আইজিপির নির্দেশ

সুন্দরবন সুরক্ষায় তিন জেলার পুলিশ তৎপর

সোহাগ দেওয়ান, খুলনা
 | প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২০, ১২:৫৯

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে ২০ মাস। এরই মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মেনগ্রোভ বনাঞ্চলে নতুন করে দস্যুবাহিনী ও অন্য অপরাধীদের নড়াচড়ার তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ অপরাধ দমনে উপকূল অঞ্চলের তিন জেলার পুলিশ নিয়মিত অভিযান শুরু করেছে।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এই তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে।

র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌ-পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের এ তৎপরতা সুন্দরবনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নতুন করে দস্যুবাহিনী গঠনের চেষ্টা, বিগত দিনে দস্যুবাহিনীর কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধাভোগীদের টার্গেট করে এ কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কঠোর নজরদারিতে রয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।

এদিকে একটি চক্র সুন্দরবন থেকে জেলেদের অপহরণ করে ভারত সীমান্তে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকসহ ভারতীয় বেশ কয়েকজন জড়িত।

গত ২৫ থেকে ২৮ জুন সকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জে র‌্যাবের টানা ৫৭ ঘণ্টা অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নতুন করে দস্যুতায় নামা তিন বনদস্যু। অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার ও দুজন অপহৃত বনজীবীকে উদ্ধার করা হয়।

২৮ জুন র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সুন্দরবন উপকূল এলাকা পরিদর্শনে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই তথ্য দেন। এরপর থেকেই র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুন্দরবন রক্ষায় তৎপরতা শুরু করে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুন্দরবন সুরক্ষিত রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী সাতক্ষীরায় পুলিশের অভিযানে জলদস্যুতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত বুধবার চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মামুনুর রহমান ওরফে খোকা বাবু, সুলতানপুর এলাকার আব্দুল হাকিম গাজীর ছেলে তৈয়েবুর রহমান কামরান, একই এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে রহমান এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইদুর রহমান সাইদ ও দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের মহিউদ্দীন গাজীর ছেলে আলাউদ্দীন গাজী।

পুলিশ সুপার আরও জানান, সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে থেকে কিছু অপরাধী এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছে।

শনাক্ত ব্যক্তিরা হলেন বাংলাদেশি নাগরিক প্রদীপ, পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা এলাকার মিঠুন দাস। ভারতের বসিরহাট ত্রিমোহিনী এলাকার আক্তার আলম গাজী, পান্না, বাপ্পী ও ঘোজাডাঙ্গা এলাকার হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক নুনু।

এই সংঘবদ্ধ চক্রটি জেলেদের অপহরণ করে সুন্দরবনের ভারত সীমান্তে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়সহ নানাভাবে তাদের নির্যাতন চালায় বলেও তথ্য রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

খুলনা জেলা পুলিশের সুপার এস এম শফিউল্লাহ জানান, কয়েক দিন আগে থেকে সুন্দরবন এলাকায় নজরদারির ব্যবস্থা করেছে খুলনা জেলা পুলিশ। খুলনা রেঞ্জের অংশে সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে তাদের অভিযান চালু আছে।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মংলার সুন্দরবন এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানান বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সুন্দরবন সুরক্ষিত রাখতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাগেরহাট জেলা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিন স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।

এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরকারের কাছে জমা দেয়।

দস্যু আত্মসমর্পণে বড় ভূমিকা পালন করে র‍্যাব। দেশের এই এলিট ফোরসের তখনকার ডিজি বেনজীর আহমেদের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা। আর তাতে সব ধরনের সমরথন ও সহযোগিতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা অপরাধের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় তারা সমাজের অন্যান্য অপরাধী ও বিপজ্জনক জনগোষ্ঠীর সামনে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে সরকার আর্থিক সহায়তা দেয় এবং তারা যাতে স্বাভাবিক জীবনে স্বচ্ছন্দ হয় সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রকৃতিভেদে বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :