করোনায় বিউটি পার্লারগুলো বন্ধ থাকায় সংকটে নারী উদ্যোক্তারা

মেহেদী হাসান উজ্জল,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
 | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২০, ১৬:৪৩

বর্তমানে দেশের ১৮ শতাংশ নারী বিউটি পার্লার পেশায় জড়িত। দেশে ৩ লাখেরও বেশি বিউটি পার্লারে উদ্যোক্তা ও কর্মী আছে ১০ লাখেরও বেশি। পার্লার খাত থেকে বার্ষিক আয় হয় প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। কিন্তু করোনার প্রভাবে বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তা এখন ঘরে অবস্থান করছেন। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এই খাতের বিপুল সংখ্যক কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার নারী উদ্যক্তারা।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী শহরের বিবি আনা বিউটি পার্লারের মালিক মিরা পারভিন বলেন, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য পরিবারের বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও ২০০৭ সালে নিজের গহনা বিক্রি করে প্রথমে এই প্রতিষ্ঠান শুরু করি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অনেক টাকা ইনভেস্ট করে এই ব্যাবসা করছি। এতে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার কিছু অবেহেলিত নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সকল নারী উদ্যোক্তারা খুব অসহায়ত্বের মাঝে ব্যাবসা পরিচালনা করে যাচ্ছি। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় দেড় মাস আমার এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বসে বসে স্টাফদের বেতন, প্রতিষ্ঠান ভাড়া, কারেন্ট বিল দিয়ে যাচ্ছি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে এই প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর বর্তমানে আয় হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতিমাসে সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালাতে খরচ হয় ২৬ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে প্রতিমাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আগে চারজন স্টাফ কাজ কর, এখন বাধ্য হয়ে দুইজন স্টাফ দিয়ে চালাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পার্লার ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তবে অসছে ঈদে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তবে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি।

মিরা পারভিন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা পার্লার মালিকরা ভালো নেই। ঘর ভাড়া, স্টাফের বেতন সব মিলিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ বা এককালীন সাহায্য চাই না। আমাদের যদি সরকারের তরফ থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী লোনের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা সেই লোন দিয়ে এই দুঃসময়ে জীবন পরিচালনা করতাম।’

পৌর শহরের মৌ বিউটি পার্লারের মালিক লিপা সরকার বলেন, ‘করোনায় ব্যবসা এখন মন্দা, তাই খরচ পুষিয়ে ওঠা যাচ্ছেনা। তিনজন স্টাফ ছিলো তাদের কাজে আসতে মানা করেছি। টুকটাক কাস্টমার এলে যতটুকু পারছি নিজেই কাজ করছি।’

রাফা বিউটি পার্লারের মালিক স্নিগ্ধা শারমিন বলেন, গত চার বছর ধরে পার্লার ব্যবসা করছি, এই প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে সংসারে সিংহভাগ খরচ চালাই, কোনোদিন এরকম সমস্যায় পড়তে হয়নি। করোনার কারণে কাস্টমার খুব কম, তাই ব্যবসা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শহরের একাধিক পার্লার ব্যাবসায়ী বলেন, ‘আমরা চাই সরকারি খাতে পার্লার ব্যাবসার নাম যুক্ত হোক। আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছি, যা কখনোই সবার সামনে আসে না। আমরা এখন হতাশায় আছি, আমাদের দিকে একটু হাত বাড়িয়ে দিন। আমরা চাই, সরকারিভাবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হোক।’

ঢাকাটাইমস/৯জুলাই/পিএল

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :