হঠাৎ প্রসূতির জন্য মানবিক ছিলেন লঞ্চের সবাই

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৬ | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০২০, ২৩:১৪

লঞ্চে করে একা ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর প্রসববেনার সময় মানবিকতার নজির রেখেছেন যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সকলে। রুমা (ছদ্মনাম) নামের ওই নারীর প্রসববেদনা শুরু হলে তার সহযোগিতায় আসেন লঞ্চটির কর্মকর্তারা।

লঞ্চে মাইকিং করে খোঁজা হয় কোনো চিকিৎসক কিংবা ধাত্রীজ্ঞানের কোনো নারী আছেন কি-না। ঘটনাচক্রে যাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক যেমন ছিলেন তেমনি ছিলেন এক ধাত্রীও। সকলের চেষ্টায় মাঝনদীতেই নিরাপদে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী।

গত ৩ জুলাই রাতে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি মানামী লঞ্চে এই ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি সেটি জানাজানি হয়। এই ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা প্রশংসিত হচ্ছে। এর আগে একই লঞ্চে আরও এক নারীর সন্তান জন্মদানের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সন্তানের নামও রাখা হয়েছিল লঞ্চের নামে মিলিয়ে ‘মানামি’।

এদিকে একজন মা এবং সন্তানের জীবন বাঁচাতে পেরে খুশি মানামী লঞ্চটির কর্তৃপক্ষ। এখানেই শেষ নয়, সদ্য মা হওয়া ওই নারী ও তার পরিবারকে সেমি ভিআইপি কেবিনে মানামী লঞ্চে ভ্রমণের সুযোগও ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে গর্ভবতী বা এমন অবস্থা নিয়ে কাউকে একাকী লঞ্চ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে মানামী কর্তৃপক্ষ।

লঞ্চটি বরিশালে পৌঁছার পর ধাত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিরিন আক্তারের হাতে নগদ পাঁচ হাজার টাকা উপহার হিসেবেও তুলে দেয় মানামী কর্তৃপক্ষ। আর যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাচ্চাটির জন্ম হলো তার পরিবারের জন্যও একদিন ডিনারসহ কেবিনে পরিবার নিয়ে ভ্রমণের অফার করা হয়েছে।

গত রবিবার ঘটনাটির বিস্তারিত তুলে ধরে মানামী লঞ্চের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে অসংখ্য মানুষ তাদেরকে সাধুবাদ জানান। এই ঘটনাকে বিরল আখ্যা দিয়ে মানুষের প্রয়োজনে এভাবেই মানুষ এগিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশার কথাও বলেন অনেকে।

পরে এনিয়ে ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কথা হয় মানামী লঞ্চের পরিচালক আহম্মেদ জাকি অনুপমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ভাগ্যবান। কারণ এমন একটি বিরল ঘটনা সবসময় ঘটবে না। একজন চিকিৎসক, ধাত্রীর সঙ্গে আমাদের সব স্টাফদের সঙ্গে আমাদেরও নির্ঘুম রাত কেটেছে। বিনিময়ে আল্লাহ নিরাপদে একজন সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এর থেকে আনন্দের কি হতে পারে। ব্যবসার থেকে এই সেবাটাই বড় পাওয়া।’

সেদিন লঞ্চটিতে সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন শাহাদাত হোসেন শুভ। মঙ্গলবার রাতে তিনি বর্ণনা করেন সে রাতের পুরো ঘটনা। শুভ বলেন, ‘রাত ১২টার পর কেবিনের যাত্রীদের খাবার পরিবেশনসহ সব কাজ শেষে বয়রা বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।’

‘হঠাৎ কেবিনের এক নারী যাত্রী বাথরুমে যাওয়ার জন্য বের হন। কিছুদূর গিয়ে তিনি হঠাৎ বসে পড়েন। তা দেখে কেবিন বয়রা পাশের একটি কেবিন থেকে একজন মহিলাকে ডেকে আনেন। এর মধ্যে আমরা জানতে পেরে দ্রুত মাইকিং করে ডাক্তার ও নার্স বা ধাত্রীকে কেউ লঞ্চে আছে কিনা খুঁজতে থাকি। পেয়েও যাই সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ডা. মুহাম্মদ রেজাউল কবির এবং ধাত্রী শিরিন আক্তারকে।’

এরপরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে ঘটনা জানানোর পর যত দ্রুত সম্ভব বরিশালে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যদিকে কেবিন ব্লকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিশ্চিত করি। কারণ কোনও প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া মাত্র সাত মাসের প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। আল্লাহর অশেষ রহমত এবং ডাক্তার ও ধাত্রীর চেষ্টায় নিরাপদেই বাচ্চাটির জন্ম হয়। কিন্তু ডাক্তার দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য পরামর্শ দেন।’

তিনি জানান, পুরো সময় বিদেশ থেকে লঞ্চের চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য পরিচালকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। লঞ্চ থেকে নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। সর্বোচ্চ গতিতে লঞ্চটি চালিয়ে অন্য সময়ের থেকে কমপক্ষে দেড়ঘণ্টা আগে রাত সোয়া তিনটায় বরিশাল পৌছানো হয়। পরে ঘাটে অপেক্ষমান পরিবারের কাছে নিরাপদে তুলে দেওয়া হয় মা ও নবজাতককে।

এম ভি মানামী কর্তৃপক্ষও এমন কাজে এগিয়ে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে সবকিছু নিরাপদে হলেও বেশ উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন লঞ্চটিতে কর্মরতরা। যে কারণে গর্ভবতী মা ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের একা ভ্রমণ করা থেকে বিতর থাকার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

লঞ্চের পরিচালক আহম্মেদ জাকি অনুপম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে যাত্রীসেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে নারী, শিশু ও অসুস্থ কেউ থাকলে তাদের জন্য ভিন্ন আয়োজন রেখেছি। যেমন- ব্রেস্টফিডিং কর্ণার আছে, লেডিস চেইঞ্জিং রুম আছে। গুরুতর অসুস্থ হলে আইসিইউর ব্যবস্থা রেখেছি। ইসিজি করার ব্যবস্থা আছে। সেবার মান ধরে রাখতে ও মান উন্নয়নে যেকোনো পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করি।’

(ঢাকাটাইমস/০৭জুলাই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :