শিল্পখাতের চাহিদা মতো শিক্ষা কারিকুলাম করার তাগিদ

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২০, ১৭:০৭ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০, ১৭:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শিল্পখাতের চাহিদা মতো শিক্ষা কারিকুল্যামকে যুগোপযোগী করতে হবে যাতে শিক্ষার সঙ্গে কর্মজীবনের সম্পর্ক থাকে। এটা না হলে একদিকে যেমন  শিল্পখাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব হবে অন্যদিকে বেকারত্বের হার বাড়বে।

শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘কোভিড ১৯ পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পখাতের প্রস্তুতি: বিনিয়োগ ও দক্ষতা’ বিষয়ক ওয়েবনারে তারা এসব কথা বলেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. শাখাওয়াত আলী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে বিজনেস ইন্টিলিজেন্স লিমিটেডের উদ্যোক্তা শাকিব কোরেশি বলেন, ‘সম্প্রতি স্থানীয় শিল্প-কারখানার কাজের সুযোগ কমে যাওয়া ও বিদেশ থেকে প্রবাসীদের দেশে ফেরত আসার কারণে আমাদের কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে অনেকই  আত্ম-কর্মসংস্থানের দিকে ঝুঁকবে, তবে এর জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন সময় এসেছে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আরও বেশি মাত্রায় জোর দিতে হবে।’

‘বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি কোন খাতে বিনিয়োগ আসবে সেটাও আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে চাহিদামাফিক দক্ষতা উন্নয়ন এবং দেশে-বিদেশে যারা কাজ করছে তাদের একটি ডাটাবেইজ তৈরি করতে হবে।’

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও আমাদের দক্ষ শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সংকট উত্তরণ ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে শিক্ষা কারিকুলামের সংস্কার ও শিল্প খাতে চাহিদামাফিক শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণ করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ স্থানান্তরের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে প্রয়েজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।  প্রবাস থেকে ফেরত আসা কর্মী এবং স্থানীয় শিল্পখাত থেকে কর্ম হারানো শ্রমিকদের শিল্পখাতে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা করতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আরও বাড়াতে হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সরকারি পলিটেকনিক্যালসমূহে ভর্তি হওয়ার জন্য বিদ্যমান বয়সের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা তুলে দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে নতুন গ্রাজুয়েট এবং বিদেশ ফেরত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের বেসরকারি খাত ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শিল্পখাতের চাহিদামাফিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু এবং দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে পরিচালিত কলেজসমূহে প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্তু আমাদের শিল্পখাত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারছে না, এক্ষেত্রে তিনি নতুন গ্রাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব করেন।

তিনি জানান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে আমাদের শ্রমিকের দক্ষতার অভাব পূরণে ‘স্কিল ম্যাপিং’নিয়ে কাজ করছে। 

মুক্ত আলোচনায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর সদস্য (যুগ্ম-সচিব) এম এ রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিল্পখাতের চাহিদা নিরূপণে মানসম্মত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শহীদুল আলম বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ কর্মী দেশের শ্রমবাজারে আসছে, তার মধ্যে প্রায় আট লক্ষ বিদেশে কাজ করতে যায় এবং এ অবস্থা চলমান না রাখতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।

তিনি আরোও বলেন, শিল্পখাতের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে এবং শিক্ষাকার্যক্রম গড়ে তোলতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুলাই/জেআর/জেবি)