বেঁচে ফেরাটাও যেন সুমন বেপারীর অপরাধ!

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২০, ২৩:০৫ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০, ০০:১৪

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার সুমন বেপারীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানান কথায় বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যেন বেঁচে ফেরাটাই মধ্যবয়সী এই ব্যক্তির মহাঅপরাধ।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার পাড়ে দিনভর অপেক্ষার পরও যখন সুমনকে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তারা একরকম লাশের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা দয়ায় তাকে জীবিত ফেরত পেয়েছেন তাদের আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই। তবে তার বেঁচে ফেরা নিয়ে নানান সমালোচনায় তারা মানসিকভাবে কষ্টে আছেন।

সোমবার রাতে জীবিত উদ্ধারের পর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার রাতেই মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির গ্রামে ফিরে যান সুমন বেপারী। তাকে ফিরে পেয়ে বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের অন্যদের মাঝে যখন খুশির জোয়ার বইছে।

বুধাবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন সুমন বেপারীর ভাই শাহজাহান বেপারী। তিনি বলেন, ‘লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমার ভাই আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে ফিরেছে। আমাদের পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।’

‘তবে ভাইয়ের এই বেঁচে ফেরা নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছে। আমাদের পরিবারকে নিয়েও নানা বাজে মন্তব্য করছে। তাহেলে কি আমার ভাই সুমনের বেঁচে ফেরাটা অন্যায় হয়েছে? বেঁচে ফেরাটা কি তার অপরাধ হয়েছে?’

বুড়িগঙ্গায় সোমবার ময়ূর লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া মর্নিংবার্ড লঞ্চটি থেকে ৩৩ জনের মরহেদ উদ্ধার করা হয়ে। এদের মধ্যে নারী-শিশু ও পুরুষ ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে সুমন বেপারির স্বজনরা সদরঘাটে ছুটে আসেন।

তবে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি এবং মরদেহগুলোর মধ্যে তাকে খুঁজে কোথাও না পেয়ে তারা সুমনকে জীবিত পাওয়ার আশাও ছেড়ে দেন। কিন্তু রাতে হঠাৎ করে তিনি জীবিত উদ্ধার হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

সুমনের ভাই বলেন, লঞ্চডুবির খবর পেয়ে সোমবারই আমার ঘটনাস্থলে চলে যাই। সারাদিন খুঁজেও সুমনের সন্ধান পাইনি। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এদিন আমাদের এলাকার আরো তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। ভেবেছিলাম ভাইয়ের লাশটি কবর দেওয়ারও হয়ত সুযোগ হবে না।

‘কিন্তু সব আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি বাঁচিয়েছেন। বিষয়টি অন্যভাবে দেখার কি আছে বুঝলাম না! যে যাই বলুক আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি। সবার কাছে দোয়া চাই।’

সুমনের পরিবারের ভাষ্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মকতারা জানিয়েছেন লঞ্চটি উল্টে যাওয়ায় লঞ্চের এয়ারপকেটে থাকা বাতাসে সুমন বেঁচে থাকতে অবশ্যই পারে। বাল্কহেড ডুবির পর ৩০ ঘন্টা পর নদী থেকে জীবিত উদ্ধার করার নজিরও রয়েছে। সুমনের বেলায়ও এমনটি হতে পারে।

তারপরও কেন এমন সমালোচনা? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুমনের উদ্ধার হওয়া নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য মনোক্ষুন্ন হচ্ছে সুমন বেপারীর পরিবারের সদস্যরা। সুমনের মা আমেনা বেগমও ছেলেকে নিয়ে সমালোচনায় ক্ষুদ্ধ। তবে তার স্বস্তি আদরের ধনকে কাছে ফিরে পেয়েছেন।

তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সকালে খবর পাইলাম লঞ্চ ডুইবা গেছে। সারাদিন কানলাম-কাটলাম। মনে করছি আমার পোলা মইরাই গেছে। রাইতে খবর পাইলাম সুমনরে টিভিতে দেখাইতাছে। আমার পোলা আল্লাহ ফিরাই দিছে, সব আল্লাহ ইচ্ছা।’

সমালোচনার বিষয়ে সুমন বেপারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এসব জানি না। হাসপাতালেও অনেক প্রশ্ন করেছে। সাংবাদিক ভাইদের বারবার আমি সবকিছু বলেছি। যে যা বলুক আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আমার মাকে, আমার পরিবারের সবাইকে দেখতে পেয়েছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ।’

‘লাশের সংখ্যা আরেকটি বাড়লেই কি মানুষ খুশি হতো?

বুধবার দুপুরে সরজমিনে সুমন বেপারী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল। অন্যদিকে তার জীবিত উদ্ধারের খবর শোনার পর দিনভর উৎসুক মানুষের ভীড় আছে তার বাড়িতে।

সুমন বেপারী ভাতিজা সাকিব বলেন, ফেসবুকে অনেকে নানা কথা বলছেন। এসব আমাদের কষ্ট দিচ্ছে। আমার চাচা মরে গেলে লাশের সংখ্যা আরেকটি বাড়লে তাতে কি এসব মানুষ খুশি হতেন?

তিনি বলেন, আমার চাচা একটু সরল সহজ মানুষ। তাকে এক ঘটনার কথা বারবার সাংবাদিকদের ছাড়াও অনেককে বলতে হচ্ছে। যে কারণে হয়ত কিছু কথা রিপিট হচ্ছে না হয় বাদ পড়ছে। কিন্তু ঘটনা যেহেতু সত্য সবাই জানুক এতে আমাদের সমস্যা নেই।

এদিকে সুমনের বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বেপারী, মাদ্রাসা শিক্ষক মো. জাহিদসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়। তারা জানান, সুমনের পরিবার স্থানীয়ভাবে খুবই পরিচিত। তার বড় ভাই আব্দুল হাই বেপারী আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে একাধারে চারবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

(ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/প্রতিনিধি/বিইউ/ডিএম)