করোনাকালে র‌্যাব-২ এর ভূমিকা

জাহিদ আহসান
| আপডেট : ২৭ জুন ২০২০, ১৭:২৯ | প্রকাশিত : ২৭ জুন ২০২০, ১৩:৪৪

রাজধানীর অন্যতম রেড জোন (অধিকতর কোভিড-১৯) আক্রান্ত এলাকা মোহাম্মদপুরে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২। এ যেন ‘গ্রিন ভ্যালি ইন রেড জোন’। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস এর সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা ও নেতৃত্বের ফলে অত্র ব্যাটালিয়নের আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় শূণ্য হতে চলেছে তেমনি অত্র ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকাতেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান যার অন্যতম কারণ অধিনায়ক র‌্যাব-২ এর গৃহীত বহুমূখী কার্যক্রম যেমন- জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, ওয়াশিং পয়েন্ট স্থাপন, চেক পোস্ট পরিচালনা করা, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ পাশাপাশি হাজারো ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ যা এই করোনা দূর্যোগ কালে অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আর্শীবাদ স্বরূপ। অধিনায়ক র‌্যাব-২ লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস এখন দায়িত্বপূর্ণ এলাকার মানুষের কাছে এখন বিপদের বন্ধু, দুঃসময়ের কান্ডারি কারণ তার কাছ থেকে কেউ খালি হাতে ফিরে যায়নি আর হয়তো এজন্যই ব্যাটালিয়নের গেটে প্রায়শই দুঃস্থ মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায়।

মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাস বাংলাদেশে মহামারি রূপ ধারণ করছে। বাংলাদেশে ০৮ মার্চ ২০২০ সালে প্রথম মানব দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। শুরু হতে অদ্যাবধি করোনা ভাইরাস দেশের প্রায় ১,২০,০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ১৫শ ছাড়িয়েছে ।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর হতে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দেশের জনগণের সেবায় অন্যান্য সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বাহিনী পাশাপাশি র‌্যাবও এই ভাইরাস প্রতিরোধে শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র‌্যাবের নিজস্ব অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জনগণকে এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষার নিমিত্তে জনগণের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের উপায় সংক্রান্তে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রম ও পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে র‌্যাব-২ এর সর্বমোট প্রায় ৬২ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছিল। যাদের মধ্যে ৫৩ জনের বেশি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে এবং করোনা প্রতিরোধে এখন দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস অধিনায়ক, র‌্যাব-২ এর নেতৃত্বে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জনগণের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধিসহ দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে ত্রাণ সহায়তা, মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার বিতরণ করে আসছে। ব্যাটালিয়ন এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ যে সকল স্থানে জনসমাগম বেশি হয় সেসব স্থানে ব্যাটালিয়ন এর তত্ত্বাবধানে ওয়াশিং পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ লিফলেট বিতরণকরা হচ্ছে। অধিনায়ক, র‌্যাব-২ এর বলিষ্ট এবং সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশে লকডাউন পরিস্থিতিতে জরুরি পণ্য সামগ্রীর সাপ্লাই চেন সচল রাখতে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরন্তন কাজ করে আসছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বিস্তাররোধে মাঠ পর্যায়ে ব্যাটালিয়নের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেই স্বপরিবারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনি করোনা ভাইরাসে স্বপরিবারে আক্রান্ত হওয়ার পরও দেশ ও জনগণের স্বার্থে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা ভাইরাস রোধকল্পে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সবসময় তার সুদক্ষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গুরুত্বর রোগীদের সহায়তার জন্য প্লাজমা প্রদানের জন্য ঘোষণা প্রদান করেন। তিনি সুস্থ হয়ে দেশের জনগণের কাছে নিজের দায়বদ্ধতার তাগিদে পুনরায় নিজের দায়িত্বভার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সেবা প্রদান করে আসছেন। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরকে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহ তালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সবসময় নিজের মনবল ধরে রাখতে এবং পাশাপাশি ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের অনুরোধ করেন। তিনি সকলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার এর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা এবং অপ্রয়োজনে বাহিরে ঘোরাঘুরি না করার জন্য আহ্বান করেন।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২, দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে মহামারি করোনায় দেশের আপামর জনসাধারণকে রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্পিত সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের জন্য নিয়োজিত আছে। র‌্যাব-২ এর সকল সদস্য তাদের কঠোর পরিশ্রম নিরলস প্রচেষ্টা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার জন্য জনসচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ, নিয়মিত টহল, সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত কল্পে মাইকিং সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে র‌্যাবে কর্মরত অনেক অফিসার্স ও অন্যান্য পদবীর র‌্যাব সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে । র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ ভৌগলিকভাবে রাজধানীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহ ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, তেঁজগাও, আদবর, শেরেবাংলা নগর থানাসমূহ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা। অত্র ব্যাটলিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে প্রায় পনের/বিশ লক্ষ মানুষ। করোনা মহামারি কালে এই বিশাল জনসংখ্যার মাঝে র‌্যাব-সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ এবং ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে র‌্যাব-ভূয়শী প্রশংসার দাবি রাখে এমন অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং চলমান রয়েছে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস এর নেতৃত্বে ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হাজার হাজার গরীর ও দুস্থ্য পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ত্রাণবিতরণ কার্যক্রমে অধিনায়ক মহোদয়ের নির্দেশে সর্বত্র সহযোগিতা করা হয়। উল্লেখ্য যে, বর্তমান পরিস্থিতিতেও গরিব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস এর নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ এ কর্মরত সকল সদস্যকে সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সামগ্রী (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লোফস, মাস্ক, পিপিই, ফেস শিল্ড) বিতরণ করা হয়। এছাড়াও অত্র ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জনসাধারণের মাঝে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস এর নির্দেশক্রমে ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার জনসমাগম স্থানে বেশ কয়েকটি হাত ধৌতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাটালিয়নের প্রধান ফটকের প্রবেশ পথে একটি জীবাণূ দূষণমুক্ত করণ দরজা স্থাপন ও ফোর্স ব্যারাক এবং অফিস এলাকায় হাত ধৌতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত গুজব প্রতিরোধে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সাইবার মনিটরিং সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাইবার মনিটরিং সেল কর্তৃক নিয়মিত বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং ফেইসবুক আইডি চিহ্নিত করে গুজব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনা ভাইরাস এর মহামারী কালে মাদক ব্যবসায়ীদের অভিনব কায়দায় মাদক চোরাচালান রোধকল্পে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ এর অভিযান চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে অধিনায়কের বলিষ্ট নেতৃত্বে বিপুল পরিমান অবৈধ গাজা, হিরোইন, ইয়াবা, দেশি ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। করোন ভাইরাস এর সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর শত শত সদস্য আক্রান্ত হন। এমনকি লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস, অধিনায়ক র‌্যাব-২ মহোদয় স্বপরিবারে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং আক্রান্ত অবস্থায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলিষ্ঠ ভাবে। এছাড়াও ব্যাটালিয়নের বিএ-৮৪৩২ মেজর এইচ এম পারভেজ আরেফিন, ইবি কোম্পানি কমান্ডার সিপিসি-১সহ অন্যান্য পদবীসহ প্সর্বমোট প্রায় ৬২ জন সদস্যয কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৩ জনের বেশি র‌্যাব সদস্য ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে ব্যাটালিয়নে যোগদান করে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, এসইউপি, পিপিএম, পিবিজিএমএস, অধিনায়ক, র‌্যাব-২ করোনা প্রতিরোধের জন্য, প্রাদুর্ভাব হ্রাসের জন্য যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার জন্যই শুধু তৎপর না সেই সাথে যে সকল সদস্য আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত তৎপর। তিনি প্রতিনিয়ত আক্রান্ত সদস্যদের ও তাদের পরিবারের খোজ খবর নিচ্ছেন। ঢাকাস্থ ব্যাটালিয়ন সমূহের মধ্যে র‌্যাব-২ এর সদস্যদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এবং দায়িত্বপূর্ন এলাকার মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান হওয়ার পিছনে অত্র ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের দিক নির্দেশনা অনুসরণীয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, র‌্যাব-২ এর গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :