কবিতা
ফ্লয়েড কুডন্ট ব্রীদ
প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২০, ১৩:৫৮
সাহেবান ভঙ্গিয়ান মধ্যবয়স্ক এক পুলিশ অফিসারের
তূর্যনিনাদ ইশারায় আমি হকচকিয়ে উঠলাম!
বোধগম্যতার পূর্বেই হাতকড়ার নিপুণ কারসাজিতে,
আমার পদযুগলের সাথে সাথে দৌরাত্ম্য জীবনের চঞ্চলতাটুকুও স্থিরচিত্ত ধারন করল,
চাকরিচ্যুত আমার আটপৌরে কর্মমুখরতা ঘিরে শুধুই সন্তানাদির আবদারকাতর চাহনি।
"হোয়াট হ্যাপেন্ড,স্যার?
হোয়াই ডিড ইউ অ্যারেস্ট মি?
প্লিজ টেল মি...!"
শঙ্কা ও কাতরতা মেশানো প্রশ্নবিদ্ধ সরল চোখযুগল বিছিয়ে তাকাতেই;
তাচ্ছিল্যকর মুখভঙ্গি ও ক্রোধান্বিত চোখের ভর্ৎসনায় আমি আঁতকে উঠলাম!
মনে হলো যেন নর্দমার পঁচা দুর্গন্ধে নাক সিঁটকিয়ে;
গা গুলানো ঢেকুর তুলে তির্যকভাবে থুথু ছুঁড়ে মারলেন আমার গায়ে!
মুহূর্তেই যেন খোলা আকাশে উড়ার স্বপ্নে বিভোর
এক পাখি ডানা মেলতেই তার পেখম ছিঁড়ে পালকগুলো
ঝড়ের গতিতে খসে পড়ার সাথে সাথে অভিযোগ তুলল,
"তোমার চামড়ায় এখনো খাঁচায় বন্দীত্বের ছাপ!"
দুমড়ানো মোচড়ানো অন্তস্হলের মুষ্ঠিযুদ্ধে বাকশক্তির কাছে বাকইচ্ছেরা কুপোকাত হয়ে গেল।
"ওয়াট ওয়াজ মাই ফল্ট,স্যার?
প্লীজ টেল মি!
প্লীজ ইক্সপ্লেইন মি!"
প্রত্যুত্তর না করে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় হাসলেন!
যখন তার চোখের শাণিত ইশারায় অনুগত হয়ে
রাস্তার কৃষ্ণ পিচের উপর আমার আফ্রিকান দেহখানি ছড়িয়ে দিতে লাগলাম,
তখন তার তিরস্কার মুখর মুখভঙ্গি ও বিদ্রুপ মাখা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষ্রিপ্পতায় তীরের মত বিঁধে যেতে লাগল,
ডু আই হ্যাভ টু লুক অ্যাট ইওর ব্ল্যাক আগলি ফেইস নাউ?
টার্ন ইট ব্যাক!
আমার ভেতরের হাহাকারকে গলধকরন করে ক্রন্দন হয়ে টলে পড়ছিল বর্ণহীন বিষাদ।
আমার ঘাড়ে থেঁতলানো ব্যথাভরে অনুমান করালাম,
তার সম্ভ্রান্ত চামড়াকে আমার অচ্ছুৎ চামড়া থেকে একটুকরো কাপড় দিয়ে আলাদা রেখে হাঁটু সেঁটে দিয়েছে।
তার বর্ণবিদ্বেষী মনোভবটি প্রশ্বাসের বাতাসে মিশে গিয়ে,
আমার নিস্পাপ বর্ণাজ্ঞ হৃৎপিন্ডটিকে সাম্প্রদায়িকতার ধারালো ছুঁরি দিয়ে কেটে জাতি,ধর্ম,বর্ণ,ভাষার
নামে আলাদা করতে চাইল।
তার শ্বেত অমৃতের বিষাক্ততা আমার শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যেতে থাকল,
বর্ণ অবজ্ঞার খেসারত দিতে আমার প্রিয় কৃষ্ণ অঙ্গগুলো নিষ্প্রাণ হতে লাগল,
তন্মধ্যেই আমার চোখের সামনে ভূলুণ্ঠিত হল মার্টিন লুথারের-
"আই হ্যাভ এ ড্রিম!"
সভ্য আমেরিকার খোলা রাস্তায় বর্ণবাদীতার লোলুপ কামনা বিবস্ত্র করল
নেলসন মেন্ডেলার বর্ণ বিরোধী চুক্তিপত্রটি,
ইজ্জত নিবারণের বস্ত্র লোপাটের দাবানলে ধূলিসাৎ হলো
তার ২৭ বছরের কারাবন্দী ইতিহাস!
আমার সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করতে পৃথিবী আধার আয়োজন করল,
তার মধ্যে আলগোছে ভেসে আসতে লাগল
ফুটফুটে কৃষ্ণ বর্ণের স্নেহকাতর অবয়বগুলো।
শ্বেত চামড়ায় মোড়ানো বহিঃকর্ণ ভেদ করে,
কৃষ্ণবর্ণের সুড়ঙ্গ বেয়ে অন্তঃকর্ণে পৌঁছাল কি না
তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই;
তীব্র যন্ত্রনার প্ররোচনায় পড়ে প্রাণপণ চেষ্টায় বলতে লাগলাম,
"আই কান্ট ব্রীদ
আই কান্ট ব্রীদ
আই কান্ট ব্রীদ"