প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লার্ন অ্যান্ড লিভ ফাউন্ডেশনের হোম সার্ভিস

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০২০, ২৩:৫৮

করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে লার্ন অ্যান্ড লিভ ফাউন্ডেশন। এতে ওইসব শিশুরা মানসিকভাবে স্বস্তিবোধ করার পাশাপাশি পরিবারও আশার আলো দেখছেন বলে জানা গেছে।

মির্জাপুরের রশিদ দেওহাটা গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী স্কুলশিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন জেসী প্রতিবন্ধীদের জন্য মির্জাপুরের সাহাপাড়া বাবুবাজারে ২০১৩ সালে লার্ন অ্যান্ড লিভ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তার এই কাজে তাকে সার্বিক সহায়তা করেন তার স্বামী লন্ডনপ্রবাসী ফারুক আহমেদ রনি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন।

৬০ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। তাদের প্রাথমিক শিক্ষার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। নতুন বাচ্চা আসলে তাদেরও ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠানে ফিজিও থ্যারাপিষ্ট, গানের শিক্ষক, হস্তশিল্প, কোরআন শিক্ষার জন্য ধর্মীয় শিক্ষক ও চারুকলার শিক্ষকও রয়েছে এখানে। সপ্তাহে ছয়দিন শিশুদেরকে মায়েরা এখানে নিয়ে আসেন। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা দশটা পর্যন্ত এখানে অবস্থানকালে তাদেরকে পড়ানো এবং দুপুরের খাবার দিয়ে ছুটি দেয়া হয়। ভবিষ্যতে শিশুদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ২ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া এবং থেরাপি দেয়ার কাজ চলে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে ১২ বছরের পর থেকে তাদের হস্তশিল্প ও আইটির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার কাজ শুরু হয়। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সমস্ত ব্যয়ভার প্রতিষ্ঠানটি বহন করে থাকে। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত লার্ন অ্যান্ড লিভ ফাউন্ডেশনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে অনেক অসহায় দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুরা লেখাপড়ার পাশাপশি স্বাস্থ্যসেবা এবং বিভিন্ন বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া তাদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

লকডাউন শিথিল হলে জুন মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন জেসীর উদ্যেগে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থসেবা এবং লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই কাজে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত শিক্ষক যারা রয়েছেন তারাই এ কাজ করছেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবন্ধী শিশুরা পুরোটা না হলেও অনেকাংশে উপকৃত হবে বলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন। সেইসাথে তাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি এবং অস্বস্তি দূর হবে বলে তারা মনে করছেন।

উপজেলার বহুরিয়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু লোকমানের মা লাইলী বেগম বলেন, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। স্যার-ম্যাডামরা বাড়িতে এসে ছেলের লেখাপড়াসহ স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এতে আমরা চিন্তামুক্ত হয়েছি।

একই গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী শিশু পুর্ণিমার মা চায়না রানি পাল বলেন, স্কুল বন্ধের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম- তা এখন আর নাই। এখন স্যার ম্যাডামরা স্বাস্থসেবা দিতে এবং লেখাপড়া শেখাতে বাড়িতে আসেন।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক শিখা বণিক, মাবিয়া আক্তার বলেন, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় কষ্ট স্বীকার করে হলেও প্রতিবন্ধী শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবাসহ লেখাপড়ার উন্নতির জন্য কাজ করছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন জেসী বলেন, করোনা পরিস্থিতির এই কঠিন সময়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ লেখাপড়ার উন্নয়নে কিছু করতে পারছি বলে অনেক স্বস্তিবোধ করছি। এই কাজে সহায়তা দানকারী লার্ন অ্যান্ড লিভের ফেসবুক বন্ধু এবং আমার পরিবারের সদস্য বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

(ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :