করোনাকালে চঞ্চলের উপলব্ধি

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২০, ১৫:৪৫

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। বর্তমানে করোনার কারণে অনেক দিন ধরেই ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু তিনি শুটিংয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সম্প্রতি 'আয়নাবাজি’ খ্যাত এই অভিনেতা একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'এখন সব চেয়ে দুঃসময় চলছে। সংকটটাও অনেক বেশি। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আমাদের আশপাশে আত্মীয়-পরিজন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। শুটিংয়ে ফিরব কী করে! যে কাজটি আমি দুই মাস আগে করলাম না, সেই কাজটি এমন পরিস্থিতিতে কেন করতে যাব! শুটিংয়ে যে ফিরব, আমার জীবনের দায় কে নেবে? অসুস্থ হলে তার দায় কে নেবে? এই সময় শুটিং করলে কেমন সচেতন হয়ে করতে হবে সেটাও বুঝতে পারছেন সবাই!'

তিনি আরও বলেছেন, 'শুটিং করতে গিয়ে আমি যে সুরক্ষিত ব্যবস্থা পাব তার নিশ্চয়তা আগে আমাকে দিতে হবে। আরেকটা কথা এখানে আবারও বলতে চাই-এখন মানুষ কাজ করতে যাচ্ছে শিল্পের জন্য না যতটা, তার থেকে বেশি বেঁচে থাকার তাগিদে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা শুটিং করছেন তারা আলটিমেটলি, বেঁচে থাকার জন্যই করছেন।

এক্ষেত্রে আমি বলবো শুটিংয়ের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শুটিং ইউনিটের প্রত্যেকটা মানুষের সুস্থতা-অসুস্থতার দায় প্রযোজক বা নির্মাতাকে নিতে হবে। কেউ অসুস্থ হলেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন শুটিং করলে অবশ্যই বাড়তি কিছু খরচ হবে। ইউনিটের প্রত্যেকের জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পুরো ইউনিট তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যা কিছু প্রয়োজন হয় সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। একটা শুটিং স্পটে যতো শিল্পী-কলাকুশলী থাকেন তাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কয়েক হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতেই হবে। এই খরচটা কে করবে?

এখানে আরও অনেকগুলো বিষয় যুক্ত আছে। যেমন- শুটিংস্পটে যা কিছু আমরা ব্যবহার করছি শুটিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সব আবার আগের মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। যে শুটিং হাউসে আমরা শুটিং করব সেই হাউস এই দায়িত্ব নেবে নাকি প্রডিউসার দায়িত্ব নেবে!

আরেকটা বিষয় হলো, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাকার জন্যেই তো শিল্পীরা কাজ করছেন। তাই শুটিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিটের সবার সম্মানি পরিশোধ করতে হবে। শুটিং শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে প্রত্যেকের পেমেন্ট ঠিকমতো বুঝিয়ে দিতে হবে।'

এদিকে, শুটিংয়ে ফেরার আহ্বান জানিয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'শুটিংয়ে ফেরার আহ্বান জানিয়ে আরটিভি যে চিঠি দিয়েছে, আমি সেই চিঠি পেয়েছি। তবে এখনই শুটিং করতে যাচ্ছি সেরকম নয়। তবে সবকিছু বিবেচনা করে যদি মনে হয়, শুটিং করা যাবে, তাহলে হয়তো ফেরা হতেও পারে। তবে নিশ্চিত ভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।'

বর্তমানে ঘরবন্দি থেকে নিজের কাজ করছেন চঞ্চল চৌধুরী। সম্প্রতি ছেলের চুল কেটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তার স্ট্যাটাসটি দৈনিক ঢাকা টাইমের পাঠকদের হুবহু তুলে ধরা হলো-

কোন কাজই সহজ নয়, কোন কাজই ছোট নয়। আমরা অধিকাংশ মানুষই সব সময়ই ভাবি, আমি যে কাজটি করি,সেটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর অন্যরা যেটা করে, সেটা তেমন কোন কাজই না..খুব সহজ। আপনি চুল কাটতে পারেন? যদিও বা পারেন, কাজটা করতে গিয়ে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, সেটা খুব সহজ কাজ নয়!

অথচ আমরা ভাবতাম, সবচেয়ে সহজ কাজ হলো চুল কাটা। এমনকি ছোটবেলায় ঠিকমত পড়ালেখা না করলে, বাবা মাও বলতো, 'পড়া লেখা না করলে, জীবনে কিচ্ছু করতে পারবি না, একটা খুঁর আর কাঁচি কিনে দেবো, রাস্তার মোড়ে বসে মানুষের চুল কাটবি”।

বাবা মায়েদের ধারনা ছিল, চুল কাটতে কোন যোগ্যতা লাগে না। যে কেউ পারে....তাঁদের ধারনা ১০০% ভুল। এই করোনা কালে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারনে প্রায় চার মাস সেলুনে যাতায়াত বন্ধ। কয়েক মাস আগে ভাগ্নেকে দিয়ে, অনলাইনে অর্ডার করে একটা ট্রিমার কিনেছিলাম, নিজের এবং ছেলের চুল কাটবো বলে।

আমার ভাগ্নে ‘ঝলক’ ,ট্রিমার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়,তার কিছু টিউটোরিয়াল পাঠালো ইউটিউব থেকে। মনোযোগ দিয়ে দেখলাম আর ভাবলাম, এটা কোন কাজ হলো! খুবই সহজ।

সাথে সাথে বাথরুমে গিয়ে ট্রিমার অন করে,আয়নার সামনে দাড়িয়ে,চালিয়ে দিলাম আমার সামনের চুলে, বাঁকি টা ইতিহাস। স্ত্রী কে ডেকে বললাম, সামনের দিকটা তো আমি ধ্বংস করে ফেললাম, তুমি পেছনের দিকটায় সাবধানে ট্রিমার চালাও প্লিজ। সর্বনাশ!

সেও একই কাজ করলো! আমি আর আমার দিকে তাঁকাতে পারছি না।নিজেকে অন্য গ্রহের মানুষ মনে হচ্ছে...বিশ্রী।সুযোগ টা আমার ছেলে শুদ্ধ হাত ছাড়া করেনি, সে এই পুরো দূর্যোগ কালটি মোবাইলে ভিডিও করেছে।

যাই হোক, শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম,ট্রিমার র এর সর্বোচ্চ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে,চুল গুলো সবচেয়ে ছোট করে ফেলবো।

করলামও তাই। ফলাফল....পরের কয়েক মাস আমাকে ক্যাপ আর পরচুলা পড়ে মানুষের সামনে মানে অনলাইনে আসতে হয়েছে। সে এক দূ:সহ স্মৃতি.....বাচ্চাদের চুল বাড়ে বেশী....শুদ্ধ’র চুলের চার মাসে কি অবস্থা বুঝতেই পারছেন।

বেশ কয়েকদিন ওকে বলেছি, বাবা শুদ্ধ, এসো আমি তোমার চুল কেটে দেই। উত্তরে কোন কথা বলে না। ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষন আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকে। তারপর চুড়ান্ত অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে আমার সামনে থেকে চলে যায়। ওর মনে হয়,আমার ঐদিনের চুল কাটার বিভৎস অভিজ্ঞতা, ওকে স্বপ্নের মধ্যেও তাড়িয়ে বেড়ায়। যাই হোক মাস দুয়েক পর।

গতকাল শাহনাজ খুশী ফেসবুকে ছেলে সৌম্য’র চুল কেটে দেবার একটা ছবি পোষ্ট করেছে। সেটা শুদ্ধকে জানালাম.... বললাম, সৌম্যদাদার মা এই করোনাকালে এপর্যন্ত দুইবার চুল কেটে দিয়েছে। “আমাকে একটা চান্স দাও বাবা, আমিও তোমার চুল কেটে দেই....খুব সাবধানে কাটবো, ঐদিনের আমার মত নয়.... তোমার চুল অনেক বড় হয়ে গেছে, দেখতে তেমন ভালোও লাগছে না।”

শেষ পর্যন্ত শুদ্ধ’র রাজী হওয়া, আর আমার মনে মনে তপস্যা... “আমাকে চুল কাটতে পারতে হবে” আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ.... কেটে দিলাম শুদ্ধ’র চুল...শুধু মনে হলো, আমার কাছে অভিনয়ের চেয়ে চুল কাটা কঠিন কাজ....

তারমানে, কেউ কিন্তু আবার এটা ভেবে বসবেন না যে,অভিনয় কর্মটি খুব সহজ! সাধনায় কি না হয়! কোন কাজই সহজ নয়। কর্মই ধর্ম!

উল্লেখ, চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র রূপকথার গল্প। ২০১০ সালে তিনি মনপুরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত আয়নাবাজি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নেন তিনি। এই চলচ্চিত্রটিতে নাম চরিত্র আয়নাসহ ছয়টি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/এলএম/এসকেএস