চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বারডেমে চিকিৎসকদের আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ১৮:৫৮ | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২০, ১৬:৩৬

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নিজেদের পেশার নিশ্চয়তা চাইছেন বারডেম হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা। চাকরি স্থায়ী করণের দাবিতে রবিবার সকাল থেকে হাসপাতেলের ভেতরে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, মহামারীর শুরু থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে পিপিই দেয়া হলেও তা ধুয়ে পরতে বলে। এতে অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানেও অনীহা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বারবার বিভিন্ন দাবির কথা জানিয়েও সুরাহা মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।

আন্দোলনকারী চিকিৎসক ডাক্তার সজীব ঢাকা টাইমসকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা এখানে কর্মরত চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রীর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। আমরা কোনো ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী পাচ্ছিলাম না। এক, দেড় মাস পর আমাদেরকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই দেয়া হয়। পিপিইগুলো আমাদেরকে ধুয়ে ধুয়ে পড়তে বলে। এর ফলে আমাদের ১০ থেকে ১৫ জন ডাক্তার আক্রান্ত হন। কয়েকজন ডাক্তারকে এখানে ভর্তি করা হলে, যখন তাদের কোভিড টেস্ট পজেটিভ আসে, তখন তাদেরকে এখান থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর আমরা কর্তৃপক্ষকে আমাদের দাবিগুলো জানাই। তারা আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে আমাদের বেতন কর্তন করেন। আমাদের বোনাস শর্ট (কমিয়ে) করে দেয়। আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই এটা করে। অন্যান্য জায়গায় ডাক্তারদের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, সেখানে আমাদের বারডেম এগুলো কিছুই করেনি।‘

সজীব বলেন, ‘১০ তারিখে আবেদনপত্র দেয়া হয়েছে। ২০ তারিখে বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের সভায় স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়। তারা এবিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। ২৭ তারিখ তাদের একটি মিটিং হয়। মিটিং হওয়ার পর তারা বলে, তারা আমাদের দাবির বিষয়ে কিছু বলতে পারবে না। এ দাবি বাস্তবায়ন হতে দুই মাসও লাগতে পারে, দুই বছরও লাগতে পারে। তারা এবিষয়ে কিছু জানে না।‘

রবিবার সকালের ঘটনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ সকালে আমরা পাঁচ দফা দাবিকে এক দফায় নিয়ে আসি। আমরা আমাদের চাকরি স্থায়ী করণের দাবি জানিয়ে একটি স্বারকলিপি দেই। যেহেতু তারা আমাদের কোনো দাবি মানতে পারছে না। তাই আমরা অন্তত আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা চাই। আমরা তিনজন ডাক্তার স্মারকলিপি দিতে গেলে তারা তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে আমাদের বের করে দেয়। পরে তারা পুলিশ প্রশাসন ডাকে। পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা স্মারকলিপি দিতে সক্ষম হই। এখন আমরা ১০০ জন ডাক্তার আমাদের দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান করছি।‘

স্মারক লিপিতে বলা হয়, যেসব আরএমএ/সহকারী রেজিস্ট্রার/এমএ অস্থায়ী বৃন্দ আক্রান্ত হচ্ছেন। যদি তাদের মৃত্যু হয় তাহলে তাদের পরিবার কিভাবে চলবে? যদি তার ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কে তার দায়ভার নেবে? বারডেম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো একটা সময় পরেই তাদের পদ থেকে অপসারণ করবেন। তাদের এই স্থায়ী বিকলঙ্গতা নিয়ে অন্য কোনো চাকরি পাবেন এই নিশ্চয়তা কে দেবে? এছাড়া বারডেম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন চিকিৎসকগণ চলে যান তার স্থলাভিষিক্ত হন তার থেকে কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক। ফলে সবসময়ই বারডেমের মতো হাসপাতালে দক্ষ চিকিৎসকের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার পথে বড় অন্তরায়।‘

‘এই সময়ে সারা বিশ্বে ডাক্তারদের চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও এক সপ্তাহের নোটিশে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের লাইফ ইন্সুরেন্স দিয়েছেন। এছাড়া আরও দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এর উল্টো পথে চলছে। এমতাবস্থায় আমরা বৈষম্যমূলক ও অভিশপ্ত আরএমএ পদ বিলুপ্ত করে সকল আরএমএ/সহকারী রেজিস্ট্রার/এমএ অস্থায়ী চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানাচ্ছি। যাতে কর্মক্ষেত্রে সমতা, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, যার মাধ্যমে আমরা বারডেম জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের সার্বক্ষণিক উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারি।‘

ঢাকাটাইমস/২৮জুন/কারই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :