মানুষ কাঁদলে জাত যায় না!

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২০, ২০:৩৬

ইফতেখায়রুল ইসলাম

কিছুদিন আগে একটা ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে মেয়ে তাঁর কনভোকেশনের হ্যাট বাবাকে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন। বাবার মাথায় হ্যাট উঠার সাথে সাথে বাবা কান্না করছিলেন, বাবার কান্না দেখে মাও কাঁদছিলেন। অদ্ভুত মায়াবী ছিল সেই দৃশ্য। আচরণগত দিক থেকে আবেগীয় সব বিষয় আমাদের ছুঁয়ে না গেলেও কান্না আমাদের অধিকাংশ মানুষকেই ছুঁয়ে যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার যখন ড. আসিফ মাহমুদ কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রাথমিক সাফল্য বা প্রচেষ্টা নিয়ে কথা বলছিলেন, এক পর্যায়ে তিনিও কেঁদে ফেললেন। কষ্টের প্রচেষ্টা নিয়ে সফলতা, ব্যর্থতা যাই আসুক তাঁর এই উদ্যমকে সাধুবাদ জানাতে আমরা কেন কার্পণ্য করবো?

আচ্ছা ধরে নিলাম বড় দেশের বড় মানুষদের কথা আপনার পছন্দ তাই নিজ দেশের গুণী মানুষের কদর দিতে আপনার কষ্ট হয়৷ তাই বলে, এই চেষ্টাকে নিয়ে কৌতুক করার মত আপনি এমন কি হয়ে গেছেন? দুঃখিত আমি তো ভুলেই গেছি, আপনাদের তো আবার অতিরঞ্জিত নাটক পছন্দ। তিনি সফল হবেন কিনা সেটা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলে কেন মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছেন?

আবেগের কান্না নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হয় আপনাদের। পুরুষ মানুষ কাঁদলে জাত চলে যায়? যদি জিজ্ঞেস করি বাসায় বসে গাঁজাখুরি মন্তব্য করা ছাড়া দেশের জন্য কল্যাণকর এমন কি করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন এই আপনারা? আপনি তখন নিরুত্তর!

পুলিশের ট্রেনিংয়ের জন্য যখন সারদা যাচ্ছিলাম, তখন আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন আমার প্রিয় মা। বাবা গত হয়েছিলেন তারও কয়েক বছর আগে। বাড়িতে থাকার মত আমি আর মা ছাড়া কেউ ছিল না তখন। আমাদের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল বন্ধুর মতন। মা কেঁদে কেঁদে বারবার আমার কপালে চুমু খাচ্ছিলেন, আমার চোখ বেয়েও অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছিল। মাঠে উপস্থিত বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি, আমি ও আমার মায়ের সেই আবেগীয় মুহূর্ত নিয়ে টিপ্পনী কেটেছিলেন।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও সমাজের একটা বিশাল অংশ ঠিক এমনভাবেই ভেবে এসেছেন বলেই তাদের উত্তরসূরীরা তাদের অসম্পাদিত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চলেছেন। মুখের ভাষার অসংযত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তারা আত্মার খোরাক পেয়ে নিদ্রা দেবীর কোলে সমর্পিত হোন। আর ড. আসিফ মাহমুদরা মানুষের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টায় নির্ঘুম কাটিয়ে দেন বহু রজনী।

অনুর্বর মস্তিষ্কের অর্থহীন ক্রুর হাসির চেয়ে ড. আসিফ মাহমুদদের তাৎপর্যপূর্ণ কান্নাই আমাদের কাছে অধিকতর প্রিয়। তাৎপর্যপূর্ণ প্রচেষ্টার জয় হোক।

লেখক: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা বিভাগ, পল্লবী জোনাল টিম