জামালপুরে বন্যার পানি কমলেও কমছে না দুর্ভোগ

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ২২:১৩

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও কমছে না বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। জেলা প্রশাসন বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমাতে ত্রাণ বিতরণ শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নেই বলে দাবি করছে জনপ্রতিনিধিরা।

তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ চলছে, আরো ত্রাণের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাশের দেশ ভারতে যদি বন্যা না হয়, তবে যমুনার পানি কমতে থাকবে। আর যদি বন্যা হয়, তবে যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে এবং ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অব্যাহত থাকলেও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি এবং শাখা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে জেলার ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের পশ্চিম বামনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর, ফসলের মাঠ ও রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রীজ-কালভার্ট এবং বিভিন্ন সড়কের উঁচু জায়গায় পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা কবলিতরা।

আশ্রিত একজন বন্যাকবলিত আবুল হোসেন মণ্ডল জানান, বন্যার পানি আটকে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ কমছে না। অনেকদিন যাবত বন্যা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ত্রাণ পায়নি তারা। দ্রুত ত্রাণের দাবি করেন তিনি।

একই এলাকার আরেকজন বন্যাকবলিত খুদেজা বেগম জানান, বন্যার পানি বাড়িতে ঢুকে যাওয়ায় ব্রিজে আশ্রয় নিয়েছে তারা। সপ্তাহখানেক যাবত বন্যাকবলিত হলেও  কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের খবর নেয়নি। কোনো ত্রাণ বা সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি তারা। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তারা।

চিনাডুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নে ৫০ হাজার জনগণের ভেতর ৩৫ হাজার জনগণ পানিবন্দি। তিনি এ পর্যন্ত ১৫ টন ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এই কারণে তিনি বন্যাকবলিতদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করতে পারছে না। তাই তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে আরো ত্রাণ  বরাদ্দ চেয়েছেন।

ত্রাণের বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, এ পর্যন্ত বন্যাকবলিতদের জন্য ৬০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ কম হওয়ায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে ৭০০ মেট্রিক টন জিআর চাল, নগদ ১৪ লাখ টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এসব পেলে ত্রাণের চাহিদা পূরণ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ যাবত জেলার ৮টি পৌরসভাসহ ৭ উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ৩১৯টি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের মাঝে ৮৫ হাজার ১৯৭টি পরিবারের ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ২২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫৯৮৭টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ হাজার ১৯১ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া ৪৮.৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৬.৭৫ পাকা রাস্তা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২৫টি ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান ও ৪টি ব্রিজ কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিতদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ৪৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানা যায়।

এ যাবত পুরো জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ৭জন এবং সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২জুলাই/এলএ)