গরিবের জন্য বিনামূল্যে করোনা টেস্টে ২০০ টাকা নির্ধারণ কতটা প্রয়োজন?

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ১২:৫৫ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২০, ১৩:০৫

ডক্টর তুহিন মালিক

১.‘ঢাকা মেডিক্যালে এক মাসে খাওয়ার বিল ২০ কোটি টাকা কী করে হয়?’ আজ সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার প্রশ্নের জবাবে উল্টা প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এই দূর্নীতির কথা দেশের প্রায় সব মানুষ জানলেও ‘দিবা-নিশি সজাগ থেকে সব কিছু মনিটরিং করা’ প্রধানমন্ত্রী নাকি কিছুই জানেন না! তাই বিস্ময় প্রকাশ করে উল্টা প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।

তবে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ‘এটা খতিয়ে দেখা হবে।’ আর এই ‘খতিয়ে দেখার’ বিল যে আরো কত কোটি টাকা দেখানো হবে, সেটা হয়ত কেউ জানতেও পারবে না! ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে কেউ হয়ত তা জানাতেও যাবে না। যেমনটা এবারের বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের খরচের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা। তাই ঢাকা মেডিক্যালে মাসে খাওয়ার বিল ২০ কোটি টাকা হলে প্রধানমন্ত্রী বিস্মৃত হলেও উনার নিজের জন্য দৈনিক ১০ কোটি টাকা খরচে কোন বিস্ময় বা প্রশ্ন নেই! কারন উনার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তাই এখন আর কেউ প্রশ্ন করে না, ‘প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক খরচ ১০ কোটি টাকা কী করে হয়?’

২.এদিকে আজ সংসদে অর্থবিল ২০২০ পাস হয়। মুঠোফোন সেবার ওপর যে বাড়তি করারোপ করা হয়েছিল, সংশোধনীকালেও তাতে কোনো ছাড় দেয়নি সরকার। যেমনটা ছাড় দেয়নি গরীবের জন্য বিনামূল্যে করোনা টেষ্টের জন্য। ২০০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে একজন দিনমজুরের করোনা টেষ্টের জন্য। গরীবের জন্য কঠিন দুটা অপশন দিয়ে দিলেন। পরিবারের পেট বাঁচাতে ৪ কেজি চাল। নাকি নিজের জীবন বাঁচাতে করোনার টেষ্ট? অথচ ঢাকা মেডিক্যালের এক মাসের খাওয়ার বিলের ২০ কোটি টাকা দিয়ে দেশের ১০ লক্ষ গরীবের ২০০ টাকা ছাড় দিয়ে বিনামূল্যে করোনা টেষ্ট সম্ভব। আর প্রধানমন্ত্রীর একদিনের খরচ দিয়ে ৫ লক্ষ গরীবের বিনামূল্যে করোনা টেষ্ট সম্ভব।

৩.কিন্তু একথা কে বলতে যাবে? যেখানে ১৫ বছরের বালক পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর চরম প্রতিহিংসার শিকার। সেখানে কে বলতে যাবে, গরীবের কাছ থেকে কেন করোনা টেষ্টের জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে? বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবার সাংবিধানিক অধিকার কেন গরীবের জন্য প্রযোজ্য নয়? ভিআইপিদের জন্য সিএমএইচ সহ সব ভিআইপি স্বাস্থ্য সেবার একচ্ছত্র নিশ্চয়তা কেন? দেশের সাধারন মানুষের জন্য কেন সিএমএইচ এ কোন প্রবেশাধিকার নেই?

৪.ভিআইপি মরলে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল। আর লঞ্চ ডুবে সাধারন মানুষ মরলে মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ! তাই হয়ত দেশের সবচাইতে বড় ভিভিআইপির দৈনিক খরচ ১০ কোটি টাকা হলেও কেউ আর এখন অবাক হয়না। আর উনার খরচের টাকার যোগান তো জনগনের মোবাইল ফোনের রিচার্জ কেটেই দিতে হবে!

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ

ঢাকাটাইমস/৩০জুন/এসকেএস