সাংবাদিক নান্নু হত্যার রহস্য কাটছে না, মিলছে না তার অস্ত্রের হদিসও

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২০, ১১:৪৫ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০, ১২:২৩

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুতে করা হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সম্প্রতি ডিবিতে মামলাটি পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে হত্যা রহস্যের জোট খোলেনি। তাকে কি হত্যা করা হয়েছে, নাকি তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন-তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও নান্নুর বড় ভাই এটিকে পরিকল্পিত হত্যা উল্লেখ করে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। নান্নু বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন।
এদিকে নান্নুর কাছে থাকা একটি আগ্নোয়াস্ত্রের সন্ধান করছে পুলিশ। বুধবার পর্যন্ত অস্ত্রটির হদিস মেলেনি। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন নান্নুর নামে একটি অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। অস্ত্রটি বিভিন্ন সময় তার সাথেই থাকত। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম জানিয়েছেন, তারা শুনেছেন শর্টগানের কথা। অস্ত্রের হদিস পেতে পুলিশ থানার অস্ত্রের রেজিস্ট্রার ঘাঁটতে শুরু করেছে। নান্নু তার এক সহকর্মী সাংবাদিককে গুলি ভর্তি অস্ত্রটি দেখিয়েছিল।
ঘটনার পর নান্নুর স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবী তার ভাই রাসেলের ধানমন্ডির বাসায় থাকছেন। হত্যা মামলা রেকর্ড হওয়ার পরও ওই মামলার আসামি স্ত্রী ও তার শাশুড়ি শান্তা পারভেজ মাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। শান্ত পারভেজও ছেলের বাসায় আছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, নান্নু হত্যা মামলায় ইনফিনিটি গ্রুপের একজন কর্তাব্যক্তির নাম এসেছে। নান্নু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে দাফন প্রক্রিয়ার সাথে ওই ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। পল্লবীর সাথে তার সখ্যতার অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে, প্রায়শই নান্নুর বাড়িতে ককটেল পার্টির আয়োজন করা হতো। এই পার্টিতে মধ্যমনি থাকতেন নান্নুর  স্ত্রী পল্লবী।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে নান্নু হত্যা মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, তিতাস কোম্পানি ও সিআইডির ক্রাইম সিন শাখা তদন্ত করেছে।  তারা একটি প্রতিবেদনে বলেছে, আগুন লাগার স্থানে কোনো ধরনের দাহ্যপদার্থ ছিল না।
এদিকে নান্নুর মত্যু রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে ক্র্যাবের একটি ১২ সদস্যের অনুসন্ধান টিম। টিমের প্রধান ক্র্যাবের উপদেষ্টা আমিনুর রহমান তাজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কী অবস্থার প্রেক্ষিতে নান্নু মারা গেছে সেটা আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি। এ বিষয়ে অনেকের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাটি হত্যা না অন্যকিছু তা বলার এখনও সময় আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের।’
অন্যদিকে এই ঘটনায় প্রায় ৩০ জনের জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। তদন্ত কমিটিও নিয়েছে জবানবন্দি। সেগুলো এখন যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে।  
রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগরের তিন নম্বর সড়কের বি-ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার দশম তলায় থাকতেন সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু। গত ২২ জুন ভোরে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২ জানুয়ারি একই ঘরে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে স্বপ্নীল আহমেদ পিয়াস।
গত ৩০ জুন মোয়াজ্জেম হোসেন মৃত্যুতে স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে নান্নুর বড়ভাই মো. নজরুল ইসলাম খোকন। সোমবার দুপুরে বাড্ডা থানায় মামলাটি করা হয়।  
নজরুল ইসলাম বলেন, নান্নু বাসায় ফেরার পর স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এর কিছু সময় পর বাসায় আগুন লাগে। পরে তিনি একাই ছাদে গিয়ে পাইপ এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি সেখানে থাকার পরও তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি। নান্নু নিজেই দশ তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নামেন। সেখান থেকে তার প্রতিবেশী এক ফ্ল্যাটের মালিক তাকে হাসপাতালে নেন। তার স্ত্রী অনেক পরে হাসপাতালে যান। এছাড়াও মামলার এজাহারে নান্নুর স্ত্রী ‘ইনফিনিটি’ নামে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সেটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল আমিনের ভূমিকাও সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগ থাকায় আগেই ইনফিনিটির প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তখন তিনি নান্নুর সঙ্গে তার পরিচয়, সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত। তবে সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে তিনি হাসপাতালের শয্যায় নান্নুকে যে স্যুপ খাওয়ান, তাতে বিষ মেশানো ছিল বলে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। সেটি তদন্তের জন্য এরই মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিষক্রিয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ভিসেরা পরীক্ষাও প্রয়োজন। তবে লাশের ময়নাতদন্ত না করায় তখন ভিসেরা নমুনাও সংগ্রহ করা হয়নি। এখন লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/০২ জুলাই/এএ/এইচএফ)