করোনা মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের ভূমিকা

মো. নুরুল আবছার
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০২০, ১৬:০০

দরিদ্র, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেবার বিশেষ ট্যুল হিসেবে কাজ করছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম। এই কার্যক্রমটি এসডিজির ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ স্লোগানকে পূর্ণতাদানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ কার্যক্রম ভিন্ন নামে যাত্রা শুরু করলেও এর উদ্দেশ্য ছিল একই। দেশের তৃণমূলের বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে ‘পল্লী সমাজসেবা’ নামে কার্যক্রমের শুরু হয়। ‘পল্লী সমাজসেবা’ কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের সূত্রপাত হয়- - যাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের সূতিকাগার বলা যায়। এ কার্যক্রম দেশের প্রান্তিক জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে সূচনা করে যুগান্তকারী ইতিহাস। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কার্যক্রম দেশের সর্বপ্রথম সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম যা ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ভিজিএফ থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হতো। এছাড়াও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশের অবকাঠামো, শিল্প কলকারখানাসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। জাতির পিতা ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে টেনে তুলে জনগণের দুর্দশা লাঘবে রেশন, খোলাবাজারে ভোগ্যপণ্য বিক্রি এবং রিলিফ বিতরণ কর্মসূচি চালু করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশে প্রথমবারের মতো সামাজিক সুরক্ষা ভাতা চালু করেন। এরপর তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ ও দরিদ্র নারী, প্রতিবন্ধী, চা বাগানের শ্রমিক, জেলে, হিজড়া ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষজনের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন - ফলে দিনদিন উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় যাদের আনা হয়েছে তারা একসময় খুবই অবহেলিত ছিল। আজ এ সুবিধার আওতায় তারা সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে সকলে বিশ্বাস করে। বলে রাখা প্রয়োজন, সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যার উপর ভিত্তি করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু হয়।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম আওতায় রয়েছে মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া অসহায় জনগণ। এখন উদাহরণ হিসেবে প্রোগ্রেসিভ উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরকে নিলে সারাদেশে এর অবস্থা ও ব্যাপকতা বুঝতে পারা সহজ হবে। উপজেলা ও ইউনিয়নের দরিদ্র ও অসহায় জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় এসকল ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এমনকি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে - - যা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ১১টি ইউনিয়নে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সর্বমোট বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ১০ হাজার জন যার জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান প্রায় ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ২৫৮০ জন যার বরাদ্দ ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৪১২৮ জন যার বরাদ্দ প্রায় ০৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি ১৬২জন, বেদে ও অনগ্রসর ভাতা ১৮০জন এবং বেদে ও অনগ্রসর শিক্ষা উপবৃত্তি ২৮ জন প্রদান করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় সর্বমোট বার্ষিক বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১১ কোটি টাকা। এভাবেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় মত দেশের ৪৯২টি উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের পাশে থাকছে সরকার।

কোভিড-১৯ এ যখন পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত ঠিক সেসময় দেশের দরিদ্র ও অসহায় জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে সরকার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১০০টি উপজেলার শতভাগ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এই তিনটি ভাতায় নতুন করে উপকারভোগী যুক্ত হবেন ১১ লাখেরও অধিক দরিদ্র ও অসহায় জনগণ।

করোনাকালে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ে দরিদ্র ও অসহায় জনগণ। তাদের মধ্যে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিভিন্ন ধরনের ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। সরকার শুধু এ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন - যা করোনার এই ক্রান্তিকালে দরিদ্র জনগণের খাদ্যের নিশ্চয়তা দিয়ে তাদেরকে অনেকটা নির্ভার রাখতে সক্ষম হবে।

লেখক: সভাপতির একান্ত সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং

সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ)। জাতীয় সংসদ সচিবালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :