বাসর থেকে বেরিয়ে রেললাইনে দ্বিখন্ডিত বর

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ১৬:০৪

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাসর রাতে নববধূকে রেখে নিখোঁজ হওয়া বর মেহেদি হাসান খান (২২) অবশেষে ঘরে ফিরেছেন। তবে জীবিত অবস্থায় নয়, দ্বিখন্ডিত লাশ হয়ে। নিহত মেহেদি নান্দাইল উপজেলার বীরখামটখালী গ্রামের সাজ্জাদ খানের ছেলে।  

বাসর রাতে নববধূ রোকসানা আক্তারকে আসছি বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান মেহেদি হাসান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলস্টেশনের অদূরে পৌর এলাকার শিলাসী রেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকার রেললাইন থেকে মেহেদির দ্বিখন্ডিত লাশ উদ্ধার করে জিআরপি ফাঁড়ি পুলিশ।

গাজীপুরের টঙ্গীতে ন্যাশনাল ফ্যান কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন মেহেদি হাসান। গত রবিবার মেহেদি পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রামগোপাল বাড়ি গ্রামের হালিমের মেয়ে রোকসানা আক্তারকে (২০)। মূলত বর মেহেদির কনে রোকসানাকে পছন্দ না হলেও পরিবারের লোকজনের জেদের কাছে হার মানে সে।

অবশেষে রবিবার বাসর রাতের কোনো এক সময় নববধূকে আসছি বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান বর মেহদি হাসান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বর ফিরে না আসায় নববধূ লজ্জা ভেঙে পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায়। পরে রাতভর খুঁজেও বর মেহেদিকে কোথাও পাওয়া যায়নি।

একপর্যায়ে মেহদির ফোন নম্বর থেকে কল পান মা মাজেদা খাতুন। ছেলের প্রশ্ন 'এ কেমন বিয়ে করালি মা। তবু আমি ফিরে আসবো।' এই কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয় মেহদি।

নিহত মেহেদির মা মাজেদা বলেন, আমি তো জানতাম না এই কথাই আমার ছেলের শেষ কথা। বারবার চেষ্টা করলেও আর মোবাইল ফোন ধরেনি ছেলে। ঘণ্টা খানেক পর তার নম্বর দিয়ে বলা হয়, এটা কার নাম্বার? তিনি রেললাইনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। লাশ নিয়ে যান।

বুধবার সন্ধ্যার পর গফরগাঁও উপজেলা লাগোয়া নান্দাইলে বীরখামটখালী গ্রামের নিহত মেহদির বাড়িতে গেলে দেখা যায়, এ মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। সবার একটাই প্রশ্ন এমন কি হয়েছিল মেহেদির যার জন্য আত্মহত্যা করেছে। তবে নাম প্রকাশ না করে অনেকেই জানান, মেহেদি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। পরিবারের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হন।

এর সত্যতাও মিলেছে নববধূ রোকসানার বক্তব্যে। তিনি বলেন, বাসর রাতে বিছানায় না উঠেই তার সঙ্গে বাজে আচরণ শুরু করেন মেহেদি। অনেক চেষ্টা করেও তাকে (বর) আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে তিনি (বর) বলেন, আমাকে উনার পছন্দ হয়নি। এই বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান।

রোকসানা বলেন, আমার কী দোষ। আমি তো সংসার করতে চেয়েছিলাম। আমার এখন কী হবে। এই বলে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন নববধূ রোকসানা।

(ঢাকাটাইমস/২জুলাই/কেএম)