কোন্দল আর নেতৃত্ব সংকটে ডুবন্ত শেরপুর বিএনপি

সুজন সেন, শেরপুর
| আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ১৮:৫৭ | প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০২০, ০৯:২৫

জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা অভিযোগ করছেন বর্তমান কমিটিসহ স্থানীয় নেতারা। কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নদের অর্থের বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া, কমিটিতে মাদকসেবীদের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগও উঠেছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকটের কারণে ডুবন্ত অবস্থা শেরপুর জেলা বিএনপির।

দলের এক পক্ষের যখন এমন অভিযোগ, তখন ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে কারাগারে জেলা সাধারণ সম্পাদক। অন্য নেতারাও চলছেন অনেকটা নিজেদের মতো করে। ফলে নেতৃত্ব সংকট তৈরি হয়েছে জেলা বিএনপিতে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব পায় শেরপুর বিএনপি। ওই ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ঋণ জালিয়াতি মামলায় দুই বছর ধরে কারাগারে। গত সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে হযরত আলীর মেয়ে ডা. সানসিলা সেবরিন প্রিয়াঙ্কা দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করেন।

বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, কমিটিতে পদ বেচাকেনা, ‘মাদকসেবী’ঢুকে পড়ায় এবং মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন না করায় জেলা বিএনপির নেতৃত্বে এমন সংকট চলছে। ফলে করোনাকালের আগে থেকেই দলের কোনো কর্মসূচি ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় না শেরপুরে। এ অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ বর্তমান সভাপতিসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতা।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপনের প্রথম অভিযোগের আঙুল সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর দিকে।

ঢাকা টাইমসকে স্বপন বলেন, ‘হযরত আলী টাকার জোরে উড়ে এসে জুড়ে বসে পদ পেয়েছেন। পরে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সভাপতিকে নিয়ে তিনি ১৫১ সদস্যের কমিটি করেন। ’

তার অভিযোগ, কমিটির অনুমোদন নিতে বিএনপির মহাসচিবকে উপহার ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম (পচা আলম) ও জামালপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুনের পেছনে কোটি টাকা খরচ করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনার প্রতিবাদে শেরপুরে ঝাড়ু মিছিলও হয়েছে।

টাকার বিনিয়মে পদ দেয়া, মাদকসেবীদের কমিটিতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল। করোনার কারণে দলের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির আছে স্বীকার করে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দলের কার্যক্রম আবার ঠিক হয়ে যাবে।’

অর্থের বিনিময়ে কমিটি অনুমোদনের অভিযোগের বিষয়ে ওয়ারেস আলী মামুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, টাকা নেয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে এটা সত্য নয়। শফিকুল আলমও আর্থিক কাজের সঙ্গে জড়িত নন।

এদিকে বিএনপির নেতা স্বপনের দাবি, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক শ কোটি টাকা ঋণ নেয়ায় হযরত আলী কারাগারে আছেন। তার কারণে পরীক্ষিত কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে দলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দলের কোনো সদস্যপদে না থাকলেও তার মেয়ে ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাকে সংসদ নির্বাচনে চার কোটি টাকা খরচ করে প্রার্থী করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে সভাপতি বলেন, ‘তার বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ড অবগত আছে। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হলে দল তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

চার কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি হাস্যকর বলছেন হযরত আলীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, ‘এসব কথা যারা বলছে তারা বিএনপির শত্রু। বাবা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার জন্য তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।’

বিএনপির স্থানীয় নেতাদের প্রতি অভিযোগ করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কোনো নেতা বাবার খোঁজ খবর নেয়নি। করোনায় অসহায় মানুষকে ত্রাণ দেয়া নিয়েও এরা ভুল তথ্য দিচ্ছেন।’

এদিকে শেরপুর বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার অভিযোগ, দলের নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে পরিচিত ছিলেন প্রয়াত জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম কালাম ও আরেক সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মরহুম আব্দুর রাজ্জাক আশীষ। কিন্তু দলেরই একটি পক্ষের কারণে জীবিত অবস্থায় দলে যথাযথ সম্মান পাননি তারা। প্রকাশ্যে অপমান অপদস্থের শিকার হতে হয়েছিল প্রয়াত নেতা আশীষকে।

নাম প্রকাশ না করে একজন বিএনপি নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন দলের কর্মসূচি চলে ঘরে বসে। বছরে একটা মিটিং-সিটিং হয়, তারপর শেষ। ’

জেলার নেতৃত্বে যখন এই অবস্থা, তখন উপজেলা পর‌্যায়ের কমিটিও হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। ছয় বছর থেকে এক যুগ ধরে কমিটি নেই এমন উপজেলাও আছে শেরপুরে। এই অবস্থায় অনেক নেতাকর্মী দলছুটও হয়েছেন।

উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কথা স্বীকার করে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মামুনুর রশীদ পলাশ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ ঘোষণার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি চলে আসায় তা থেমে যায়।

শেরপুরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠেও বিএনপির অবস্থা নিয়ে হতাশার সূর। তারা বলছেন, এমন হযবরল পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে বিএনপি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শেরপুরের আইনজীবী রেদুয়ানুল হক আবীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে বিএনপির কমিটি হলেও জেলার সাধারণ সম্পাদক দুই বছর ধরে কারাগারে। সব মিলে নেতাকর্মীরা হতাশ। করোনা শেষ হলে বুঝা যাবে মাঠের রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে বিএনপি।

আফজাল হোসেন নামের রাজনীতিসচেতন একজন ব্যবসায়ী বলেন, সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরী একসময় জেলা বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর দলের কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। অর্থবিত্তের মালিক হযরত আলী নেতৃত্বে এলেও দলকে সক্রিয় করতে পারেননি। তার ওপর তিনি কারান্তরীন হওয়ায় দল এখন ডুবন্ত অবস্থায়।

(ঢাকাটাইমস/১জুলাই/বিইউ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :