নোয়াখালীতে চাল আত্মসাৎ, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০২০, ১৭:০৫

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের বিরুদ্ধে গত চার বছর ধরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রায় আড়াইশ ভুয়া কার্ড দেখিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক চেয়ারম্যান বরাবর ওই ইউনিয়নের বাহারি নগর গ্রামের বাসিন্দা ও বজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে অভিযোগটি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালী তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সোনাইমুড়ী উপজেলার ৭ নম্বর বজরা ইউনিয়নে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হত দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি পরিবারে ৩০ কেজি করে বছরে পাঁচ মাস চাল পাবে।

এ কর্মসূচির আওতায় বজরা ইউনিয়নে ৮৪২ জন হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে কার্ড দেয়া হয়। ৮৪২ জন কার্ডধারীর মধ্যে প্রায় আড়াইশ কার্ডধারী কাগজে কলমে থাকলেও তারা চাল পায়নি। অথচ ওই ভুয়া কার্ড দেখিয়ে মাস্টার রুলের মাধ্যমে ২৪৬ জনের চাল দীর্ঘ চার বছর যাবৎ উত্তোলন করে চেয়ারম্যান তা আত্মসাৎ করে আসছেন।

এছাড়াও সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রনয়নে ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিয়মানুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ৯৪ জন করে হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তার নিজ ওয়ার্ডে (৪ নম্বর ওয়ার্ড) ২২৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে একই পরিবারের দুজনের নামও রয়েছে। এদের মধ্যে আবার অনেকেই চাল পায়নি। তালিকায় অনেক প্রবাসী পরিবারের সদস্যের নামও রয়েছে।

এদিকে চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে পুনঃযাচাই করান। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সহিদ উদ্দিন পুনঃনিরীক্ষা ও যাচাই করে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে ২৪৬টি কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বজরা ইউনিয়নে সুবিধাভোগী নামের তালিকায় সমস্যাযুক্ত কার্ডধারীর সংখ্যা ১২ জন। তালিকার সঙ্গে কার্ডের উপকার ভোগীর মিল নেই পাঁচজনের। ২৫ জন কার্ডধারীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি, চার বছরে একবার চাল উত্তোলনকারীর সংখ্যা পাঁচজন, একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ জন। এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাওয়ার অযোগ্য আটজন। কাগজে কলমে আছে, কিন্তু কার্ড নেই এমন ১৪ জন। নিয়মিত চাল না পাওয়া কার্ডধারীর সংখ্যা ৪১ জন। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির নামে ১২টি কার্ড রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ইকবাল হোসেন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক বিষয়টি তদন্ত করেছে। তবে এ তালিকা তৈরি ২০১৬ সালে হয়েছে। তিনি এ তালিকা প্রণয়নের কাজ করেননি দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তার প্রতিপক্ষের লোক।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পাল জানান, কার্ড নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে এগুলো যাচাই-বাছাই করেছেন। এতে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সেজন্য সব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আবার সুবিধাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে।

দুদক সমন্বিত কার্যালয় নোয়াখালীর উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন জেলা কার্যালয়ের একজন উপ-সহকারী পরিচালক। ইতোমধ্যে কিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে আগামী কিস্তিতে চাল বিতরণের সময় কার্ডগুলো ভালো করে তল্লাশি করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :