এই কান্না আনন্দের...

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২০, ১৯:১৭

আশিক মুস্তাফা

কাঁদছেন তিনি। উপস্থিত সবার চোখেও সেই আনন্দাশ্রু। টিভির সামনে বসা মানুষও লুকিয়ে চোখ মুছছিলেন। এ আমাদের আনন্দাশ্রু।

স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অনেক সফলতা আছে। আরেকবার (পড়ুন; নিশ্চিত) সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছি আমরা!

বর্তমানে ইউরোপের ২৬টি দেশসহ বিশ্বের ১২৭টি দেশে ওষুধ রফতানি করছে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বাড়বে। কারণ, আমাদের আছে স্বাস্থ্যখাতে গৌরবের ইতিহস।

মনে পড়ে রফিকুল ইসলামের কথা? বাংলাদেশী এই চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডায়রিয়া নিরাময়ের জন্য খাবার স্যালাইন (ওরস্যালাইন) আবিষ্কার করে দুনিয়াব্যাপি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট তার আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইনকে 'চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার' বলে ঘোষণা দিয়েছিল।

পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে বাংলাদেশী বিজ্ঞানিদের অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।

ডাক্তার শাহ এম ফারুককে চিনেন? তিনিও বাংলাদেশের। ছিলেন আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবির আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান। তিনি তার গবেষণা দল নিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ।

ওদিকে মানবদেহে বিস্ফুরক জাতীয় উপাদান সনাক্ত করার জন্য অনেক দিন ধরে দেশে ও দেশের বাইরে গবেষণা চলছিল। সেই গবেষণার সমাধানও দেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডঃ আনিসুর রাহমান। আবিস্কার করেন

মানুষের শরীরের বিস্ফুরক জাতীয় উপাদান সনাক্ত করার যন্ত্র-স্পেকট্রোমিটার।

ড. জামালউদ্দিন নামে আরেক বাংলাদেশী বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবন করে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে নেন। ড. জামাল এবং তার দল সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেন যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। ড. জামাল মেটাফিজিঙ্ক সফট ওয়ার-কমসল এবং পিসি-ওয়ান ডি ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।

আবার এই খেটে খাওয়া মানুষের দেশের আজম আলী নামের এক বিজ্ঞানী উলের প্রোটিন থেকে এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করে বসেন। যার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ ও রাসায়নিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর ত্বক ও মাংশপেশী সারিয়ে তোলা সম্ভব। ২০১০ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার বেয়ার ইনোভেটর পুরস্কার ভাগিয়ে নেন ভাত-মাছ আর ডাল দিয়ে গড়া মেধার জোরে!

আরেক বাংলাদেশী অধ্যাপক আবুল হুসসাম দীর্ঘদিন গবেষণা করে কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার ছোট ভাই ডক্টর আবুল মুনিরকে নিয়ে তৈরি করেন 'সোনো ফিল্টার'। এটি খাবার পানি থেকে আর্সেনিক নিষ্কাশন করার যন্ত্র। তাদের তৈরি এই যন্ত্র টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বে চিকিৎসা জগতে তোলপাড় করে দেন আরেক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী রেজাউল করিম। তার এ নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনের ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় যে মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ওষুধ উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছিল তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়। তার এ তত্ত্বসংক্রান্ত গবেষণাপত্র আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চ জার্নাল অক্টোবর ২০০৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

অন্য এক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী শুভ রায়। তিনি বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক অসামান্য কীর্তি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় ১০ বছর আগে তার সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন।

এমন অসংখ্য বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর আবিষ্কার আছে। যাদের মেধার কল্যাণে আমরা পেয়েছি আলোমাখা পৃথিবী। আগামীর দিন আরও বর্ণিল হয়ে ধরা দিবে আমাদের বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই! তাদেরই একজন ড. আসিফ মাহমুদ। আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আমারা অনেক কিছুই পারি।

আসুন, আমরা ইতিবাচক হই। সফলতার ইতিহাস আছে আমাদের। এবারও নিশ্চয়ই সফল হবো আমরা।

সবুজের ভেতর জ্বলে থাকা লাল সূর্যের আলোয় নতুন আলো দেখবে পৃথিবী। সেই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি...

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/এসকেএস