বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ

নামাজে প্রথম কাতার অফিসারদের জন্য রাখার নোটিশে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০৪ জুলাই ২০২০, ২০:৩২

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের প্রথম কাতারে অফিসাররা ছাড়া অন্য কেউ বসতে পারবেন না- এমন এক ‘জরুরি’ নোটিশ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় ও মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে ইতিমধ্যে নোটিশ তুলে নেওয়া হয় এবং আগামীকাল রবিবার জরুরি সভা আহ্বান করেছেন ইউএনও।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ দিয়ে মসজিদে প্রবেশের দরজাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রথম কাতারে বসাসংক্রান্ত নোটিশ সাঁটায় মসজিদ কমিটি। তাতে পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজের জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।

মুসল্লিদের উদ্দেশে নোটিশে বলা হয়, ‘সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাসাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নামাজের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজ চিহ্নিত জায়গার বাহিরে পড়া যাবে না এবং জামাত দাঁড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত অফিসারগনের সম্মানে সামনের কাতারে না দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। জামাত দাঁড়ানোর সময় সামনের চিহ্নিত খালি জায়গা পূরণ করে দাঁড়াবেন। মসজিদের বাহিরে/রাস্তায় মসজিদের কার্পেট বিছানো হবে না, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।’

এই মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার।

নোটিশ টাঙানোর পর অনেক মুসল্লি ওই মসজিদে আর যান না। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আকতারুজ্জামান রিপন বলেন, ‘নোটিশটি টাঙানোর পর থেকে আমি ওই মসজিদে যাওয়া বাদ দিয়েছি। ওটা অফিসারদের মসজিদ।’

মসজিদে গত কয়েক দিন ধরে মুসল্লিদের সামনের কাতার বাদ রেখে বসার জন্য বলে আসছিল মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মসজিদের সামনের কাতার থেকে মুসল্লিদের উঠিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

নোটিশ সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ রেজাউল করিম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশক্রমে নোটিশটি সাঁটিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়াও শুক্রবার (৩ জুলাই) জুমার নামাজের আগে নোটিশটি পড়ে মুসল্লিদের জানিয়ে দেয়া হয়। সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি মসজিদ কমিটির। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমি শুধু সেটি বাস্তবায়ন করেছি।’

মসজিদ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন বাসাইল উপজেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মজিবর রহমান হেলালী। তিনি বলেন, ‘মসজিদে যিনি আগে ঢুকবেন তিনি প্রথম কাতারে বসবেন। মসজিদে সবাই সমান। কাউকে উঠিয়েও দেয়া যাবে না। অফিসাররা প্রথম কাতারে বসবে, এটা হাদিসসম্মত না। মসজিদ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।’

সামনের কাতারে বসা নিয়ে ইমামকে কোনো নির্দেশনা দেননি বলে দাবি করেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মুসল্লিরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নামাজ আদায় করছিলেন। যাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেন এ জন্য নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানানোর জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মসজিদের ঈমাম আগ বাড়িয়ে অফিসারদের বিষয়টি লিখেছেন। সামনের কাতারে অফিসাররা বসবেন এটা আমি তাকে লিখতে বলিনি।’

উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ‘নোটিশের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে জানতে পেরে নোটিশটি তুলে নেয়া হয়েছে। আমার অনুমতি না নিয়ে কীভাবে নোটিশ দেয়া হলো এ ব্যাপারে আগামীকাল রবিবার জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :