সাহেদকে নিয়ে যা বলছেন সাতক্ষীরার মানুষ

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ১২:০২ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০, ২১:২৮

এম. বেলাল হোসাইন
সাতক্ষীরা

গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে ডজন ডজন জালিয়াতি-প্রতারণার ঘটনা থেকে শুরু করে সবশেষ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না সাতক্ষীরার মানুষ।

সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরে তার পৈত্রিক বাড়িটিও এখন আর নেই। দাদার তৈরি করা সেই বাড়ি ছাড়াও করিম সুপার মার্কেট নামে শহরে একটি বিপনীবিতান ছিলো তাদের পরিবারের। তবে বেশ কয়েকবছর আগে সেসব বিক্রি করে দিয়ে তারা ঢাকায় চলে যায়।

কামালনগরের সিরাজুল করিমের ছেলে সাহেদ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা আব্দুল করিম সাতক্ষীরা চলে আসেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ থেকে ‘৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি যশোর জেলার তথ্য অফিসার ছিলেন। ভারত থেকে আসা বলে এলাকায় তাদের তেমন একটা নিকট আত্মীয়-স্বজনও নেই।

সাহেদের মা সাফিয়া করিম এলাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। একসময় তিনি সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ-সম্পাদিকা ছিলেন। এলাকায় তার মায়ের খুব ভালো পরিচিতি ছিলো। মূলত মায়ের সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে সাহেদ চলাফেরা করলেও স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে কেউ তাকে দেখেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে আর সাতক্ষীরায় ফেরেননি সাহেদ। পরে ২০১৪ সালের দিকে সাতক্ষীরায় এসে পৈতৃক সব সম্পদ বিক্রি করে ঢাকায় চলে যান।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে সাহেদের এক বাল্যবন্ধু জানান, সাহেদ এসএসসি পাস করে ঢাকায় লেখাপড়া করতে গেলেও আর লেখাপড়া করেছে কি-না তা জানেন না তারা। এসএসসিতে তিনি এবং সাহেদ দুজনেই প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তার আসল নাম মো. সাহেদ করিম। তবে শুনেছি ঢাকায় গিয়ে দাদা-বাবার নামের পদবি ‘করিম’ ফেলে মো. সাহেদ হিসেবে পরিচিতি পায়। মাঝে মধ্যে ফোন করে সাহেদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উইংয়ে আছি বলে জানাতো। কোনও সমস্যা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগের কথাও বলতো। কিন্তু তার সেসব কথা বিশ্বাস হতো না।’

ছোট থেকেই সাহেদ কথা বলায় খুব পটু ছিলো জানিয়ে তার সেই বাল্যবন্ধু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাহেদ মানুষকে খুব অল্প সময়ে আপন করে নিতে পারতেন। ২০১৪ সালে তার সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল। তবে কয়েক বছর আগে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে তিনি ‘চিটার সাহেদ’ বা ‘বাটপার সাহেদ’ নামে বন্ধুমহলে পরিচিতি লাভ করেন। বছর তিনেক আগে সাহেদ হেলিকপ্টারযোগে সাতক্ষীরার নলতায় এসেছিল।’

সাহেদের প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত বলে কোম্পানির ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়া থাকলেও তা কি করে সম্ভব সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। সাতক্ষীরার এক বিশিষ্টজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রিজেন্টের ওয়েবসাইটে দেখেছি তার কোম্পানিটি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সাহেদ এসএসসি পাস করেছে ১৯৯৯ সালে। তার বাপ দাদার এমন কোনো কোম্পানি ছিলো আমরা কোনো দিন শুনিনি।

সাহেদের বাবা কিংবা দাদার এলাকায় ভালো পরিচিতি ছিলো। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তার মায়ের পরিচিতি ছিলো আরও বেশি। ২০১০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাহেদের মা রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাহেদের মা শাফিয়া করিম ২০১০ সালে মারা যান। তিনি সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করে রক্ত দান করতেন। তবে সাহেদ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।’

এদিকে হাসপাতালকাণ্ডের পর বেরিয়ে আসছে সাহেদের নানা কুকীর্তির কথা। এখন জানা যাচ্ছে, প্রতারণার অভিযোগে এক সময় জেলেও যেতে হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম নেয়া সাহেদকে। কিন্তু ‘প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যের’ জোরে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতেও পদ পেয়ে গিয়েছিলেন।

সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন জানান, সাহেদকে সাতক্ষীরাবাসী সবাই প্রতারক হিসেবে চেনেন। তারা এই প্রতারকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করার অভিযোগ ওঠার পর তার সত্যতা পেয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল।

হাসপাতালটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব। ১৭ আসামির মধ্যে ৮ জনকে গ্রেপ্তারে আর সাহেদসহ নয়জনকে পলাতক হিসেবে এজাহারে দেখানো হয়। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/ডিএম)