একে একে বড় ডাক্তারের মৃত্যুতে ‘ক্ষতির দুশ্চিন্তা’

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ২২:১৯ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০, ২৩:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে একদিনেই চারজন বড় চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বয়সজনিত কারণে মারা গেছেন আরও একজন। ফলে করোনায় সম্মুখসমরে থাকা চিকিৎসকদের অঙ্গনে অগ্রজ যোদ্ধাদের মৃত্যুতে ক্ষতি নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

বুধবার ভোর থেকে মধ্যরাতের মধ্যে এই চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মারা যান। একইসময়ে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন আরও এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এই একজন বাদে সবমিলিয়ে করোনায় ৫৯ চিকিৎসক মারা গেছেন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও আটজন চিকিৎসক।

দেশে ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনেকে রয়েছেন। এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্ত অর্ধশতাধিক চিকিৎসক মারা গেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তারা একেকজন নিজ নিজ অঙ্গণে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন।

বুধবারে মারা যাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন- রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের গ্যাস্টোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মহসিন কবীর। বুধবার ভোর রাতে ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

একইদিন ভোরে মারা যান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম সারোয়ার। ঢাকার  আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

এদিন বিকালে করোনায় মৃত্যু হয় রাজধানীর ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন। রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তিনি ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন হিসেবে দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভুঁইয়া থানার জায়লস্কর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাতে মারা যান রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব। ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবনে মারা যান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এম ওয়ালী উল্লাহ। তিনি কুমিল্লা ডায়াবেটিক সমিতির সাবেক সভাপতি, কুমিল্লার প্রবীণ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির কুমিল্লার সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

পেশাগত জীবনে দক্ষ অগ্রজদের হারিয়ে শোকাহত চিকিৎসকরাও। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কায় খোদ চিকিৎসকরা। এদের কেউ মারা গিয়েছেন রোগী দেখার কারণে আক্রান্ত হয়ে। কেউ আবার উপসর্গ নিয়ে।

মারা যাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। তেমনি আক্রান্তের দিক দিয়ে তরুণ ও বয়সে মধ্যমসারির চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিসের (এফডিএসআর)।

সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও আটজন চিকিৎসক।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সনাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুরু থেকে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসহ আরো বেশ কিছু দাবি করা হলেও সেটা যথাসময়ে সরবারহ হয়নি। ফলে আক্রান্ত বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।’

‘আর মারা গেছেন যারা তাদের মধ্যে অনেকেই ষাটোর্ধ্ব বয়স। তাদের অনেকের ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজসহ আরো সমস্যা ছিল। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আর ব্যাক করেননি। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সহজ হবে না। কারণ এরা সবাই অত্যন্ত দক্ষ সহকর্মী ছিলেন।’

(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/বিইউ/ডিএম)