ঢাকাটাইমসের নিউজে ইউএনওর পাঠাগার পরিদর্শন

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ১৮:৪৯ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০, ২০:২৭

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, ঢাকাটাইমস

‘কোথায় স্বর্গ/কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর/মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক/মানুষেতে সুরাসুর’- কবি শেখ ফজলুল করিমের এ মর্মস্পর্শী কবিতাটি ছোট বেলায় পড়েননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলুল  করিমের স্মৃতিজড়িত গ্রামের বাড়িটি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে প্রশাসনের অবহেলায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে কবি শেখ ফজলুল করিমের স্মৃতি রক্ষার্থে কাকিনা বাজারে একটি দুই তলা ভবনে নির্মিত পাঠাগারটি এখন পরিত্যাক্ত, আবর্জনায় ভরপুর। সেখানে নেই কোনো কেয়ারটেকার, নেই পাঠক, রয়েছে বইয়ের সংকট। ঠিক সেই সময় বই নিয়ে হাজির হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান।

অবহেলায়-অযত্নে কবি শেখ ফজলুল করিমের ভিটাবাড়ি

২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা টাইমসের সংবাদ প্রকাশের পর লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের পরিত্যক্ত থাকা কবি শেখ ফজলুল করিম পাঠাগার পরিদর্শন করলেন ও বই দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল হাসান।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলুল করিমের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাড়িটি। তার নামে জেলার তেমন কোনো স্থাপনাও তৈরি করা হয়নি। ফলে এ প্রজন্মের অনেকেই জানে না কবি শেখ ফজলল করিম সম্পর্কে।

তবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কাকিনায় কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক রয়েছে, যা কবির বাড়ির দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।

এদিকে ২০০৫ সালে গ্রামের বাজারে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ফজলুল করিম স্মৃতি পাঠাগার। কিন্তু এখন এর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সম্প্রতি পাঠাগারের প্রবেশ পথের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে উঠেছে। ‍এছাড়া একটি প্রভাবশালী চক্র ইতোমধ্যে পাঠাগারের প্রবেশপথের কিছু অংশ দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান পাঠাগারটি পরিদর্শন করেন। এছাড়া কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পাঠাগারের সভাপতি শহিদুল হক শহিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের একশ’ বই তুলে দেন এবং বিভাগীয় কমিশনার রংপুর এক লাখ টাকা দেন।

পাঠাগার ভবন সংস্কার কারার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে দেয়া হয় ৪৫ হাজার টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ একটি সোলারস্টিড সোলার প্যানেল দিয়েছেন। সূর্যের অফুরন্তআলো থেকে আলো নিবে এই প্যানেলগুলো।

পাঠাগারের ভিতরে গাছ রোপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম, কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল হক শহিদ উপস্থিত ছিলেন।

শহিদুল হক শহিদ বলেন, ঢাকা টাইমসের সংবাদ প্রকাশের পরে আমাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ফোন দিয়েছেন। অনেকের কাছে পাঠাগারের জন্য সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তাই রংপুর বিভাগীয় কমিশনার রংপুর ও উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করলেন, সেটা দিয়েই পাঠাগার ঠিক করা হচ্ছে। আমি ঢাকাটাইমস পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান বলেন, কবি শেখ ফজলুল করিম একজন জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। এ ধরনের ব্যক্তি সমাজে বর্তমানে বেশি একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি পাঠাগারে কিছু বই দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আগামীতে ও চেষ্টা করব পাঠাগারে আরো কিছু দেওয়ার।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে তৃষ্ণা (১৯০০), পরিত্রাণ কাব্য (১৯০৪), ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র (১৯০৪), ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১), উপন্যাস লাইলী-মজনু, শিশুতোষ সাহিত্য হারুন-আর-রশিদের গল্প, নীতিকথা চিন্তার চাষ, ধর্মবিষয়ক পথ ও পাথেয় প্রভৃতি অন্যতম।

১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। এরপর থেকেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে কবি শেখ ফজলল করিমের স্ম‍ৃতিচিহ্ন।

(ঢাকাটাইমস/২জুলাই/কেএম)