একে একে উজ্জ্বল নক্ষত্র হারাচ্ছি…

মো. নূর উদ্দীন
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২০, ১২:২২

আর নিতে পারছি না আল্লাহ। প্রথমে এহসান স্যার আর এখন সমীর স্যার। আজ শুধু চট্রগ্রাম না বরং পুরো জাতী এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল। কেউ যদি না জানেন উনি কে ছিলেন, কি ছিলেন তবে রোগী হিসেবে তার চেয়ে অভাগা আর কেউ নন।

ডাক্তার হওয়ার পর প্রথম উনার সাথে দেখা চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। সুন্দর, স্মার্ট, মিষ্টভাষী, কেয়ারিং প্রথম দেখাতেই ভাললেগে যাওয়ার মতো একজন স্যার। প্রথম দিনেই নাম জিগ্যেস করলেন এর পর আর কখনও ভুলেন নি। আত্নীয় স্বজন, রোগীকে রেফার করলে উনারা প্রচুর সুনাম করতেন স্যারের, এতটুকুই।

প্রথম উনার সাথে কাজ করার সুযোগ পাই ২০১১ সালে। আমার দাদী যখন ৯৫ বছর বয়সে # Neck femar নিয়ে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হন। উনার কাজ দেখে আমি রিতিমত মুগ্ধ। দাদী যতদিন ছিলেন প্রতিদিনই সকাল সন্ধ্যা দেখতে আসতেন। আসার সময় বিল দিতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম। হিসেবে মিলছিলো না। পরে জানলাম উনার টিম চার্জ ৬৫০০০ টাকা পুরোটাই complimentary. মানে একটাকাও নিবেন না। আমি স্যারকে অনেক অনুরোধ করলাম অন্তত কিছু হলেও নিতে। উনার সেই হাসি মুখের মিষ্টি ভাষায় মৃদু বকা খেয়ে চলে আসলাম।

দুই বছর পর শশুর ভর্তি হলেন olecranon # with elbow dislocation due to road traffic accident নিয়ে এই বারও সেইম কাহিনী ৭০০০০ টাকা টিম চার্জ তাও complimentary. স্যারকে দুঃখ করে বলতাম স্যার আপনার অসাধারণ কাজ আর আন্তরিকতার জন্য আপনার কাছে আপনজন আর রোগীদের নিয়ে আসি আর আপনি কিনা প্

রতিবারই আমাকে লজ্জায় ফেলেন। এর পর নানী আর ভাগ্নের অপারেশন এ কিছু চার্জ নিলেন ঠিকই কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সেটা ও উনার কাজের মান বিচারে অতি নগন্য। যেকোন সময় যেকোনো বিপদে ফোন দেওয়া মাত্রই চিনে ফেলতেন। কখনও নিরাস করেন নি। মেডিকেল এ কাজ শুরু করার পর বুঝলাম উনি শুধু আমার ক্ষেত্রে না সবার জন্যই এমনটা ছিলেন। ডাক্তারদের কাছে একজন আইকন আর রোগীদের কাছে পরম নির্ভরতার ভরসাস্থল।

আম্মু প্রায় স্যার এর কথা জিজ্ঞেস করেন। বিশেষ করে এহসান স্যার এর মৃত্যুর পর আম্মু অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন। সমির স্যারকে নিয়ে কেন জানি উনার দুঃচিন্তা বেড়ে গেছে। আমার সাথে দেখা হলে ফোন করলেই এমন কোনো দিন নাই উনি স্যার এর কথা জিজ্ঞেস করেন নি। পরশু আমি জবাব দিয়েছিলাম স্যারের ২ টা ফুসফুস ই fibrosed। অর্থোপেডিস এর অপারেশনগুলোতে অনেক শক্তি লাগে। উনি বেছে থাকলেও মনে হয় আর অপারেশন করতে পারবেন না। আম্মু জবাব দিলেন এমন ডাক্তারদের অপারেশন করতে হয় না। পাশে বসে থকলেও রোগী ভাল হয়ে যায়। এতটা আস্থা ছিল উনার উপর।

জানিনা আল্লাহ আমাদের জন্য কি নির্ধারণ করে রেখেছেন। আস্থার জায়গাগুলো একে একে হারিয়ে ফেলছি। কিছুদিন ধরে চিন্তা করছিলাম আমার প্রিয় ডাক্তারদের নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখব। যেন জীবিত অবস্থায় উনাদের সম্পর্কে মানুষ তাদের না জানা কথাগুলো জানেন। তাদের ভাল খারাপ অভিজ্ঞতা গুলো সেয়ার করেন। দুনিয়াতেই উনাদের প্রাপ্য সম্মান টুকু পান। কিন্তু এখন আর সাহসে কুলাচ্ছে না। অজানা আশঙ্কা মনে ভর করছে। আল্লাহ আমার মত হাজারো ভালবাসার মানুষের মন কামনা পুর্ন করুন। স্যারকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

লেখক: চিকিৎসক

ঢাকাটাইমস/২৯জুন/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :