স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ঢাকার বাতাসের মান স্বাভাবিক রাখতে হবে

মো. শাহিন রেজা
 | প্রকাশিত : ০২ জুলাই ২০২০, ১২:০১

ঢাকা প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর। শত সমস্যায় জর্জরিত এই শহরটি। তার মধ্যে অন্যতম বায়ু দূষণ। এক প্রকার বাধ্য হয়েই দূষিত বায়ুর সাথে বসবাস করার অভ্যাস ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে ঢাকার মানুষেরা। কিন্তু এক সময় পরিবেশ ছিল মানুষের অনুকূলে। পরিবেশের প্রধান তিন উপাদান মাটি, পানি, বায়ু ছিল বিশুদ্ধতায় ভরপুর।

প্রাচীনকালে মানুষ যখন আগুন আবিষ্কার করা শিখলো এর পর থেকে শুরু করলো নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার। বিপত্তিটা এখানেই বাধলো যে মানুষ প্রকৃতিকে ব্যবহার শুরু করতে থাকলো আর ধ্বংস করতে থাকলো প্রকৃতির অস্তিত্বকে। ফলে ধীরে ধীরে প্রকৃতি হারাতে থাকলো তার স্বকীয়তা। মূলত শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই পরিবেশ তার স্বভাবিক রূপ পরিবর্তন করতে থাকে। মানুষের নানা ধরনের অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডে পরিবেশের উপাদানগুলো হতে থাকে দূষিত। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে।

পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রাজধানী শহর ঢাকার বায়ু দূষণের পরিমাণ বাড়ছে দিনে দিনে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) একটি সুসংবাদ দিয়েছিল, তাঁরা বলছে ঢাকার বাতাসের মান সন্তোষজনক। বাতাসের মান তখনই ভালো থাকে যখন একিউআই স্কোর ০-৫০ এর মধ্যে থাকে। আর ৫০ এর নিচে থাকলে বাতাসের মান সবথেকে ভালো থাকে। স্কোর ১৫১ থেকে যত বৃদ্ধি পায় ততই মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

কেন ঢাকার বায়ু এত দূষিত? এর মূল কারণ ইটের ভাটা, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, কল কারখানার ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ ইত্যাদি। ২০১৮ সালের বিবিএস এর তথ্য মতে, ঢাকা বিভাগে দুই হাজার চার শত সাতাশিটি ইটের ভাটা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে ঢাকার বায়ু দূষণের ৫৮ শতাংশ উৎস ইটের ভাটা এবং ধুলা, মটরগাড়ি ও কলকারখানার থেকে দূষিত হয় ২৬ শতাংশ বাতাস।

কেন দূষিত বাতাস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? কারণ ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর সিসা, দস্তা, নিকেল, কপারসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে মানুষ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষিত বাতাস গ্রহণের ফলে মানুষ শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সমস্যা, নিউমোনিয়া, আ্যাজমা, ক্যান্সার, স্নায়ুজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি বছর মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ। দূষিত বায়ু চোখ, কানের ক্ষতি করতে পারে, আ্যলার্জির সমস্যাও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও বায়ু দূষণ আমাদের জিডিপির উপর প্রভাব ফেলছে।

সরকার বায়ু দূষণরোধ তথা পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ আদালত স্থাপন, পরিবেশ সংরক্ষণ বিল প্রণয়ন, বনায়নের পরিমান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দূষণ রোধে কাজ করছে।

কালক্ষেপণ না করে বায়ু দূষণ রোধ করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। প্রথমত, ঢাকার আশে পাশের ইটের ভাটা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পরিবেশ বান্ধব ইটের ভাটা তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে যাতে জনসংখ্যার পরিমাণ কমে যায়। তৃতীয়ত, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন পরিহার করে পরিবেশের ক্ষতি করবেনা এমন যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ কমিয়ে মানসম্মত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, কলকারখানার ধোঁয়া শোধন করতে হবে যেন বায়ুকে দূষণ না করে। পঞ্চমত, অবকাঠামো নির্মাণের সময যেন ধুলা বালি বাতাসে মিশে দূষিত করতে না পারে সেই দিকে নজর রাখতে হবে এবং বিল্ডিং কোড মানতে হবে। ষষ্ঠত, পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ করা ও গাছ পালা রোপণের পরিমাণ বাড়াতে হবে, তাছাড়াও বিভিন্ন জনকল্যাণকর উদ্যোগ নিয়ে বায়ু দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকাকে বাসযোগ্য শহরে রূপান্তর করতে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে জনগণকে সচেতন করা খুবই প্রয়োজন তা নাহলে দূষিত বায়ু মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ মানুষের জীবন যাপনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে ঢাকাকে বসবাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত শহরে পরিণত করতে।

লেখক: শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/২জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :