জামালপুরে লক্ষাধিক পানিবন্দির দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২০, ২০:৪৭

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জামালপুরে ক্রমাগত বাড়ছে যমুনার পানি। এতে নদীপাড়সহ নতুন এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে দুই শিশু।

সর্বশেষ খবর পর্যন্ত যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান।

বন্যা কবলিত ইসলামপুর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। এই সময় কথা হয় ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়ার ৪৮ বছরের বয়সী আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রমাগত বেড়ে চলছে বন্যার পানি। তীব্র স্রোতে ঘরে টিকতে না পেরে মেলান্দহের দুরমুঠে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন আশ্রয় নিতে।

একই উপজেলার উলিয়ার ৫৫ বছর বয়সী আব্দুস সামাদ বলেন, গতবারের তুলনায় এবার স্রোত অনেক বেশি। এতে যখন তখন তার বাড়ি ভেসে যেতে পারে। তাই বাড়ির মায়া ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন।

চিনাডুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, চিনাডুলি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। এসব এলাকার চার হাজার পরিবারের প্রায় আট হাজার মানুষ পানিবন্দি। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও পৌর এলাকা, চিকাজানি, চুকাইবাড়ি, ডাংধরা ও বাহাদুরাবাদ, সরিষাবাড়ীর পিংনা, পোগলদীঘা, আওনা, কামারাবাদ, সাতপোয়া, বকশীগঞ্জে মেরুরচর ও সাধুর পাড়া ইউনিয়নসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরে ৩৫০ মেট্রিকটন চাল, নগদ সাত লাখ টাকা ও দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলার ৪৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা নেওয়ার জন্য ইঞ্জিন চালিত ১২টি নৌকা রাখা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, জেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১৫৭৫ হেক্টর জমির পাট, ১৩০ হেক্টর আউশ ধান, ১৭৭ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর বীজতলা ও দুই হেক্টর জমির বাদাম।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ জানিয়েছেন, পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। আরও দুএকদিন একই গতিতে পানি বাড়বে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে করছে মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

অপর দিকে জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ীর মির্জাপুরে রবিবার সন্ধ্যায় বন্যার পানিতে ডুবে সোহান নামের সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়াও সোমবার দুপুরে মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নের রোকনাই গ্রামে সানি নামের ১০ বছর বয়সী এক শিশু বন্যার পানিতে ভেসে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার মৃত দেহ উদ্ধার করে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/কেএম