখানকার ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি। এ গ্রামে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ১০০টি বাড়ি ঘর। পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুগিপাড়ায় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০টি ঘর বাড়ি। একই ইউনিয়নের রুপালী কেশবা গ্রামে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা-এতিমখানাসহ ৪০টি ঘর বাড়ি নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।

কেশবা ময়দানপাড়া গ্রামে ঈদগাহ্ মাঠসহ ১০০টি ঘর বাড়িও পড়েছে নদী ভাঙনের কবলে। গদা বজলার মেম্বার বাড়ির সামনে বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ পাঁকা রাস্তা, সংলগ্ন মসজিদসহ ৪০টি ঘর বাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে কয়েক হাজার লোকের চলাচলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এমনকি বড়ভিটা ইউনিয়নের সাথে কিশোরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে। এদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদের কাছাকাছি ভাঙন আসায় মসজিদটিসহ ১০টি ঘর বাড়ি নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী অবস্থিত সরঞ্জাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও হুমকির মুখে পড়বে।

একই ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদখানা চাড়ালকাটা নদীর উপরে সারোভাসা ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে রাস্তাটি ভেঙে যেতে পারে। ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি নদীগর্ভে গেলে চাঁদখানা ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের কেল্লাবাড়ী ও তারাগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে যাবে। এছাড়া ওই গ্রামের ২০০ টি ঘর বাড়ি পড়েছেও ভাঙনের হুমকিতে।

এদিকে সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে নদী ভাঙণ মসজিদের কাছাকাছি আসায় এলাকাবাসী নিজেরাই বাঁশ দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন করায় ভাঙন সাময়িক বন্ধ করা গেছে। তারা জানান- সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদ ভয়াবহ হুমকিতে রয়েছে। এখানে বাড়ি ঘরসহ একটি প্রাইমারি স্কুলের কাছাকাছি ভাঙন এসেছে।

কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির তেলীপাড়া গ্রামের জেসমিন, মনজিলা, আঞ্জুয়ারা বেগম জানান- নদী ভাঙন ঘরের কাছাকাছি এসেছে। যে কোন সময় বাড়ি ঘর নদীতে ভেসে যেতে পারে। রাতে আমরা ঘুম পারতে পারছি না। কখন বাড়ি ঘর নদীগর্ভে যাবে সে আতংকে। তারা জরুরীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে ঘর বাড়ি রক্ষার দাবী করেন।

একই গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান- আমার ১০ শতক জমি ছিল। ইতোমধ্যে ৯ শতক জমি নদীগর্ভে গেছে। অবশিষ্ট ১ শতক জমির উপর বাড়ি আছে। সেটিও নদীতে গেলে আমার বসবাস করার কোন জায়গায় থাকবে না।

রুপালী কেশবা গ্রামবাসী জানান- নদী ভাঙন রোধে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসাসহ এখানে ৪০টি বাড়ি ঘর নদীগর্ভে চলে যাবে। অন্যদিকে কেশবা ময়দানপাড়াবাসী জানান- নদী ভাঙন যেভাবে শুরু হয়েছে এতে বাড়ি ঘর ও ঈদগাহ মাঠটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

গদা গ্রামবাসী জানান- বজলার মেম্বারের বাড়ী সংলগ্ন নদী ভাঙনে বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ রাস্তাটি হুমকীর মুখে পড়েছে। নদী ভাঙনে রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে কয়েক হাজার লোকের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এছাড়া মসজিদটি পড়েছে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে। রাস্তা, মসজিদ ও বাড়ী ঘর ভাঙন রোধে জরুরীভাবে বাঁধ নিমার্ণের দাবী করেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী আরও জানান- আগে নদী ভাঙন এত ছিল না। ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী খনন করার ফলে এ ভানণ ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। তারা আরও বলেন- ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী খনন করে বালু দু’ সাইডে রাখায় ক’দিনের বর্ষণে বালুগুলো নদীতে পড়ে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙনে বালুগুলো দিয়ে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ভাঙন আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে।

চাঁদখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদখানা গ্রামবাসী জানান- নদী ভাঙতে ভাঙতে সকাল বেলা সারোভাসা ব্রিজের গোড়ার দিকে ভাঙন এসেছে। ব্রিজের গোড়াসহ ব্রিজ সংযোগ রাস্তাটি নদী ভাঙনের কবলে যে কোন সময় পড়তে পারে। এটি ভেঙ্গে পড়লে ব্রিজটি যেমন হুমকীর মুখে পড়বে অন্যদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের কেল্লাবাড়ী-তারাগঞ্জের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

চাঁদখানা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি বলেন, সারোভাসা ব্রিজের গোড়াসহ চাঁদখানা ইউনিয়েনের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তাটি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন ব্রিজের গোড়ার কাছাকাছি এসেছে। এছাড়া এ গ্রামের ২০০ টি ঘর বাড়ির নদী ভাঙনে নদীগর্ভে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

খবর পেয়ে নদী ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম বারী পাইলট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাঁদখানা ইউনিয়নের সারোভাসা ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি, গদা রাস্তা, এতিমখানা একটি, মসজিদ দুটিসহ ছয় শতাধিক বাড়ি ঘর সাতটি পয়েন্টে নদীগর্ভে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখ্খারুল সাহেব আমাদের সঙ্গে সব এলাকা দেখেছেন। তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদী ভাঙন থেকে রাস্তা, ব্রিজ, প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ঝুঁকিপূর্ণ ঘর বাড়ি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :