জীবন না জীবিকা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

আবু বকর সিদ্দিক
 | প্রকাশিত : ২৭ জুন ২০২০, ১২:৪০

সারা পৃথিবী জুড়ে একের পর এক দেশ লকডাউন হয়ে আছে। মানুষ করোনার সাথে সংগ্রাম করেও কোনো রকম সুবিধা না করতে পেরে অনেক দেশ ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশ সীমিত আকারে লকডাউন তুলে দিয়েছে।

দীর্ঘ সময় লকডাউন থাকার ফলে যে কোনো দেশের জন্য অর্থনৈতিক বিশাল ক্ষতি হবার সম্ভাবনা তো আছেই। এ যাবত অনেক দেশ প্রায় দুই মাস থেকে পুরোপুরি লকডাউন মেনে চলছে। সমস্যা যে জায়গায় হচ্ছে মানুষের সঞ্চয় করে রাখা অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঘরে থাকার কারণে মানুষ মানসিক নানারকম সমস্যায় ভুগছে। আজকাল মানসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে দীর্ঘদিন থাকার ফলে অনেক মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নাও ফিরতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে ফ্রান্স পর্তুগাল ইতালি জার্মানির শহর অনেক বেশি সীমিত আকারে লকডাউন তুলে দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে জার্মানির যে শহর গুলোতে লকডাউন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেসব শহরে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে রাষ্ট্রপ্রধানরা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সকল মানুষ চিন্তায় পড়ে গেছেন আদৌ পৃথিবীর কি সুস্থ হতে যাচ্ছে! কারো কাছে কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কোনো কিছুই নেই।

এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মানুষজন। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে মৃত মানুষের সংখ্যা। একদিকে আতঙ্কগ্রস্থ মানুষ কি হবে এভাবে চলতে থাকলে অন্যদিকে লাখ লাখ পরিবার দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই অনেক সাধারণ মানুষ রয়েছেন যাদের আয় এবং আয়ের উৎস অনেক কম। তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে নিজেরা চলেন এবং পারিবারিক সকল রকমের দায়িত্ব তাদের নিজেরই বহন করেন। এইসব মানুষদের জন্য দীর্ঘ সময় লক ডাউন একটি বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা না পারছেন মানুষের কাছে হাত পাততে না পারছেন বাসা বাড়ি থেকে বের হয়ে কোনো জায়গায় কাজে যেতে।

গত কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশে সীমিত আকারে শপিং মল এবং গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ পক্ষে বলছেন কেউ কেউ আবার এটার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। দিন শেষে প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কি এভাবে না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। আধতে প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ এভাবে কতদিন লকডাউন এ থাকবে!

মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত সবার জন্যই করোনা একটি বিপদের নাম। যাদের ব্যবসা বাণিজ্য ছিল তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। যারা নিজে আয় করে পরিবার পরিচালনা করেন তাদের দিন তো দুঃসহনীয় অবস্থায় চলছে। নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

একদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে করোনা খুব শীঘ্রই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না। অন্যদিকে ডাক্তাররা বলছেন "নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। ঘরে থাকুন। নিজে নিরাপদ থাকুন বাসার সবাইকে নিরাপদ রাখুন।" মানুষ প্রথম দিকে খুব নিয়ম কানুন মেনে চললেও লকডাউন দীর্ঘদিন হওয়ার কারণে এখন ইচ্ছে করেই অনেকেই নিজেদের কর্মস্থলে ফিরছে এবং অনেকে কর্মস্থলে ফেরার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছেন।

জীবন না জীবিকা একটার চেয়ে অন্যটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেঁচে থাকতে হলে জীবিকার প্রয়োজন আছে। আবার জীবিকার জন্য বের হয়ে গেলে যদি মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রামক যদি বেড়ে যায় তাহলে জীবনই থাকবে না মানুষ আছে দুটানায়। কি করবে মানুষ!

সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশ দেখা যাচ্ছে যে প্রতিদিন ৩ হাজারেরও অধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা বাধ্য হয়ে সবকিছু খুলে দিয়েছেন। আমরা জানিনা আদৌ এ পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিবে। কেননা একদিকে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যদিকে হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে মৃত লাশের সংখ্যা।

সবচেয়ে সমস্যা যে জায়গায় অর্থনৈতিক যে দৈন্যদশার তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। যেহেতু দেখা যাচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পুরো পৃথিবীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত সবকিছু বন্ধ থাকার ফলে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

এই দুঃসহনীয় সময় থেকে দ্রুত সম্ভব আমাদের বের হয়ে আসার জন্য দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবীদের সমন্বিত প্রয়াস এবং চিন্তা চেতনা লালন করে আমাদেরকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এত এত দীর্ঘদিন লকডাউন হয়ে থাকা কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব না।

দেশের অর্থনীতিবিদ এবং উপর মহলের ব্যক্তিবর্গের সমন্বিত প্রয়াসে আমাদের একটা নির্দিষ্টলক্ষ্য নির্ধারণ করে অর্থনৈতিক যে দেউলিয়া তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে করো না এবং এই দীর্ঘ দিনের ক্ষতি কারো একার নয় আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা এবং প্রায়শই পারে এই মহামারি থেকে উত্তরণ হতে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। যদি কোনো একটা অলৌকিক ইশারায় পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় হয় তবে মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচে। করোনা বিদায় হোক। মানুষ আবার কাজে ফিরুক। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমরা যদি আগেকার জীবনে ফিরে যেতে চাই সেটা হয়তোবা আমাদের জন্য অনেকটা সময়ের ব্যাপার। সে জন্য আমাদেরকে ধৈর্য সহিত কাজ করে যেতে হবে। নিশ্চয়ই মনে রাখতে হবে যে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদেরকে যথেষ্ট সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নিজেদের পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের অতি সচেতন হওয়া কর্তব্য। পরিবারের যারা ষাটোর্ধ্ব মানুষ আছেন তাদের দেখভালের বিষয়ে আমাদেরকে অতি সচেতন হওয়া জরুরি এবং শিশুরা যাতে ঘরের বাইরে যেতে না পারে সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। পৃথিবীর প্রতিটা জীবিত আত্মা নিরাপদ থাকুক এটাই একান্ত কামনা।

লেখক: শিক্ষার্থী

ঢাকাটাইমস/২৭জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :