জাল টাকা চুরি করে ধরা, অতঃপর নিজেই কারবারি

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২০, ২১:০৪ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২০, ২৩:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সেলিম মিয়া। থাকেন নেত্রকোনার কেন্দুয়াতে। ঢাকায় তার বিশাল জাল টাকা তৈরির কারবার। যেখানে সদস্যসংখ্যাও অনেক। দলের সদস্যরা কাগজ কেনা, টাকার সাইজে কাগজ কাটা, জলছাপ তৈরি সবই করত। সবশেষ টাকা তৈরির কাজটা করতেন সেলিম। কারণ টাকা তৈরির শিক্ষা তিনি কাউকে দিতেন না।

রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে তারা এসব জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এসময় তাদের কাছ থেকে জাল পৌনে চার কোটি টাকা, ৪৪ লাখ জাল রুপি এবং টাকা তৈরির মেশিন, কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন- চক্রের মূল হোতা সেলিম মিয়া, মনিরুল হক, রমিজা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, মোহাম্মদ মঈন ও খুদেজা বেগম।

সোমবার র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সেলিম জাল টাকা তৈরির একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেসময় টাকা চুরির অপরাধে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর নিজেই একটি চক্র দাঁড় করিয়ে ফেলে।

সারওয়ার বলেন, আগের জাল টাকার অভিযানে দেখা গেছে- জাল টাকা তৈরি করে একটি স্থানে রেখে দেয়া হতো। কিন্তু এই চক্রটির কৌশল অন্যরকম। জাল টাকা তৈরির মূল হোতা সেলিম মিয়া থাকেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া এলাকায়। তার সহকর্মীরা টাকা বানানোর প্রাথমিক কাজ ঢাকায় বসে করেন। প্রাথমিক কাজ শেষ হলে মূলহোতা ঢাকায় এসে জাল টাকা ছাপানোর কাজ নিজে করতেন। কারণ, জাল টাকা তৈরির শিক্ষাটি অন্য কাউকে শেখাতে চান না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন বাসায় ভাগ ভাগ করে জাল টাকাগুলো রাখা হতো। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কেউ ধরা পড়লে, একসঙ্গে সব টাকাসহ কেউ ধরা না পড়ে।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে টাকা তৈরির কৌশল সম্পর্কে সারওয়ার বলেন, প্রথম ধাপে নির্দিষ্ট একটি মাপের কাগজ পুরান ঢাকা থেকে কিনে আনত তারা। এরপর সেই একটি কাগজ দিয়ে চারটি নোট তৈরি করে।

এদিকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় আরেকটি দল টাকার 'সিকিউরিটি ব্যান্ড' বসানো এবং 'জলছাপ' দিয়ে প্রাথমিক কাজ শেষ করে মিরপুরের নিয়ে যেত। এরপর টাকাগুলো প্রিন্টের কাজ মিরপুরের বসে করত সেলিম। জাল টাকা চুরি করে ধরা, অতঃপর নিজেই কারবারি। এর আগে তারা ১০০ টাকার নোট সিদ্ধ করে বিশেষ কায়দায় ৫০০ টাকার জাল নোট তৈরি করত। বর্তমানে একটি কাগজের সঙ্গে আরেকটি কাগজ জোড়া লাগিয়ে জাল টাকা তৈরি করছিল।

এলিট ফোর্সটির এই কর্তকর্তা আরও বলেন, একলাখ টাকার বান্ডিল ১৮ হাজার টাকা কিনে নিতো পাইকাররা। ঈদের সময় এই জাল টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বান্ডেলগুলো আরও বেশি দামে বিক্রি হতো।

এর আগেও মূল হোতা সেলিম র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল বলে জানান সারওয়ার। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ৫৪ লাখ ভারতীয় রুপি ও পাঁচ লাখ টাকার জাল টাকাসহ আটক হয়েছিল। সাত মাস আগে জেল থেকে বেরিয়ে আবারো জাল টাকা তৈরি করছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/এসএস/জেবি)