সুমন বেপারীর কণ্ঠে বেঁচে ফেরার গল্প

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ২২:২৭ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২০, ২৩:৫৪

বোরহান উদ্দিন ও আরাফাত রায়হান সাকিব

বুড়িগঙ্গায় মর্মান্তিক লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর ‘অলৌকিকভাবে’ বেঁচে যাওয়া সুমন বেপারীর উদ্ধার পাওয়া নিয়ে দেশজুড়ে চলছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বাহাস। পানির নিচে এত সময় জীবিত থাকার ঘটনা নিয়ে কারও সংশয় প্রকাশ করা অস্বাভাবিকও নয়। সুমন ব্যাপারীর কাছেও তার বেঁচে ফিরে আসাটা অলৌকিক লাগছে।

সুমন ব্যাপারী বলেন, পানির নিচে আল্লাহ্‌ তাকে কোন জায়গায় রেখেছিল, তা তিনি বলতে পারবেন না। তবে পানির নিচে তলানোর পর তিনি লঞ্চের একটা রড ধরেছিলেন সে কথা মনে আছে তার।

আজ মঙ্গলবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের বেডে বসে নিজের জীবন পাওয়ার গল্প বললেন মুন্সিগঞ্জের সুমন বেপারী। গতকাল সকালে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর ভেসে ওঠা সুমন বেপারীকে এই  হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঢাকা টাইমসকে সুমন বেপারী বলেন, ‘একমাত্র আল্লাহর রহমতে এখনো বেঁচে আছি। কীভাবে কেমনে বাঁচলাম আল্লাহই ভালো জানেন।’

সুমন বেপারীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির আব্দুল্লাহপুরে। রাজধানীর বাদামতলীতে ফলের ব্যবসা করেন। ব্যবসার খাতিরে ঢাকায় থাকলেও সপ্তাহে এক-দুবার লঞ্চে করে বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন তিনি।

সোমবার তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। সুমন বলেন, ‘কাঠপট্টি থেকে সকাল পৌনে আটটার দিকে লঞ্চটি ছাড়ে। আমি ইঞ্জিনের কাছাকাছি একটা জায়গা বসা ছিলাম। ৯০ থেকে ৯৫ জন যাত্রী ছিল লঞ্চটিতে। হঠাৎ দেখলাম একটা ধাক্কা লেগে লঞ্চটা ডুবে যাচ্ছে। একদম পানির নিচের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। পানির চাপে আমি সেখান থেকে সরে যাই। যেখানে বসা ছিলাম তার থেকে একটু দূরে ভেসে থাকা প্লাস্টিকের রিংয়ের মতো একটা কিছু দেখছিলাম। যখন ডুবতেছে তখন পানি চলে আসায় ওইটা আর ধরতে পারিনি। পরে বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করি, কিন্তু সব অন্ধকার, কিছুই দেখতে পারিনি।’

এরপরের ঘটনা বলতে গিয়ে অনেকটা আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন সুমন বেপারী। বলেন, ‘পরে মনে হলো ইঞ্জিনের ভেতরের দিকের কোনো একটা জায়গায় গেলাম। আল্লাহ আমাকে কোন জায়গায় রেখেছে আমি নিজেও বলতে পারব না। তবে মনে আছে যে পানির নিচে যাওয়ার পর আমি লঞ্চের একটা রড ধরে ছিলাম।’

কীভাবে বের হয়ে এলেন- জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে সুমন বলেন, ‘কীভাবে কী হয়েছে জানি না। হঠাৎ মনে হলো লঞ্চটা একটু সরে আসলো। পরে উপরে ভেসে উঠেছি। এরপর সবাই উদ্ধার করছে। আসলে কেমনে কী হয়েছে, আল্লাহ ভালো জানেন।’

অনেকে তার এত সময় পানির ভেতরে বেঁচে থাকা ও জীবিত উদ্ধার হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন- এ কথা সুমনকে জানালে তিনি বলেন, এমন কিছু তিনি শোনেননি।

এ সময় পাশে থাকা সুমনের ভাতিজা আরাফাত রায়হান সাকিব বলেন, ‘আসলে বিষয়টি বলতে গেলে পুরোপুরি অলৌকিক। আমরা চাচাকে ফিরে পেয়েছি এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। কে কী বলল বা ভাবল, সেটা তাদের বিষয়। আমার চাচা লঞ্চে ছিলেন, যত সময় পরই হোক তিনি জীবিত উদ্ধার হয়েছেন, এটাই আমাদের কাছে বড় সত্য।’

সোমবার সকালে রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় ছোট আকারের লঞ্চ মর্নিং বার্ড। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সদরঘাটে এসে নোঙর করতে যাচ্ছিল মর্নিং বার্ড লঞ্চটি। ময়ূর-২ লঞ্চটিও চাঁদপুর থেকে সদরঘাটে এসে যাত্রী নামিয়ে ভিন্ন স্থানে নোঙর করতে যাচ্ছিল।

ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে তিন শিশুসহ ৩৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর সোমবার রাত ১০টার দিকে সুমন বেপারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নদীতে ভেসে ওঠার পর তাকে তুলে নেন কোস্ট গার্ডের কর্মীরা। আজ দুপুরে লঞ্চটি নদীর তলদেশ থেকে তোলার পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/মোআ)